কালো কুচকুচে দুর্গন্ধযুক্ত জল। কোথাও ভাসছে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ, তো কোথাও আবার জমে রয়েছে বাজারের আবর্জনা। নোংরার এই বাড়বাড়ন্তে পাড়ে দাঁড়ানোই দায়!
এখন এমনই চেহারা আদিগঙ্গার! গঙ্গার যে শাখানদী শহরের মাঝখান দিয়ে সোজা চলে গিয়েছে সুন্দরবনের দিকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান, কলকাতা শহর আগামী দিনে ‘লন্ডন’ হয়ে উঠবে। কিন্তু সেই শহরের এত গুরুত্বপূর্ণ এক অঙ্গেরই এমন হাল কেন? কলকাতা পুরসভা দাবি করেছে, আদিগঙ্গার এই চেহারা বদলে দিতে চায় তারা। সে জন্য একটি ফরাসি সংস্থার পরামর্শক্রমে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি হয়েছে। শীঘ্রই সেই পরামর্শ রিপোর্ট জমা পড়বে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ফরাসি সংস্থাটি গড়িয়া থেকে হেস্টিংস পর্যন্ত সমীক্ষা করেছিল। সেই সমীক্ষায় উঠে এসেছে, আটের দশকে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের প্রথম পর্যায়ে তৈরি ৯৫ শতাংশের বেশি নিকাশি শোধনকেন্দ্র খারাপ হয়ে গিয়েছে। ফলে যাবতীয় বর্জ্য সরাসরি মিশছে টালিনালা ও আদিগঙ্গায়। সরাসরি বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে আদিগঙ্গায়। ড্রেজিং না হওয়ার ফলে পলি জমে ভরাট হয়ে গিয়েছে আদিগঙ্গার ‘গর্ভ’।
আদিগঙ্গার দূষণ নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সেখানেও দূষণের ভয়াবহ সব ছবি উঠে এসেছে। আদিগঙ্গার জল পরীক্ষা করে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানিয়েছে, জলে অক্সিজেনের মাত্রা প্রায় শূন্য। ফলে সেই জলে কোনও জীবের পক্ষে বেঁচে থাকা কার্যত অসম্ভব। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, আদিগঙ্গার এমন পরিস্থিতি তো এক দিনে হয়নি। তা হলে এত দিন কেন টনক নড়েনি পুরসভার?
কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদিগঙ্গা কিংবা টালিনালা সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র-সহ কলকাতা মেট্রোপলিটন ওয়াটার ও স্যুয়ারেজ অথরিটি (কেএমডব্লিউএসএ) এবং সেচ দফতরের কিছু আধিকারিককে পুরসভায় এনে আলাদা দফতর তৈরি করতে বলেন। সেই মতো ‘টালিনালা প্রজেক্ট অফিস’ বলে একটি আলাদা দফতরও হয়। কিন্তু প্রশাসনিক নানা ‘অসুবিধা’ কারণে সেই কাজ খুব দ্রুততার সঙ্গে শুরু হয়নি। কার্যত পুরসভার কর্মীরাই এই দফতরের ভার বয়ে চলেছেন।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় পরিবেশ আদালতে এই সংক্রান্ত মামলা চলার সময়েও এই প্রশ্ন উঠেছিল। পুরসভার ভূমিকা দেখে আদিগঙ্গাকে ‘নমামি গঙ্গা’ প্রকল্পের আওতায় এনে নগরোন্নয়ন দফতরকে কাজ করার নির্দেশও দিয়েছিল আদালত। যদিও পুরসভার দাবি, নমামি গঙ্গা প্রকল্পের আগে থেকে বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় আদিগঙ্গা সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল। সে কথা আদালতকে জানানো হয়েছে। তার ফলে পুরসভাই এই কাজ করবে। পুরসভার এক কর্তা বলেন, ‘‘সংস্কারের জন্য জঞ্জাল সাফাইয়ের পাশাপাশি পলি তোলা এবং নতুন নিকাশি পরিশোধন কেন্দ্র বসানোর কাজ হবে।’’
কবে থেকে শুরু হবে সেই কাজ? পুরসভার ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিপিআর দেখে কাজের অনুমতি পাওয়া গেলেই দরপত্র ডাকা হবে। এই সব মিলিয়ে কাজ শুরু হতে হতে এখনও কয়েক বছর কেটে যাবে।
অর্থাৎ, আদিগঙ্গার কপালের দুঃখ এখনই কাটছে না। পরিচ্ছন্নতা ও সুদিনের আশায় অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক বছর!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy