Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata Metro Stations

শুধুই ছবি! নামাঙ্কিত পাঁচ মেট্রো স্টেশনে ‘উপেক্ষিত’ মনীষীরা

নিউ গড়িয়া ও রুবির মধ্যে নতুন মেট্রোপথে মোট পাঁচটি স্টেশন তৈরি হয়েছে কবি সুভাষ, সত্যজিৎ রায়, জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী, সুকান্ত ভট্টাচার্য এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের নামে।

A Photograph of a metro station

নামমাত্র: স্টেশনে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতি এটুকুই।  নিজস্ব চিত্র।

ফিরোজ ইসলাম 
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৩ ০৬:৪১
Share: Save:

নিউ গড়িয়া সংলগ্ন কবি সুভাষ প্রান্তিক স্টেশনে তৈরি হওয়া নতুন টার্মিনালে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ছাপ বলতে প্রবেশপথের মুখে আঁকা তাঁর একটি ছবি। পাশে কবির লেখা থেকে উদ্ধৃতি। নিউ গড়িয়া-রুবি মেট্রোপথে জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী, সুকান্তভট্টাচার্যের নামাঙ্কিত স্টেশনগুলিতেও তাঁদের ছবিটুকু ছাড়া আর কোথাও কিছু নেই। তাই নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রোর রুবি পর্যন্ত অংশের পাঁচটি স্টেশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মনীষীদের সংযোগ আদৌ কতটা রয়েছে, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

আঞ্চলিক সাহিত্য-সংস্কৃতির রীতিনীতি মেনেই ভারতীয় রেল স্টেশনগুলি সাজানোর কথা বলা হয়। ওই পাঁচটি মেট্রো স্টেশনের সাজসজ্জা ও জৌলুসে খামতি না থাকলেও দায়সারা ভাবে আঁকা মনীষীদের ছবি বড়সড় প্রশ্ন তুলেছে। যাঁদের নামে ওই সমস্ত স্টেশন, সেই মনীষীদের ছাপ আদৌ কতটুকু রয়েছে সেখানে, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

নিউ গড়িয়া ও রুবির মধ্যে নতুন মেট্রোপথে মোট পাঁচটি স্টেশন তৈরি হয়েছে কবি সুভাষ, সত্যজিৎ রায়, জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী, সুকান্ত ভট্টাচার্য এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের নামে। এর মধ্যে নিউ গড়িয়া সংলগ্ন কবি সুভাষ প্রান্তিক স্টেশনের নতুন টার্মিনালের মাধ্যমে উত্তর-দক্ষিণ মেট্রো যুক্ত হবে নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রোর সঙ্গে। ঝাঁ-চকচকে ওই স্টেশনটিকে এক ঝলকে কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল বলে ভুল হতে পারে। কাচের দেওয়াল ঘেরা স্টেশন, গম্বুজের মতো প্রায় স্বচ্ছ ছাদ দিয়ে আলো ঢোকে ভিতরে। রয়েছে স্বচ্ছ কাচের এক জোড়া ক্যাপসুল লিফট, আটটি সাধারণ লিফট এবং ১৭টি চলমান সিঁড়ি। পাটুলির দিক থেকে স্টেশনে ঢোকার পথে রয়েছে মোটরচালিত সদা ঘূর্ণায়মান চাকা। তবে, গোটা স্টেশনে কবি সুভাষের উপস্থিতি বলতে প্রবেশপথে আঁকা তাঁর ছবি ও লেখা উদ্ধৃতিটুকুই। পরের স্টেশনগুলির মধ্যে জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী স্টেশনের দেওয়ালে লোকশিল্পের কাজের প্যানেল বসানো। স্টেশনের সঙ্গে নামাঙ্কিত মনীষীর সংযোগ খুঁজে পাওয়া কঠিন বলে মানছেন মেট্রোর আধিকারিকেরাই। অভিষিক্তা মোড় সংলগ্ন সুকান্ত ভট্টাচার্য বা রুবি সংলগ্ন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় স্টেশনের নির্মাণ এবং ব্যবস্থাপনা ভাল হলেও সেখানে ওই মনীষীদের উপস্থিতি বলতে দায়সারা ভাবে আঁকা তাঁদের ছবিটুকুই। স্টেশনের অন্দরসজ্জাতেও তাঁদের কর্মকাণ্ডের ছাপ প্রায় নেই-ই।

তবে, কিছুটা ব্যতিক্রম সত্যজিৎ রায় মেট্রো স্টেশনটি। ‘সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট’ সংলগ্ন ওই স্টেশনের ক্ষেত্রে মেট্রো কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে শেষ মুহূর্তে সাজসজ্জায় একাধিক পরিবর্তন করা হয়। সত্যজিতের পরিবারের সাহায্যে তাঁর বিভিন্ন ছবির পোস্টার থেকে একাধিক মুরাল নির্মাণ করা হয়। সত্যজিৎ-সৃষ্ট বিভিন্ন চরিত্রগুলির ছবিও সেখানে রয়েছে। যদিও সত্যজিতের ছবিটি কতটা যথাযথ ভাবে আঁকা হয়েছে, সেই প্রশ্ন রয়েইছে।

এ প্রসঙ্গে শহরের রেলপ্রেমী সংগঠনের সদস্য রুদ্রনীল চৌধুরী বলেন, ‘‘কোনও স্টেশনের কোনও সাংস্কৃতিক বা ভৌগোলিক বৈশিষ্ট থাকলে সাজসজ্জায় সেটির শিল্পসম্মত প্রকাশ ঘটা উচিত। সে জন্য প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া দরকার।’’ কোন স্টেশন কোন এলাকার জন্য, তা বুঝতেও যাতে অসুবিধা না হয়, তা-ও দেখা উচিত বলে জানিয়েছেন তিনি।

মেট্রো আধিকারিকদের একাংশের মতে, স্টেশনের সাজসজ্জা চূড়ান্ত করার বিষয়টি স্পর্শকাতর এবং গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব অংশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করা জরুরি। তবে উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোর বহু স্টেশনে ঐতিহ্য সংরক্ষণে পরবর্তীকালে একাধিক কাজ করা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। যদিও মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy