Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in Kolkata

‘দুর্গাপুজোর পাড়া যেন করোনা-জ়োন হয়ে না ওঠে’

একডালিয়া এভারগ্রিন পুজো মণ্ডপের বাঁ পাশের আবাসনের বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় অবশ্য বুঝে উঠতে পারছেন না, এই বিপদ এড়াবেন কী ভাবে।

উদ্বেগ: বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে মুদিয়ালির বনশ্রী দাস। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

উদ্বেগ: বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে মুদিয়ালির বনশ্রী দাস। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২০ ০৫:০৮
Share: Save:

কন্টেনমেন্ট জ়োনগুলি বাদে রাজ্যে পুরোপুরি লকডাউন উঠে গিয়েছে প্রায় চার মাস হল। কিন্তু সেই চার মাসে এক দিনও পারতপক্ষে বাড়ি থেকে বেরোননি বনশ্রী দাস। কয়েক দিন আগে নিজের ৬৫তম জন্মদিনটাও বাড়িতেই কাটিয়েছেন। অবসর বলতে গ্রিলে ঘেরা বাড়ির সদর দরজার সামনে মাস্ক পরে দাঁড়িয়ে বিকেলের আকাশ দেখা!

করোনার সঙ্গে লড়াই করতে যে নিয়মকানুন গত কয়েক মাস ধরে পালন করে আসছিলেন, আগামী সোমবার, তৃতীয়ার পরে তা আদৌ মেনে চলতে পারবেন কি না, সেটাই এখন প্রধান চিন্তা মুদিয়ালির বাসিন্দা বনশ্রীদেবীর। তাঁর আশঙ্কা, প্রতিবারের মতো এ বছরেও বাড়ির ঠিক সামনের রাস্তা দিয়েই যাবে মুদিয়ালি ক্লাবের প্রতিমা দেখতে আসা উৎসুক জনতা। আর তৃতীয়া থেকেই সেই জনতার ঢল নামতে শুরু করলে তিনি কী করবেন, তা ভেবেই পাচ্ছেন না। একদা রাজ্যের মহিলা ক্রিকেট দলের সদস্য বনশ্রীদেবী বলছেন, ‘‘মারাত্মক চিন্তায় রয়েছি। এতগুলো মাস ধরে যে ভাবে সচেতন হয়ে চললাম, সেটা এই পুজোর অসচেতন ভিড়ে নষ্ট হয়ে না যায়। দুর্গাপুজোর পাড়া যেন করোনা-জ়োন হয়ে না ওঠে!’’ খানিক দম নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমাদের পরিবারে বেশ কয়েক জন চিকিৎসক রয়েছেন। তাঁরা যা বলছেন, পুজো কমিটির সদস্যদের বলেছি। ওঁরা চেষ্টা করবেন বলেছেন। কিন্তু এই রোগ যে ডেঙ্গি বা প্লেগের থেকেও মারাত্মক, কাউকেই হয়তো বুঝিয়ে উঠতে পারছি না।’’

একই চিন্তা কুরে কুরে খাচ্ছে বালিগঞ্জ কালচারাল পুজো মণ্ডপের ঠিক পিছনের বাড়ির বাসিন্দা তানিয়া দাশগুপ্তকেও। একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী তানিয়া বললেন, ‘‘প্রতিবার পুজো মণ্ডপ আর স্টলের জন্য আমাদের বাড়ি থেকে বেরোনোটাই কঠিন হয়ে যায়। বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা রয়েছেন। ওঁদের জন্যই চিন্তা। পুজোর চার দিন নিজেদের ঘরবন্দিই রাখব। তাতে যদি পুজোর ভিড়ের রেখে যাওয়া করোনার বিপদ এড়ানো যায়।’’

আরও পড়ুন: দেশে সংক্রমণ শিখর পেরিয়েছে, দাবি রিপোর্টে

একডালিয়া এভারগ্রিন পুজো মণ্ডপের বাঁ পাশের আবাসনের বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় অবশ্য বুঝে উঠতে পারছেন না, এই বিপদ এড়াবেন কী ভাবে। বলছেন, ‘‘বাড়িতে চার মাসের শিশু ও আশি বছরের বৃদ্ধ রয়েছেন। পুজো কমিটিকে জানিয়েছিলাম, একটি ছোট অঞ্চলের মধ্যে যে হেতু পুজো হয়, তাই অন্য বারের মতো ভিড় হলে আস্ত পাড়া শেষ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু কেউই শুনছেন না। দর্শনার্থীদের কাছে করজোড়ে করে অনুরোধ করছি, এ বার দয়া করে বাড়িতে থাকুন।’’

তবে বাড়িতে বসে থেকেও এ বিপদ থেকে পরিত্রাণ মিলবে কি না, সে বিষয়ে সন্দিহান হাতিবাগান সর্বজনীন পুজো মণ্ডপ সংলগ্ন একটি বাড়ির বাসিন্দা বেবি দাস। ১৯৩৭ সালে তৈরি পুরনো ওই বাড়ির সামনের ফুটপাতেই এ বারেও হয়তো ঢল নামবে দর্শনার্থীদের। বেবির কথায়, ‘‘প্রতি বারই ভোরে দরজা খুললেই দেখি সামনের ফুটপাতে হাজার হাজার জুতো, বোতল, ব্যাগ পড়ে রয়েছে। এ বার ওই জুতোর সঙ্গেই যদি কোভিডও পথে পড়ে থাকে, আমরা বাঁচব তো?’’ পুজো কমিটিকে বলেননি? ওই মহিলার উত্তর, ‘‘যাঁকে বলছি তিনিই বলছেন, সব দিক দেখেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’

আরও পড়ুন: অসচেতন জনতা, ১৫ জেলায় ‘বিপদসঙ্কেত’ দেখছে স্বাস্থ্য দফতর

এই ব্যবস্থায় অবশ্য বিশ্বাস নেই উল্টোডাঙা কবিরাজবাগানের পুজো মণ্ডপের কাছে একটি বাড়ির বাসিন্দাদের। তাঁদেরই এক জন, সন্ধ্যা কুণ্ডু বললেন, ‘‘এ বারও আমাদের বাড়ির দরজা আটকে বাঁশ পড়েছে। দর্শনার্থীরা সেখান দিয়েই যাবেন। পুজো কমিটির কাউকে কিছু বলে হবে না বুঝে গিয়েছি। তাই সোমবারই গ্রামে বাপের বাড়ি চলে যাব। বাঁচতে হলে এটাই পথ।’’

তবে মানুষ সচেতন না হলে যে কোনও ভাবেই রেহাই নেই, তা বিলক্ষণ বুঝেছেন কুমোরটুলির কেবলকৃষ্ণ সুর স্ট্রিটের শান্তি ঘোষাল। তাঁর মন্তব্য, ‘‘পাড়া ঘিরে দিয়ে বাইরের লোক ঢোকা বন্ধ করে পুজো না করলে এ বার রক্ষা পাওয়া খুব মুশকিল। এই সহজ সত্যিটাই পুজোর আবেগে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy