Advertisement
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বধূ হেনস্থা রোধে বুঝিয়ে বলবে পুলিশ

একের পর এক বধূ নির্যাতনের ঘটনা। কখনও নির্যাতনের জেরে মৃত্যুর পথ বেছে নিতে বাধ্য করা, কখনও মেরে ফেলা। বিয়ের এক বছরের মাথায় বীজপুরের কামনা কুণ্ডু বা সোদপুরের প্রিয়া ওরাওয়ের মতো বহু তরুণীর ঝুলন্ত অথবা আধপোড়া দেহ উদ্ধার হয়।

বিতান ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৭ ০০:৩২
Share: Save:

একের পর এক বধূ নির্যাতনের ঘটনা। কখনও নির্যাতনের জেরে মৃত্যুর পথ বেছে নিতে বাধ্য করা, কখনও মেরে ফেলা। বিয়ের এক বছরের মাথায় বীজপুরের কামনা কুণ্ডু বা সোদপুরের প্রিয়া ওরাওয়ের মতো বহু তরুণীর ঝুলন্ত অথবা আধপোড়া দেহ উদ্ধার হয় গঙ্গাপারের ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের শহর বা গ্রামগুলি থেকে। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটে মহিলা থানা হওয়ার পরে পুলিশের কাছে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ অনেক বেড়েছে। আগে যে ধরনের অভিযোগ মূলত শহর থেকে আসত এখন শিল্পাঞ্চল লাগোয়া গ্রামগুলি থেকেও তেমন বহু অভিযোগ জমা পড়ছে মহিলা থানা ছাড়াও স্থানীয় থানাগুলিতে।

বাড়তে থাকা বধূ নির্যাতনের অভিযোগ এ বার ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তাদেরও অন্য ভাবে ভাবাচ্ছে। কয়েক জন আধিকারিক ও মনোবিদকে নিয়ে এ বার একটি কাউন্সেলিং কেন্দ্র গড়ার ভাবনা হচ্ছে। যেখানে খুব সংবেদনশীল ভাবে অভিযোগগুলি বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নেওয়া এবং নিয়মিত নজর রাখার কাজ হবে। পুলিশকর্তাদের অনেকেরই মত, বধূ নির্যাতনের ঘটনা আগেও ঘটত কিন্তু সামাজিকতার খোলস ছেড়ে আইনের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবতে পারতেন না অনেকে। এখন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। নির্যাতনের অভিযোগ জানাতে এ গিয়ে আসছেন অনেক মহিলা।

মেয়েদের অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার আত্রেয়ী দত্ত বলেন, ‘‘দু’টি মানুষ বা পরিবারের ক্ষেত্রে পারস্পরিক বোঝাপড়ায় দূরত্ব বাড়ছে তীব্র অধিকারবোধ বাড়তে থাকা আর সহনশীলতার অভাব থেকে। এটাই প্রথম বুঝতে হবে সবাইকে।’’ কমিশনারেটের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন মনোবিদ হিরণ্ময় সাহাও। তিনি বলেন, ‘‘দাম্পত্য সমস্যা বোঝাপড়ার জটিলতা থেকেই বাড়ে। গোড়াতেই সেটা নির্মূল করতে পারলে বধূমৃত্যুর হারও কমানো যায়।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দমদম, খড়দহ, টিটাগড়, জগদ্দল, নৈহাটি, বীজপুর— এই থানাগুলিতে প্রতি বছর বধূ নির্যাতনের অভিযোগের সংখ্যা বাড়ছে।

পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে সামগ্রিক ভাবেই বধূ নির্যাতনের অভিযোগ ৩২ থেকে ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরও এই এলাকাগুলি থেকে প্রায় দু’হাজার মামলা হয়েছে বধু নির্যাতনের। বহু ক্ষেত্রেই বোঝাপড়ার সমস্যা থেকে অভিযোগ দায়ের হচ্ছে, কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন সংসার করার পরেও অভিযোগ দায়ের হচ্ছে আর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে। বধূ হত্যার অভিযোগও বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। পণের দাবি বা শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারের কথা ক’দিন আগেও প্রতিটি অভিযোগের মুখ্য বিষয় ছিল। এখন অধিকাংশ অভিযোগই স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার।

ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (২) ধ্রুবজ্যোতি দে বলেন, ‘‘আপাত ভাবে হয়তো খুব সামান্য বিষয়, কিন্তু দু’টি মানুষের একসঙ্গে থাকতে গিয়ে তৈরি হওয়া সমস্যার থেকে দাম্পত্য সমস্যাটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমরা অভিযোগ পেলে
প্রথমে মনোবিদদের সঙ্গে পরামর্শ করার কথা বলি। নিজেরাও করাই। কিন্তু এমনও বহু জটিল সমস্যা থাকে যা যে দু’টি মানুষের মধ্যে চলছে, তারা ছাড়া কেউ মেটাতে পারে না। সেখানে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া আমাদের আর কিছু করার থাকে না।’’ সেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যই নতুন এই ভাবনা পুলিশের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

women disgrace Police explain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE