নিয়ন্ত্রণ: মশার লার্ভা মারতে বন্ধ কাচের কারখানার উপরে স্প্রে করা হচ্ছে ড্রোনের মাধ্যমে। সোমবার, রাজা সুবোধ মল্লিক রোডে। ছবি: সুমন বল্লভ।
কথায় আছে, ‘যত গর্জায়, তত বর্ষায় না’। মশাবাহিত রোগ দমনে কলকাতা পুরসভার সার্বিক ব্যবস্থাপনা এবং সেই তুলনায় তৎপরতা দেখে এই প্রবাদবাক্য মনে আসতে বাধ্য। কারণ, পুরসভার যে বিভাগ এই রোগ দমনে কাজ করে, সেই ভেক্টর কন্ট্রোলের জন্য বাজেটে বরাদ্দ হয় প্রায় ৭০ কোটি টাকা। যে অঙ্কটা শহরতলির কোনও ছোট পুরসভার সার্বিক বাজেট বরাদ্দের প্রায় সমতুল। শুধু তা-ই নয়, ভেক্টর কন্ট্রোল বিভাগের অধীনে ৩২টি গাড়ি রয়েছে। আছেন চার জন ভেক্টর কন্ট্রোল অফিসার। মৌলালিতে বিভাগের কেন্দ্রীয় অফিস ছাড়াও প্রতিটি বরোয় ‘র্যাপিড অ্যাকশন টিম’ রয়েছে। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) তথা ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বহু বার দাবি করেছেন, ‘‘মশা দমনে কলকাতা পুরসভার যা পরিকাঠামো আছে, তা অন্য কোনও পুরসভার নেই।’’ বিরোধীদের প্রশ্ন, ঘটা করে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করা কি স্রেফ লোক দেখানো? তাঁদের অভিযোগ, এ তো ‘মিথ্যাচার’ ছাড়া আর কিছুই নয়। এত উপকরণ হাতের কাছে থাকা সত্ত্বেও ডেঙ্গি পরিস্থিতি কী ভাবে মহামারির আকার নেয়?
প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে উত্তর ২৪ পরগনার পরেই কলকাতা। আর শহরের ১৬টি বরোর মধ্যে পুর প্রশাসনের সব চেয়ে বেশি মাথাব্যথা ১০ নম্বর বরো নিয়ে। শহরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গিতে যে আট জন মারা গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে পাঁচ জনই ওই বরোর বাসিন্দা।
পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রের খবর, ২০০৬ সালে দশ নম্বর বরোয় ডেঙ্গি ব্যাপক হারে ছড়িয়েছিল। গত কয়েক বছরে সেই ধারায় বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। বিরোধীদের প্রশ্ন, প্রতি বছর দশ নম্বর বরোয় ডেঙ্গির সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়লেও কেন সব বরো এলাকার জন্য ভেক্টর কন্ট্রোল বিভাগ আলাদা ব্যবস্থা নেয় না? কেনই বা অন্য সব বরোর সঙ্গে ‘বিপজ্জনক’ বরোকে একাসনে বসিয়ে স্রেফ নাগরিকদের সচেতন করার সাফাই দিয়ে দায় এড়ান পুর কর্তৃপক্ষ?
বিজেপির পুরপ্রতিনিধি সজল ঘোষ বলেন, ‘‘সোমবার থেকে ৪১টি ওয়ার্ডে ছুটির দিনেও স্বাস্থ্য কেন্দ্র খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা। খুব ভাল কথা। কিন্তু ওই ওয়ার্ডগুলিতে ডেঙ্গি নিরাময়ে পুর স্বাস্থ্য বিভাগ কি আলাদা করে ব্যবস্থা নিয়েছে? কেন বছরের শুরু থেকে পরিত্যক্ত বাড়িগুলিতে জমে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করার কাজে জোর না দিয়ে সংবাদমাধ্যমে ছবি দেখানোর জন্য মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) সেপ্টেম্বরে সদলবল রাস্তায় নামলেন?’’
কংগ্রেসের পুরপ্রতিনিধি সন্তোষ পাঠকের অভিযোগ, ‘‘বলা হচ্ছে, শহরের দক্ষিণে ফাঁকা জমিতে জঞ্জাল পড়ে থাকায় ডেঙ্গি বাড়ছে। কিন্তু ১৬ নম্বর বরো, অর্থাৎ, জোকার বিস্তীর্ণ এলাকায় ফাঁকা জমি ছাড়াও আবাসন তৈরি হচ্ছে। সেখানে তো ডেঙ্গি নেই! তা হলে দক্ষিণ কলকাতায় ডেঙ্গির সংক্রমণ বাড়ার পিছনে ফাঁকা জমির তত্ত্ব বাদ দিয়ে পুরসভা বরং বিপদসঙ্কুল বরো (১০, ১২) এলাকাগুলির জন্য শুরু থেকেই বিশেষ ব্যবস্থা নিক।’’ বাম পুরপ্রতিনিধি মধুছন্দা দেবের মতে, ‘‘ডেঙ্গি নিরাময়ে লাগাতার প্রচারের পাশাপাশি পুরসভার ভেক্টর কন্ট্রোল বিভাগকে প্রথম থেকে আরও সক্রিয় হতে হবে।’’
যদিও বিরোধীদের যাবতীয় অভিযোগ প্রসঙ্গে পুরসভার এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘ভেক্টর কন্ট্রোল বিভাগ বছরভর কাজ করছে। সবার আগে মানুষকে সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গি নিরাময়ে পুরসভা সচেতনতার প্রচার চালাচ্ছে জানুয়ারি মাস থেকে। বাড়ি বা তার আশপাশে জল জমে থাকলেই মশার লার্ভা জন্মায়। ডেঙ্গিপ্রবণ ওয়ার্ডগুলিতে আমাদের বিশেষ নজর রয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়ি বাড়ি যেতে বলা হয়েছে।’’
অন্য দিকে, মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘বিরোধীরা অহেতুক রাজনীতি না করে বরং ভোট-প্রচারের মতো ডেঙ্গি নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে তাঁদের বাড়ি বাড়ি যান। ১৪৪ জন পুরপ্রতিনিধির কাছে আমার বিনীত আবেদন, ডেঙ্গির প্রকোপ রুখতে সচেতনতামূলক প্রচারে আরও বেশি করে গুরুত্ব দিন।’’ এ দিন দুপুরে যাদবপুরে প্রায় ১২ বিঘা জমি জুড়ে থাকা একটি পরিত্যক্ত কারখানার ভিতরে ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা দমনে পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ ড্রোন উড়িয়ে বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy