Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
প্রশ্নে নজরদারি

সেক্টর ৫-এ অপহৃত বিপিও কর্তা, উদ্ধার করল আর এক থানা

এলাকার ব্যস্ততম চার মাথার মোড় থেকে এক বিপিও কর্তার অপহরণ এবং তার প্রেক্ষিতে পুলিশের ভূমিকা ফের বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাল পাঁচ নম্বর সেক্টরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:১৮
Share: Save:

এলাকার ব্যস্ততম চার মাথার মোড় থেকে এক বিপিও কর্তার অপহরণ এবং তার প্রেক্ষিতে পুলিশের ভূমিকা ফের বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাল পাঁচ নম্বর সেক্টরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে। রাজ্যের উন্নয়নের মুখ তথ্যপ্রযুক্তি তালুকে বুধবার ভোরে দুষ্কৃতীরা এক বিপিও অধিকর্তাকে তাঁর গাড়ি থেকে নামিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। দাবি আসে মুক্তিপণেরও। এর আগে রাস্তা থেকে এক তরুণীকে অপহরণ করে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে একই এলাকায়। তার পরে কেটেছে মাত্র কয়েক মাস। এরই মধ্যে ফের এমন ঘটায় এমনিতেই ইলেক্ট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানার নজরদারি ব্যবস্থার হাল নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। তারই সঙ্গে আরও অভিযোগ, প্রথমে এই ঘটনার খবরই পায়নি সংশ্লিষ্ট ইলেক্ট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানা। উল্টে অপহৃতের পরিবারের তরফ থেকে ঘটনার খবর জানানো হলে তাতে গুরুত্বও দেয়নি থানা। খবরটি জানাজানি হওয়ার দেড়-দু’ঘণ্টার মধ্যেই অবশ্য উদ্ধার হন অপহৃত। দুষ্কৃতীরাও ধরা পড়ে। তবে সবটাই করে বাগুইআটি থানার পুলিশ। সেক্টর ফাইভের নিরাপত্তার হাল নিয়ে গুঞ্জন তাতে আরও বেড়েছে।

পুলিশ জানায়, অপহৃত ওই ব্যক্তির নাম অনুরূপ সিংহ। বাড়ি কেষ্টপুরে। তাঁর মা রিনাদেবীর কথায়, ‘‘এ দিন ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ কলেজ মোড়ের কাছে অনুরূপকে মারধর করা হচ্ছে বলে ওর এক বন্ধু ফোনে পুত্রবধূ নিতুকে জানায়। পরে মুক্তিপণ চেয়ে ওর অফিসের এক পদস্থ কর্তার কাছে ফোনও আসে।’’

কী ঘটেছিল এ দিন? রিনাদেবী জানান, তাঁর ছেলে সাধারণত রাতে অফিস গিয়ে পরদিন সকালে বাড়ি ফেরেন। বুধবার নিজের গাড়ি করে অনুরূপ বাড়ি ফিরছিলেন। তাঁর সঙ্গে এক বন্ধুও ছিলেন। কলেজ মোড়ের কাছে ওঁদের গাড়ি ঘিরে ফেলে তিনটি গাড়িতে চড়ে আসা অপহরণকারীরা। তার মধ্যে একটা ওলা ক্যাবও ছিল।

পুলিশ জানায়, এর পরে কেড়ে নেওয়া হয় অনুরূপের গাড়ির চাবি। অনুরূপের সঙ্গে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। মারধর করা হয় ওঁর বন্ধুকেও। সেই বন্ধুই অনুরূপের বাড়িতে খবর দেয়।

রিনাদেবীর দাবি, এর পরেই পাঁচ নম্বর সেক্টর থানায় খবর দেওয়া হয়। পরে তাঁরা সেই থানায় যান। অনুরূপের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ জানায়, তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছেন, দু’পক্ষ ঝামেলা মিটিয়ে চলে গিয়েছে। ইতিমধ্যে ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে অনুরূপের অফিসের এক কর্তাকে ফোন করে অপহরণকারীরা। পুলিশকে মুক্তিপণ চেয়ে ফোনের বিষয়টিও বলা হয়। ইতিমধ্যে অপহরণকারীরা ফের জানায়, বাগুইআটিতে গিয়ে মুক্তিপণ দিতে হবে। তখন সেক্টর ৫ থানা অনুরূপের পরিবারকে বাগুইআটি থানায় যোগাযোগ করতে বলে।

খবর পেয়ে বাগুইআটি পুলিশ নিউ টাউন থেকে বাগুইআটি এলাকায় তল্লাশি শুরু করে। পুলিশ জানায়, সাড়ে ছ’টার পরে হাতিয়ারার পীর সাহেবের মোড়ের কাছে অনুরূপকে উদ্ধার করা হয়। তার গলা থেকে আড়াই ভরির হারও ছিনিয়ে নিয়েছিল দুষ্কৃতীরা বলে অভিযোগ।

পুলিশ জেনেছে, ৯-১০ দিন আগে অফিসের এক কর্মী প্রতীক জৈনকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই আক্রোশ থেকেই এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে অনুরূপের পরিবারের দাবি। এ দিন ধৃতদের বারাসত আদালতে তোলা হয়। ধৃতদের মধ্যে অপহরণের অন্যতম পাণ্ডা বলে অভিযুক্ত প্রতীক জৈনের পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজত ও বাকি আট জনের জেল হেফাজত দেয় আদালত।

যদিও ইলেকট্রনিক কমপ্লেক্স থানার ভারপ্রাপ্ত এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের দাবি, ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ তাঁদের কাছে খবর আসে, দু’টি গাড়ি রেষারেষি করে কলেজ মোড়ের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। তার পরে দু’টি গাড়ির লোকের মধ্যে মারপিট হয়। কন্ট্রোলে খবর পেয়ে পুলিশ যাওয়ার আগে দু’টি গাড়িই চলে যায়। অনুরূপের পরিবারের অভিযোগ না নেওয়া এবং অসহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে সেই থানার পুলিশের একাংশ।

কিন্তু অপহরণের কথা জেনেও কেন উদ্যোগী হল না ওই থানার পুলিশ, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। পাশাপাশি প্রশ্ন, কেন অপহরণের ঘটনা জানতে পারল না পুলিশ? সেখানকার ব্যস্ততম অঞ্চল কলেজ মোড়েও কি তবে ছিল না টহলদারি পুলিশ?

বিধাননগরের গোয়েন্দাপ্রধান সন্তোষ পাণ্ডে বলেন, ‘‘অনুরূপের পরিবারের অভিযোগে অসহযোগিতার কথা নেই। কলেজ মোড়ে পুলিশ নজরদারিতে থাকে। তবে কর্তব্যে কোনও গাফিলতি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

BPO Police Abduction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE