—ফাইল চিত্র
গত বছরের তুলনায় কালীপুজো বা দীপাবলিতে বায়ুদূষণ কত কম, শব্দদূষণের প্রাবল্যই বা কতটা কমেছে, সেই পরিসংখ্যান তুলে ধরে রাজ্য সরকারের তরফে প্রচার চালানো হচ্ছে। প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এ বছর বাজি-দূষণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে। প্রতি বছর বাজি-তাণ্ডবের যে চেনা চিত্র থাকে, এ বার সেই দাপট তুলনায় কমই ছিল। প্রশ্ন উঠেছে, ছটপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজোতেও কি এই প্রবণতা ধরে রাখা যাবে?
পরিবেশবিদেরা মনে করছেন, সুপ্রিম কোর্ট, কলকাতা হাইকোর্ট, জাতীয় পরিবেশ আদালত— সব পক্ষই বাজি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার পরে বায়ুদূষণ বা শব্দদূষণ গত বছরের তুলনায় এ বছর কত কম হল, সেই প্রসঙ্গই ওঠার কথা নয়! কারণ, একটি বাজি ফাটলেও তা আদালতের নির্দেশ অমান্যই হয়। তা হলে কিসের ভিত্তিতে তা ‘সাফল্য’-এর খতিয়ান হতে পারে? শুধু তা-ই নয়, আত্মসন্তুষ্টিতে ভুগলে আগামী দিনে প্রশাসনিক তৎপরতায় ঢিলেমি আসতে পারে।
যদিও পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের দাবি, রাজ্য সরকার আদালতের রায়ের মান্যতা দিতে একশো শতাংশ চেষ্টা করেছে। তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সাড়াও দিয়েছেন। খুব কম মানুষই নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন। সৌমেনবাবুর কথায়, ‘‘আইনের জন্মলগ্ন থেকেই তার ফাঁকও রয়েছে। আর তারই সুযোগ নিয়ে কিছু মানুষ বাজি ফাটিয়েছেন। যাঁরা নিয়ম মেনেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ দিচ্ছি। যাঁরা মানেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।’’
বাজি ও ডিজে অভিযোগ
২০২০ সাল
• রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ: ৪৪
• সবুজ মঞ্চ: ৭৮
২০১৯ সাল
• রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ: ১৪০
• সবুজ মঞ্চ: ১১৪
পরিবেশবিদদের অবশ্য বক্তব্য, সরকারি তরফে যতই গত বছরের তুলনায় কম বাজি ফাটার কথা বলা হোক, একটি বাজি ফাটা মানেও তা আদালতের রায়ের অবমাননাই! কারণ, এমন নয় যে চলতি বছরে বাজি ফাটানোর জন্য আদালত অন্য বারের মতো নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করে দিয়েছিল। যেমন, ‘অর্জুন গোপাল ভার্সেস ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া’ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ক্রমবর্ধমান দূষণ ও বাজি ফাটানোয় বাতাসের মানের অবনমনের কথা ভেবে ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট রাত ৮টা-১০টা, এই দু’ঘণ্টা বাজি ফাটানোর সময় বেঁধে দিয়েছিল। শুধু তাই নয়, শীর্ষ আদালত এ-ও জানিয়েছিল, কম দূষণ ছড়ায় এমন বাজিই কেনাবেচা যাবে।
জাতীয় পরিবেশ আদালতে বায়ুদূষণের মামলার আবেদনকারী পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘এ বছর তো সব আদালতই যে কোনও বাজি নিষিদ্ধের কথা বলেছে। ফলে বাজি কত কম ফাটল, সে বিষয়টা এখানে গৌণ। কারণ, একটি বাজি ফাটলেও তা আদালতের নির্দেশের অবমাননাই! বিষয়টি নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছি।’’ অন্য এক পরিবেশবিদের কথায়, ‘‘এ যেন, খুব খারাপের জায়গায় কম খারাপ হয়েছে বলে সরকারের তরফে আত্মসন্তুষ্টি তৈরি হয়েছে।’’ যদিও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তার কথায়, ‘‘একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন, রোম কিন্তু এক দিনে তৈরি হয়নি। ফলে বাজি ফাটানোর যে সংস্কৃতি রাজ্যে রয়েছে, তাতে পরিবর্তন আনতে সময় লাগবে। তবু বলব, এ বছর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই সচেতন ছিলেন।’’
পরিবেশবিদেরা অবশ্য জানাচ্ছেন, চলতি বছর হাসপাতাল চত্বরগুলি বাজি-তাণ্ডবের হাত থেকে রেহাই পেয়েছে বটে, কিন্তু কসবা, রাজডাঙা, যাদবপুর, সার্ভে পার্ক, বেহালা, ঠাকুরপুকুর-সহ একাধিক ‘বাজি-কুখ্যাত’ এলাকায় একই ভাবে বাজি ফেটেছে। এ ছাড়া মাইক্রোফোনে ‘সাউন্ড লিমিটর’ লাগানো বাধ্যতামূলক বা ডিজে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধের কথা বললেও গত দু’দিনে এ সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছে পর্ষদ ও পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর কন্ট্রোল রুমে। ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সম্পাদক নব দত্তের মতে, ‘‘যে সব থানা এলাকায় বাজি ফেটেছে, ওই সমস্ত থানা কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহি করতে হবে, কেন আদালতের রায়ের পরেও বাজি ফাটানো আটকানো গেল না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy