অভিযোগ আগেও ছিল। আর জি কর-কাণ্ডের সময় থেকে তা আরও বেড়েছিল। রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে হুমকি-প্রথার অন্যতম মুখ হিসাবেও উঠে এসেছিল দুই জুনিয়র চিকিৎসকের নাম। স্বাস্থ্য দফতরের তদন্তে বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা মেলার পরেও সেই অভীক দে ও বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে ‘ক্লিনচিট’ দেওয়ার চেষ্টা করছে স্বাস্থ্য প্রশাসন। এমনই অভিযোগ তুলে সোমবার স্বাস্থ্য ভবন অভিযান করল ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স’ এবং ‘অভয়া মঞ্চ’। যদিও শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে তারা স্মারকলিপি জমা দিতে পারেনি।
আর জি করের সেমিনার-কক্ষে উপস্থিতি ঘিরে বিতর্ক থেকে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে অভিযোগের আঙুল ওঠে ওই দু’জনের বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্য দফতরও তাঁদের সাসপেন্ড করে তদন্ত কমিটি গঠন করে সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখতে। এ দিন চিকিৎসকদের যৌথ মঞ্চের তরফে মানস গুমটা বলেন, ‘‘অভীক ও বিরূপাক্ষের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ। ছ’মাস পার হলেও তদন্ত কমিটির দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে ওঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা অজানা। সেটা প্রকাশ্যে আনারও দাবি জানাচ্ছি।’’ কেন তাঁদের ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা হচ্ছে, সেই প্রশ্নও ওঠে এ দিনের প্রতিবাদ মিছিল থেকে।
এ দিন বিকেলে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান-প্রতিবাদ শুরু করেন চিকিৎসক ও অভয়া মঞ্চের সদস্যেরা। অভিযোগ, স্মারকলিপি দিতে যাওয়ায় পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। তাতে পুলিশ আধিকারিকদের একাংশের সঙ্গে চিকিৎসকদের বচসায় সাময়িক উত্তেজনা ছড়ায়। চিকিৎসকেরা দাবি করেন, পুলিশ দুর্ব্যবহার করেছে। অন্য দিকে, পুলিশও চিকিৎসকদের একাংশের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছে। পুলিশ দাবি করে, এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে এবং স্বাস্থ্য দফতর থেকে স্মারকলিপি গ্রহণের কোনও খবর মেলেনি। এর পরেই চিকিৎসক এবং অন্যেরা স্বাস্থ্য ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে এই কর্মসূচি। চিকিৎসকদের যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক, চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণ জানান, মুখ্যমন্ত্রীকে ইমেল করা হয়েছে, যার প্রতিলিপি মুখ্যসচিব থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য দফতরে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘তার পরেও স্বাস্থ্য দফতরের এই ভূমিকা সমর্থনযোগ্য নয়। ওই দু’জনকে ফের ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলবে।’’ এ বিষয়ে জানতে ফোন ও মেসেজ করা হলেও অভীক বা বিরূপাক্ষের তরফে কোনও উত্তর মেলেনি।
এ দিন তাঁদের সাধারণ স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচিকে ঘিরে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে বিশাল পুলিশি ব্যবস্থাকে কটাক্ষ করেছেন প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী, উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়, পবিত্র গোস্বামীরা। তাঁদের কথায়, ‘‘ভয় পেয়ে স্মারকলিপি নিল না স্বাস্থ্য ভবন।’’ যদিও স্মারকলিপি না নেওয়ার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি স্বাস্থ্যকর্তারা।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)