Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

সুস্মিতাকে কি খুনই করা হয়, ধন্দে পুলিশ

‘এমন হতেই পারে যে, প্রেম নিয়ে বিবাদের জেরে সুস্মিতার কোনও গোপন বা ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়েছিল,’’ মন্তব্য এক পুলিশ অফিসারের।

আদালতে ধৃতেরা। নিজস্ব চিত্র

আদালতে ধৃতেরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:০৮
Share: Save:

ঘাটশিলার তরুণী সুস্মিতা রায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলায় তাঁর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের ধারা যুক্ত করল পুলিশ। যদিও পুলিশেরই একটি সূত্রের দাবি, ময়না-তদন্তে খুেনর প্রমাণ মেলেনি।

বুধবার রাতে এই ঘটনায় সুস্মিতার দুই বন্ধু গুরমিত সিংহ ও বিবেক চাড্ডাকে গ্রেফতার করেছিল কালীঘাট থানা। বৃহস্পতিবার ধৃতদের আদালতে হাজির করানো হলে সরকারি কৌঁসুলি সৌরীন ঘোষাল জানান, প্রাথমিক ভাবে অপহরণের মামলা দায়ের করেছিল সুস্মিতার পরিবার। দেহ উদ্ধারের পরে পরিবার খুনের অভিযোগ দায়ের করে। তার ভিত্তিতেই ধারাটি যোগ করেছেন তদন্তকারীরা।

সৌরীনবাবু আদালতকে জানান, গুরমিত এবং বিবেক, দু’জনের সঙ্গেই প্রেমঘটিত সম্পর্ক ছিল সুস্মিতার। তাঁর মৃত্যুর পিছনে এই ত্রিকোণ প্রেমের কোনও ভূমিকা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। ধৃত দুই যুবকও ঘাটশিলার বাসিন্দা। এই তদন্তে পুলিশকে ঘাটশিলা যেতে হতে পারে, প্রয়োজনে গোটা ঘটনার পুনর্নির্মাণও করা হতে পারে। সেই কারণেই ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর আর্জি জানান তিনি। আলিপুরের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট গুরমিত ও বিবেককে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

মাসখানেক আগে ঘাটশিলা থেকে বিমানসেবিকার প্রশিক্ষণ নিতে কলকাতায় এসেছিলেন সুস্মিতা। কালীঘাটের একটি বা়ড়িতে পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকতেন। ১০ ডিসেম্বর রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। ১৮ ডিসেম্বর উত্তর বন্দর থানা এলাকার মোদীঘাটে একটি দেহ উদ্ধার হয়। বুধবার সেটি সুস্মিতার বলে শনাক্ত করেন তাঁর বাবা জহর রায়। তখনই তিনি দাবি করেন, তাঁর মেয়েকে খুন করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী খুনের মামলা রুজু হলেও পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, ময়না-তদন্তে খুনের প্রমাণ মেলেনি। জলে ডুবেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। বুধবারই জহরবাবু জানিয়েছিলেন, মেয়ের ময়না-তদন্তের রিপোর্ট আসার আগে দেহ নেবেন না তিনি। তাই সুস্মিতার দেহ পুলিশ মর্গেই রাখা ছিল। এ দিন ময়না-তদন্তের রিপোর্ট জানার পরেও জহরবাবু তা বিশ্বাস করতে চাননি। পরে অবশ্য মেয়ের দেহ নিয়েছেন তিনি।

পুলিশ জানায়, ঘাটশিলায় বিবেকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সুস্মিতার। কলকাতায় আসার পথে ট্রেনে গুরমিতের আলাপ হয়। তার পরে প্রেম। কালীঘাটে সুস্মিতার বাসস্থানেও গিয়েছিলেন গুরমিত। দুই প্রেম নিয়ে গোলমালে জড়িয়ে পড়েন সুস্মিতা। তাঁর এক রুমমেটকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, গভীর রাত পর্যন্ত ঘর বন্ধ করে ভিডিও চ্যাট করতেন ওই তরুণী। কয়েক বার তাঁকে অসংলগ্ন অবস্থাতেও দেখা গিয়েছে। ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বিবেক ও গুরমিত, দু’জনের সঙ্গে একটি কনফারেন্স কল হয়েছিল বলেও পুলিশ সূত্রের দাবি।

ত্রিকোণ প্রেমের জেরে মৃত্যু কেন, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে তদন্তকারীদের। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, খুন করা হয়েছে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। সুস্মিতা আত্মহত্যা করলেও তাতে কারও প্ররোচনা ছিল কি না, খতিয়ে দেখা হবে। ‘‘এমন হতেই পারে যে, প্রেম নিয়ে বিবাদের জেরে সুস্মিতার কোনও গোপন বা ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়েছিল,’’ মন্তব্য এক পুলিশ অফিসারের।

লালবাজারের এক কর্তা জানান, সুস্মিতার দু’টি মোবাইল ফোন পাওয়া খুব জরুরি। কিন্তু সেগুলির খোঁজ মেলেনি। ১০ ডিসেম্বর রাতে শেষ টাওয়ার লোকেশন বাবুঘাট এলাকায় ছিল। কিন্তু ধৃতেরা সে সময়ে কলকাতায় ছিলেন না। এই পরিস্থিতিতে গুরমিত এবং বিবেকের মোবাইল ঘেঁটে দেখা হচ্ছে। সেগুলি থেকে বেশ কিছু সূত্র মিলেছে। পুলিশের দাবি, তার ভিত্তিতেই মৃত্যু-রহস্যের জট ছাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE