আলস্য নয়। কুঁড়েমি নয়। আপাত ভাবে মনে হতে পারে, সময় নষ্ট। কিন্তু আদপে শরীর ও মনের যত্ন নেওয়ার কৌশল। সেটি হল, ‘মাইন্ডফুলনেস’। নিজের প্রতি মনোনিবেশ করা। বর্তমান মুহূর্তটিকে গুরুত্ব দেওয়া। নিজের মনে ভাবনাচিন্তার যাতায়াতকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা। শুনে অবাক লাগলেও, এটি এক প্রকার স্বাস্থ্যকর অভ্যাস।
এই মুহূর্তে কী ঘটছে, সে দিকে মনোযোগ দেওয়ার কাজটি কিন্তু সহজ মনে হলেও, আসলে বেশ কঠিন। মানুষের মন অধিকাংশ সময়ে, ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে, অথবা অতীতে কী ঘটেছে, এমন বিষয়গুলি নিয়ে চিন্তায় মগ্ন থাকে। সেই বিষয়গুলির নিয়ন্ত্রণ তাঁদের হাতে নেই। ফলে বাড়তে থাকে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার মতো মানসিক রোগ। স্বাস্থ্যেও প্রভাব পড়ে। বেড়ে যায় রক্তচাপ, ঘুম ভাল হয় না।
আরও পড়ুন:
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেই দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এই অনুশীলনটি করতে হবে।
আমেরিকার ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইন্ডফুলনেস সেন্টারের ডিরেক্টর এরিক লোউকস জানাচ্ছেন, শান্ত হয়ে বসে থেকে বর্তমান সময়টির কথা ভাবতে হবে। আর সেই সময়ে নিজেদের অনুভূতি আর ভাবনাগুলির প্রতি নির্দয় হলে চলবে না। নিজের প্রতি কৌতূহলী হতে হবে।
‘মাইন্ডফুলনেস’ আর ধ্যানের মধ্যে ফারাক রয়েছে। ধ্যান আওয়াজ বা শব্দ ছাড়া নিরিবিলিতে এক জায়গায় বসেই কেবল অনুশীলন করতে হয়, এ ক্ষেত্রে এ রকম কোনও নিয়ম নেই। যেখানে খুশি এই অভ্যাস করা যেতে পারে।

দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এই অনুশীলনটি করতে হবে। ছবি: সংগৃহীত।
কী ভাবে এই অনুশীলন করতে হয়?
শান্ত হয়ে বসে নিজের নিশ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে, বর্তমান সময়ের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। সেই সময়ে বার বার মন উড়ে যেতে চাইবে। যাবতীয় কাজের কথা মনে পড়বে, কিন্তু আবার ধীরে ধীরে মনকে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে নিয়ে আসতে হবে। শুধু বসে বসেই এই অনুশীলন করতে হবে, তার মানে নেই। অন্যের সঙ্গে কথা বলতে বলতে, হাঁটতে হাঁটতে, খেতে খেতে, প্রতিটি মুহূর্তে ‘মাইন্ডফুলনেস’-এর অভ্যাস চলতে পারে। মনকে রেখে দিতে হবে ওই সময়টির মধ্যে, নিশ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যে।
ক্যালিফোর্নিয়ার চিকিৎসক এবং মাইন্ডফুলনেস-প্রশিক্ষক ক্রিশ্চিয়েন উল্ফ বলছেন, ‘‘মুহূর্তের বাঁচা বা মুহূর্তের মধ্যে উপস্থিত থাকাকেই মাইন্ডফুলনেস বলে। কিন্তু এটি খুবই কঠিন হয়ে যায় অনেকের কাছে। দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, একই সময়ে একাধিক কাজ করা (মাল্টিটাস্কিং), ইত্যাদি এই অভ্যাসের প্রতিকূলতা। প্রথমত, মাল্টিটাস্কিং বা একই সময়ে একাধিক কাজ করা বন্ধ করে দিতে হবে। আসলে একই সঙ্গে দু’টি কাজে মনোনিবেশ করা অসম্ভব। মস্তিষ্ক আদপে কোনওটিতেই পুরোপুরি মনোনিবেশ করতে পারে না।’’
উল্ফের পরামর্শ, ‘‘অনুশীলনের সময়ে যেই মুহূর্তে আপনি বুঝতে পারবেন, আপনার মন অন্য দিকে চলে যাচ্ছে, তখনই বুঝবেন, আপনি ঠিক পথে এগোচ্ছেন। অনেকেই বুঝতে পারেন না যে, তাঁর মন সরে গিয়েছে। বুঝতে পারাটাই আসল।’’

বর্তমানের দিকে মনোনিবেশ করার এই অভ্যাস সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর ভাল প্রভাব ফেলতে পারে। ছবি: সংগৃহীত।
উপকারিতা কী?
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বর্তমানের দিকে মনোনিবেশ করার এই অভ্যাস সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর ভাল প্রভাব ফেলতে পারে। মাইন্ডফুলনেস-ভিত্তিক চিকিৎসার ফলে উদ্বেগ কমতে দেখা গিয়েছে। অবসাদ মুক্তির ক্ষেত্রেও প্রমাণ মিলেছে। পাশাপাশি, রক্তচাপ এবং অনিদ্রার সমস্যা কমানোর ক্ষমতা রয়েছে এই অনুশীলনের।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জ়েভ শুম্যান অলিভিয়ের বলছেন, ‘‘দীর্ঘস্থায়ী অসুখে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে মাইন্ডফুলনেস দারুণ কার্যকরী। তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রয়েছে এই অভ্যাসের।’’