Advertisement
E-Paper

মধ্যরাতে ধ্বংসস্তূপ থেকে মুহুর্মুহু আর্তনাদ! অক্সিজেন, জলের সঙ্গে উদ্ধারকারীরা জুগিয়ে গেলেন ভরসাও

কর্মীরা। ঘন অন্ধকার। তার মধ্যে ধসে পড়েছে আস্ত বহুতল। ভিতরে কী রয়েছে, প্রথমটায় কিছু দেখতেই পাচ্ছিলেন না কর্মীরা। শুধু ভেসে আসছিল গোঙানির শব্দ।

image of rescue worker

গার্ডেন রিচে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন রাজ্য সরকারের অসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মীরা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সারমিন বেগম

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৪ ১৯:০১
Share
Save

ছাদের উপর ছাদ। তার উপর ছাদ। এই ভাবেই ধসে গিয়েছে গার্ডেনরিচের পাঁচ তলা নির্মীয়মাণ আবাসন। মাঝে আটকে পড়েন বহু মানুষ। রাতভর তাঁদের জল, অক্সিজেন দিয়ে গেলেন উদ্ধারকারীরা। বিশেষ উপায়ে ছাদের অংশ কেটে পৌঁছে দিলেন প্রয়োজনীয় জিনিস। পাশাপাশি, ভরসাও জোগালেন। সেই ভরসাই কাউকে কাউকে বাঁচিয়ে রাখল। কিন্তু কাউকে আবার পারল না। উদ্ধারকাজে নিযুক্ত পুরসভার এক কর্মী জানিয়েই দিলেন, এ রকম কাজ আগেও করেছেন, কিন্তু এই অবস্থা আগে দেখেননি।

রবিবার রাত ১২টা। হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে গার্ডেনরিচের নির্মীয়মাণ বহুতল। ভগ্নস্তূপ পড়ে গুঁড়িয়ে যায় আশপাশের টালির চালের বেশ কয়েকটি বাড়ি। কিছু বোঝার আগেই ভিতরে আটকে পড়েন বহু মানুষ। বহুতলের ভগ্নস্তূপ পড়ে ভেঙে যায় আশপাশের ঝুপড়িও। সেই রাত থেকেই কাজে নেমে পড়েন পুরসভা, রাজ্য সরকারের অসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মীরা। ঘন অন্ধকার। তার মধ্যে ধসে পড়েছে আস্ত বহুতল। ভিতরে কী রয়েছে, প্রথমটায় কিছু দেখতেই পাচ্ছিলেন না কর্মীরা। শুধু ভেসে আসছিল গোঙানির শব্দ। এবং আর্তনাদ। ভগ্নস্তূপে আটকে পড়া অনেকেই তখন দিশেহারা। এক ব্যক্তি উদ্ধারকারীদের কাছে জল খেতে চান। সঙ্গে সঙ্গে বোতলে ভরে তাঁর কাছে জল পাঠানো হয়। এর পর তিনি চিৎকার করে জানান, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। পাঁচ তলা বাড়ি ধসে গিয়েছে। এক-একটি তলের উচ্চতা কমে হয়ে গিয়েছে তিন থেকে চার ফুট। তার মধ্যে মানুষ সোজা হয়ে হাঁটতে না পারলেও শ্বাসকষ্ট হওয়ার কথা নয়।

অসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মীরা বুঝতে পারেন, উৎকণ্ঠার কারণেই শ্বাসকষ্ট বোধ হচ্ছে ওই ব্যক্তির। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে অক্সিজেন সরবরাহ করেন। তার পর তাঁর উদ্বেগ কমানোর জন্য কথাবার্তাও বলে যান উদ্ধারকারীরা। কারণ তখনও তাঁকে বার করে আনার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তড়িঘড়ি তা করতে গেলে আরও বড় বিপদ হতে পারত। ভেঙে পড়তে পারত বহুতলের বাকি অংশও। অবশেষে সোমবার সকালে উদ্ধার করা হয়েছে ওই ব্যক্তিকে। তবে তাঁর পায়ের হাড় (ফিমার বোন) ভেঙে গিয়েছে।

পাঁচ তলা বাড়ির ভগ্নস্তূপ থেকে উদ্ধার বা এই জল, অক্সিজেন জোগানের কাজ কিন্তু খুব সহজ নয়। অসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মীদের তরফে জানানো হয়েছে, বহুতলের উপরের তলগুলির ছাদে ক্রমে ক্রমে দু’ফুট বাই দু’ফুট চৌকো অংশ কেটে প্রবেশ পথ তৈরি হচ্ছে। উপর থেকে সেই ফাঁক গলেই ক্রমে নীচের দিকে নামার চেষ্টা চলছে। কী ভাবে কাটা হচ্ছে সেই অংশ? কর্মীদের তরফে জানানো হয়েছে, করাতের মতো যন্ত্র দিয়ে কাটা হচ্ছে। লোহা এবং কংক্রিট কাটার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ‘সার্কুলার স’। কাঠ কাটার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ‘বুলেট চেন স’। শাবলের মতো যন্ত্র হ্যামার ড্রিল দিয়ে ভাইব্রেট করে ছোট অংশ কাটা হচ্ছে। এ ভাবে বহুতলের ভিতরে নামছেন কর্মীরা। দুটো গর্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদন লেখার সময় একটির কাজ চলছে। বহুতলের ধ্বংসস্তূপে আটকে রয়েছেন বহু মানুষ। তা বুঝে কাজ এগোতে হচ্ছে কর্মীদের। এ ক্ষেত্রে তাদের ভরসা, স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য। তাঁরা ফোন করে ভিতরে আটকে থাকা লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন। তাঁরা কেমন রয়েছেন, জানার চেষ্টা করছেন। তার পর সেই তথ্য দিচ্ছেন উদ্ধারকর্মীদের। তাঁদের কথা শুনেই ছাদে গর্ত করার কাজ চালাচ্ছেন কর্মীরা, যাতে কারও ক্ষতি না হয়।

সারা রাতের চেষ্টার পরেও উদ্ধারকর্মীরা বাঁচাতে পারেননি আকবরকে। তিনি ঘুড়ি তৈরির কাজ করতেন। বহুতল ধসে পড়তেই চিৎকার করেন আকবর। উদ্ধারে ছুটে যান স্থানীয়েরা। তাঁকে বার করতে গিয়ে আরও ধস নামে। ধ্বংসস্তূপে আটকে ছিলেন আকবরের স্ত্রী এবং দুই সন্তান। তাঁরা ঠিক কোথায় রয়েছেন, তা বার করতে আরও সময় লেগে যায়। সোমবার আকবরকে উদ্ধার করা গেলেও বাঁচানো যায়নি। তাঁর স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। দুই সন্তানের মধ্যে এক জনের বয়স ১০ বছর, এক জনের সাত। তাঁদের চিকিৎসা চলছে। উদ্ধারকারীদের ধারণা, নির্মীয়মাণ বহুতলে কেউ কেউ হয়তো বসবাসও করতেন। কারণ ভগ্নস্তূপে টিভি, জামাকাপড়ের হদিস পেয়েছেন তাঁরা।

উদ্ধারকারীদের এক জন হলেন শেখ জাফর। তিনি পুরসভার বিল্ডিং বিভাগে বছর পাঁচেক ধরে চাকরি করেন। অস্থায়ী পদে। কোথাও বাড়ি বা তার অংশ ভেঙে পড়লে এই বিভাগের কর্মীরা উদ্ধারকাজে যান। রবিবার রাত ২টো থেকে ঘটনাস্থলে রয়েছেন তিনি। সোমবার দুপুর ৩টে নাগাদ তাঁর সঙ্গে কথা বলে আনন্দবাজার অনলাইন। মধ্যবয়সী জাফর বলেন, ‘‘রাত থেকে জিনিসপত্র সরাচ্ছি। তখন দেহ পড়ে থাকতে দেখলে খবর দিচ্ছি। এর আগেও কাজ করেছি। কিন্তু এ রকম অবস্থা দেখিনি।’’ এখন পর্যন্ত বাড়ি ভেঙে মৃত্যু হয়েছে ন’জনের।

Garden Reach Building Collapse Collapse

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।