গার্ডেনরিচে ভেঙে পড়ল বহুতল। ছবি: সনৎ সিংহ।
ওই জমিতে পাঁচতলা ফ্ল্যাট তৈরির অনুমতি মিলবে না! এ কথা বুঝেছিলেন প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিম। তাই অনুমতি ছাড়াই বাড়ি তৈরি শুরু করেছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেরায় এই কথা স্বীকার করে নিয়েছেন অভিযুক্ত প্রোমোটার। কেন অনুমতি মেলেনি, তা জানিয়েছে পুরসভারই একটি সূত্র। তাদের অভিযোগ, বহুতলের ভার বহনের জন্য যথেষ্ট ক্ষমতা ছিল না ভিতের। আর সে কারণেই বিপর্যয় বলে মনে করা হচ্ছে। প্রোমোটারকে সোমবারই গ্রেফতার করা হয়েছে।
গার্ডেনরিচে পাঁচতলা নির্মীয়মাণ ফ্ল্যাট ভেঙে পড়ার পর থেকেই উঠছে একাধিক অভিযোগ। পুরসভার বিরুদ্ধেও উঠেছে আঙুল। এই পরিস্থিতিতে বাড়ির প্রোমোটার ওয়াসিমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ সূ্ত্রে জানা গিয়েছে, প্রোমোটার জেরায় জানিয়েছেন, ওই জমিতে পাঁচতলা ফ্ল্যাট তৈরি অনুমতি পাবেন না বুঝে, তা না নিয়েই নির্মাণ শুরু করিয়েছিলেন। এখানেই শেষ নয়। যাঁর জমিতে তৈরি হচ্ছিল ওই বহুতল, তিনি ফ্ল্যাটের জন্য তাড়া দিচ্ছিলেন। সে কারণে ফ্ল্যাটের নীচের তলা তৈরির আগেই উপর তলার কাজ শুরু করে দেওয়া হয়। গ্যারেজের উপর চারটি তলা ছিল। মোট ১৬টি ফ্ল্যাট তৈরি করা হচ্ছিল সেখানে। অর্থাৎ এক-এক তলায় চারটি করে। প্রতি বর্গফুটের দাম ১,৬০০ টাকা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে সাত-আট বছরের পুরনো একটি দোতলা বাড়ি ছিল। সেই বাড়ির উপরে আরও দুই থেকে তিন তলা তোলার চেষ্টা করেন বাড়ির মালিক এবং প্রোমোটার। পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের একটি সূত্রের অভিযোগ, বাড়ির ভিত দোতলার বেশি ছিল না। এই কারণে যখন বরো অফিস থেকে বাড়িটির উপর আরও তল সংযোজনের অনুমতি নিতে যাওয়া হয়, তখনই তা খারিজ করে দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরেও প্রকাশ্যে দোতলা বাড়ির উপরে বেআইনি ভাবে আরও তল বৃদ্ধি করা হয়। পুরসভার একটি অংশ মনে করছে, বাড়ির ভিত চারতলার ভার বহন করতে পারেনি। তাতেই ঘটে এই বিপর্যয়। পুরসভার একটি অংশের আরও দাবি, ওই এলাকায় বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করা ঝক্কির বিষয়। পুলিশের সহযোগিতা মেলে না। স্থানীয়েরা বাধা হয়ে দাঁড়ান। আক্রান্ত হতে হয় পুরকর্মীদের।
বহুতলটি যে বেআইনি ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ওই এলাকায় বাম আমল থেকে বেআইনি নির্মাণ চলছে। ফিরহাদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এ সব এলাকায় বাম আমল থেকে বেআইনি নির্মাণ চলছে। কারণ, সে সময়ে প্রশাসনের কাছ থেকে নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যেত না। অনুমতি জোগাড় করতে অনেক হেনস্থার শিকার হতে হত। বিএলআরও অফিসে গিয়ে পায়ের চটি ক্ষয়ে যেত। তাই প্রোমোটারেরা বেআইনি নির্মাণের পথে হাঁটতেন। আমরা আসার পর এই কাজ অনেক সহজ করে দিয়েছি। তা-ও কেন কিছু কিছু লোক বেআইনি নির্মাণ করছেন, জানি না।’’ ওই বহুতলের প্রোমোটারকে অবিলম্বে গ্রেফতারির নির্দেশ দেন মেয়র। মৃতদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ এবং আহতদের এক লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রশাসনের নজর এড়িয়ে কী ভাবে বেআইনি নির্মাণ চলছে? এ বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরকে দোষ দিতে রাজি হননি ফিরহাদ। তিনি বলেন, ‘‘কোন গলিতে বেআইনি ভাবে কী তৈরি হচ্ছে, সেটা কাউন্সিলর জানবেন কী ভাবে? এটা দেখা তাঁর কাজ নয়। আধিকারিকদের কাজ। নিঃসন্দেহে প্রশাসনকে আরও কড়া হতে হবে। আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব। আপাতত যাঁরা ভিতরে আটকে আছেন, তাঁদের উদ্ধার করা আমাদের অগ্রাধিকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy