কলেজের অধ্যক্ষকে সাসপেন্ড করেছে পরিচালন সমিতি। নিয়োগ করা হয়েছে টিচার ইনচার্জ। কিন্তু অধ্যক্ষের সই না থাকায় নির্দিষ্ট তারিখ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও দক্ষিণ কলকাতার চারুচন্দ্র কলেজের ৪২৮ জন পড়ুয়ার রেজিস্ট্রেশন ফি এখনও জমা পড়েনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার জেরে কলেজে ‘ডামাডোল’ চলছে বলে শিক্ষা দফতরে চিঠি দিলেন কলেজের অন্তত ২৫ জন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী। বর্তমান পরিচালন সমিতি ভেঙে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগেরও আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা।
কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি শিবরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘টিচার ইনচার্জ পড়ুয়াদের টাকার রসিদে সই করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে পারবেন। বিকাশ ভবনে আবেদন করা হয়েছে। অনুমতি দিন কয়েকের মধ্যেই চলে আসবে।’’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক মঙ্গলবার জানান, ওই কলেজ বাড়তি সময় চেয়ে আবেদন করলে ভেবে দেখা হবে।
চলতি শিক্ষাবর্ষে ‘চয়েজ বেসড্ ক্রেডিট সিস্টেম’ (সিবিসিএস) অনুযায়ী পরীক্ষায় বসার জন্য ৬০ শতাংশ হাজিরা থাকতেই হবে। চারুচন্দ্র কলেজে পর্যাপ্ত হাজিরা না থাকা পড়ুয়াদের বাদ দিয়ে প্রথম সেমেস্টারের জন্য ৪২৮ জন পড়ুয়ার নাম নির্ধারিত হয়েছে। অনলাইন ফর্ম পূরণের পরে তাঁদের রেজিস্ট্রেশনের টাকা গত ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর কথা ছিল। তা পাঠানো যায়নি।
শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশনের টাকা যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছয়, সেখানে সাসপেন্ড হওয়া অধ্যক্ষ সত্রাজিৎ ঘোষের সই রয়েছে। কিন্তু সাসপেনশনে থাকায় তিনি সই করতে পারছেন না। আর নবনিযুক্ত টিচার ইনচার্জ অনুরাধা ঘোষের সইও সেখানে কাজে লাগছে না। সত্রাজিৎবাবু বলেন, ‘‘আমাকে সই করতে বারণ করা হয়েছে।’’ এরপরেই কলেজে প্রশাসক নিয়োগের আবেদন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের একাংশ। তাঁদের আশঙ্কা, যোগ্য পড়ুয়ারা পরীক্ষায় বসতে না পারলে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখাতে পারেন।
সত্রাজিৎবাবুর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ওঠায় গত জানুয়ারিতে তাঁর বিরুদ্ধে ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি’ গঠন করে কলেজ। সেই কমিটির রিপোর্ট নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছু দিন বাদে হাতে পাওয়ার পরে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সত্রাজিৎবাবু। এদিকে, পরিচালন সমিতির বৈঠকে গত ২৭ নভেম্বর সত্রাজিৎবাবুকে সাসপেন্ড করেছেন সমিতির সভাপতি শিবরঞ্জন। শিক্ষক অনুরাধাদেবীকে টিচার ইনচার্জের দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। বিক্ষুব্ধ শিক্ষকদের দাবি, ‘‘অনুরাধাদেবীকে টিচার ইনচার্জ নিয়ম মেনে করা হয়নি। বেশ কিছু সিনিয়র শিক্ষককে বাদ দিয়ে সমিতির সভাপতি নিজেই অনুরাধাদেবীকে টিচার ইনচার্জ নিয়োগ করে দিয়েছেন।’’ আরেক শিক্ষকের কথায়, ‘‘কলেজে শেষবার ছাত্র ভোট হয়েছিল ২০১৬ সালে। সেই সময়ে নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি এখনও পরিচালন সমিতিতে রয়েছেন। যে পরিচালন সমিতিতে এসব বেনিয়ম হয়, তাকে বৈধ বলা যায় না।’’
অনুরাধাদেবীর কথায়, ‘‘যা বলার পরিচালন সমিতির সভাপতিই বলবেন।’’ আর শিবরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘কলেজের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতেই টিচার ইনচার্জ নিয়োগ করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy