অপেক্ষা: তিন দিন ধরে জলের সমস্যায় নাকাল স্থানীয় বাসিন্দারা। মঙ্গলবার কল থেকে জল নেওয়ার জন্য লম্বা লাইন মহিলাদের। বিডন স্ট্রিটে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
শুরু হয়েছিল গত রবিবার। কিন্তু তিন দিনেও কলকাতা পুরসভার কল থেকে ঘোলা জল পড়া বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ। যদিও ঘোলাটে ভাব খানিকটা কমেছে। পুরকর্তারা দাবি করেছিলেন, ওই জল খেলে কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু জল নিয়ে আতঙ্ক এতটাই ছড়িয়েছে যে, উত্তর কলকাতার একটি বড় অংশের মানুষই পুরসভার জল খাচ্ছেন না। চড়া দামে জল কিনে খেতে হচ্ছে তাঁদের। অনেকে আবার দোকানে গিয়েও জল না-পেয়ে বাধ্য হয়ে ঘোলা জলই ফুটিয়ে খাচ্ছেন। তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, তিন দিন ধরে এই সমস্যা চলা সত্ত্বেও পুরসভা সর্বত্র প্রয়োজন অনুযায়ী জলের গাড়ি পাঠায়নি। বার বার জানিয়েও লাভ হয়নি।
মঙ্গলবার উল্টোডাঙা, মানিকতলা, কুমোরটুলির মতো বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, ক্ষোভে ফুঁসছেন ভুক্তভোগীরা। তাঁদের প্রশ্ন, এই গরমে মানুষ যে পানীয় জলটুকু পাচ্ছে না, তা কি পুরকর্তারা জানেন না? তা হলে পুরসভার তরফে পানীয় জলের গাড়ি পাঠানো হল না কেন?
পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ারের সাফাই, ‘‘ওই জল খেলে সমস্যা হবে, এমন কথা মোটেই বলছি না। শুধু বলছি, জলটা একটু রেখে খাবেন। ফিল্টার করে নিলে আরও ভাল। পুরসভার ল্যাবে ওই জল পরীক্ষা করা হচ্ছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘গার্ডেনরিচেও তো গঙ্গা থেকে পলি মেশানো ঘোলা জল তুলে পরিশোধন করা হচ্ছে। তবে তাতে পলির ভাগ কম। গাড়িতে করে সর্বত্র পাঠানোর মতো অত পরিমাণ পরিষ্কার জল পুরসভা পাবে কোথায়?’’
পুরসভা জানিয়েছিল, ডিভিসি মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ জল ছাড়ায় সেই চাপেই গঙ্গা থেকে পলি মেশানো জল প্রকল্পের পাইপলাইনে প্রবেশ করছে। তাই জল পরিশোধন করতে সমস্যা হচ্ছে। সোমবার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, ‘‘পলতায় জলের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণ পলি উঠে আসছে। এখন থেকে জলের উপরের অংশ তুলে নিয়ে বেশি সময় ধরে শোধন করে তবেই সরবরাহ করা হবে। এই কারণে মানুষ জল একটু কম পাবেন। সমস্যা আরও দু’দিন থাকবে।’’ এ দিন অবশ্য তাঁকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি। জবাব আসেনি টেক্সট মেসেজের।
পুরসভার কল থেকে পর্যাপ্ত জল না পাওয়ায় এ দিন উত্তর কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ সমস্যায় পড়েন। পানীয় জল এমনিতেই কিনে খেতে হচ্ছে। অন্যান্য কাজের জন্যও পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পাননি তাঁরা। কারণ, জলের চাপ ছিল খুবই কম। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, দুপুরে আধ ঘণ্টা বৃষ্টি হওয়ায় তাতেই স্নান সারেন উল্টোডাঙার মুরারিপুকুর বস্তির বাসিন্দারা।
জলাভাবের কথা মেনে নিয়ে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর অমল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জলের চাপ কম থাকায় অনেকেই কম জল পেয়েছেন।’’ পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘বেশি ক্ষণ ধরে শোধন করতে গিয়েই সরবরাহ করা জলের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। মানুষকে আর দিন দুয়েক এই কষ্ট সহ্য করতে অনুরোধ করছি।’’
জল কিনে খাচ্ছেন কুমোরটুলির বেশির ভাগ শিল্পীও। তেমনই এক জন সুজিত পালের কথায়, ‘‘সামনেই পুজো। এখন অসুস্থ হয়ে পড়লে খুব মুশকিল। তাই জল কিনে খেতে হচ্ছে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘২০ লিটারের যে জারের দাম ৪০ টাকা, সেটাই ৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।’’ একই অবস্থা শিল্পী বাবু পাল, মীনাক্ষী পাল ও মিন্টু পালদের। অসুস্থ হয়ে পড়ার ভয়ে জল কিনে খাচ্ছেন সকলেই।
১৫ নম্বর ওয়ার্ডের গৌরীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সৌম্য দাসের অভিযোগ, ‘‘রবিবার থেকে জল কিনে খাচ্ছিলাম। কিন্তু সোমবার বিকেল থেকে দোকানেও জল নেই। বাধ্য হয়ে ঘোলা জলই ফুটিয়ে খাচ্ছি।’’ উল্টোডাঙার মুচিবাজার ও মুরারিপুকুর এলাকার বস্তিবাসীরাও জল ফুটিয়ে খাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
বিজেপির বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী টুইটারে অভিযোগ করেছেন, কলকাতা ও হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা তীব্র জলকষ্টের শিকার। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে জলের বোতলের কালোবাজারি চলছে। সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিকল্প জলের গাড়ি পাঠিয়ে দ্রুত সমস্যার সমাধান করুক। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিন বলেন, ‘‘বৃষ্টি তো সর্বত্রই হচ্ছে। সব জায়গায় তো ঘোলা জল আসছে না। তার মানে কি জল ঠিকমতো ফিল্টার করা হচ্ছে না? যে বিশেষজ্ঞ ও দায়িত্বশীল ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে কথা বলা উচিত, তাঁদের কথা শোনা যায় না। মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁর ডামি উপ-মুখ্যমন্ত্রীই সব বলে দেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy