কলেজ স্কোয়ার।
পুলিশ কি তা হলে গ্যালারিতে বসে থাকা দর্শক? খেলোয়াড়দের মাঠে নামিয়ে নিজেরা বসে খেলা দেখাই কি তা হলে পুলিশের কাজ? প্রতিদিন মহানগরের রাস্তায় বেরোনো লক্ষ লক্ষ মানুষের মনে এখন এই প্রশ্নটাই উঁকি মারছে।
পুজোর ঠিক আগে শহরের রাস্তায় গাড়ি ও মানুষের সংখ্যা কত গুণ বাড়ে, সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকার কথা পুলিশের। আবার পুলিশ এ-ও জানে, প্রতিদিন শহরে কতগুলি মিছিল হওয়ার কথা। ক’টা থেকে, কোথা থেকে সেই সব মিছিল-বিক্ষোভ-ধর্না চলবে অথবা সে সবের জের কতক্ষণ চলবে। কখনও পুরো রাস্তা, কখনও শহরের প্রাণকেন্দ্রের বড় অংশ বন্ধ রাখলে শহর যে হাঁসফাঁস করবে, রাস্তায় রাস্তায় অ্যাম্বুল্যান্স আটকে পড়বে, মানুষের চূড়ান্ত দুর্ভোগ হবে— এ সব জেনেও কেন মিছিল নিয়ন্ত্রণের কোনও চেষ্টাই করে না পুলিশ? গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা তো বটেই, বাদ যায় না ট্রামলাইনও। ট্রামলাইনে বসে থাকেন অবরোধকারীরা, থমকে থাকা ট্রামে ঘুমোন ট্রামচালক ও কন্ডাক্টরেরা। সব জেনেও সবাইকে একসঙ্গে পথে নামার অনুমতি দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে শহর অচল করে রাখার জন্য পুলিশের এই ‘যানশাসন’ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
পুজোর বাজারের ভিড়, বাঁশের ব্যারিকেডের জন্য অপরিসর পথ— এ সব তো আছেই। তার উপরে কোনও দিন মেট্রোয় গোলযোগ, কোনও দিন মিছিল শ্বাসরোধ করে তুলছে শহরের। মঙ্গলবার যেমন মানুষের দুর্ভোগের কারণ ছিল মূলত দু’টি মিছিল। একটি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার প্রতারিতদের নিয়ে তৈরি ‘অল বেঙ্গল চিট ফান্ড ডিপোজিটার্স অ্যান্ড এজেন্টস ফোরাম’-এর। অন্যটি বিজেপি-র।
পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল থেকেই কলেজ স্ট্রিটে জমা হতে শুরু করেন বেআইনি চিট ফান্ড প্রতারিতদের সংগঠনটির কয়েক হাজার মানুষ। শিয়ালদহ এবং হাওড়া স্টেশন থেকে মিছিল আসে কলেজ স্ট্রিটে। এ দিন বিকেলে মৌলালি থেকে আলিমুদ্দিন পর্যন্ত ছিল বিজেপি-র মিছিলও। ওই দুই মিছিলের জেরে মহাত্মা গাঁধী রোড, এ জে সি বসু রোড, এ পি সি রোড-সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রবল যানজট তৈরি হয়। এক সময়ে ওই সব রাস্তা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, লেনিন সরণি, বেলেঘাটা মেন রোড, সিআইটি রোড-সহ শিয়ালদহ সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায়। সূর্য সেন স্ট্রিটে এমনিতেই ট্রামলাইনের কাজ হওয়ার কারণে একাংশ বন্ধ। যে কারণে কলুটোলা দিয়ে কলেজ স্ট্রিট হয়ে শিয়ালদহে কোনও গাড়ি ঢুকতেই পারেনি।
শিয়ালদহ।
ফলে শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায় এক সময়ে। যার রেশ গিয়ে পড়ে রাজাবাজার থেকে মল্লিকবাজার পর্যন্ত। পুলিশ জানিয়েছে, শুধু মিছিল যাওয়ার জন্য এসএন ব্যানার্জি রোড বন্ধ ছিল চল্লিশ মিনিটেরও বেশি।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর একটি বক্তব্যের প্রতিবাদে বিজেপি সমর্থকেরা আলিমুদ্দিন স্ট্রিট অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন। পুলিশের দাবি, কয়েকশো লোকের ওই মিছিলের ফলে যান চলাচল পুরো বন্ধ ছিল এ জে সি বসু রোডের। বিভিন্ন গাড়িকে অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরিয়ে দিলেও ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা পাননি শহরের বাসিন্দারা। যেমন, হাওড়ার বাসিন্দা সুরজিৎ নন্দী। তিনি এ দিন দুপুরে ডালহৌসির অফিস থেকে শিয়ালদহে যাবেন বলে বেরিয়েছিলেন। কলুটোলা গিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা আটকে থাকার পরে পায়ে হেঁটে শিয়ালদহ পৌঁছন তিনি। একই অভিজ্ঞতা হয় বেলেঘাটার এক বাসিন্দার। তিনি এ দিন বেলেঘাটা থেকে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছেছেন প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায়।
অন্য দিকে, ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, হাতিবাগান এবং গড়িয়াহাট-রাসবিহারী অ্যাভিনিউতেও এ দিন যানজট তৈরি হয়। পুলিশ জানায়, পুজোর কেনাকাটার ভিড় তো ছিলই, তার উপরে রাস্তার দু’ধারে পুলিশ ব্যারিকেডের জন্য বাঁশ ফেলে রেখেছে। কোথাও ব্যারিকে়ড তৈরি হয়ে গিয়েছে, কোথাও সেই কাজ চলছে। যে কারণে গাড়ির গতি কমে গিয়েছে ওই সব এলাকায়। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, ওই দুই এলাকায় দশ মিনিটের রাস্তা পার করতে এ দিন সময় লেগেছে আধ ঘণ্টারও বেশি।
উৎসবের মরসুমে, পুজোর কেনাকাটার সময়ে শহরতলি ও বাইরে থেকে প্রতিদিন শহরে আসেন বহু মানুষ। রাস্তায় স্বাভাবিক ভাবেই গাড়ি ও মানুষের ভিড় অনেক বেশি থাকে। এই অবস্থায় কেন মিছিলের অনুমতি দিল পুলিশ? উত্তর জানতে কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) ভি সলোমন নেসাকুমারকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি।
ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy