উদ্ধার হওয়া একটি কুকুর। বুধবার, ট্যাংরায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
গাঁজা উদ্ধার করতে ফ্ল্যাটে পুলিশ হানা দিতে আসছে, সে খবর পেয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল দুই পোষ্যকে। সেই কুকুরই প্রায় দু’ঘণ্টা দরজা আটকে ঢুকতে বাধা দিল তদন্তকারীদের!
বুধবার এমনই ঘটনা ঘটল ট্যাংরা এলাকায়। কুকুর সামলে ঘরের ভিতরে ঢুকতে গিয়ে হাতে কামড়ও খেলেন এক পুলিশকর্মী। শেষে লালবাজার ডগ স্কোয়াডের কর্মীরা ওই দুই কুকুরকে বাগে আনার পরেই ফ্ল্যাটের ভিতরে ঢুকতে পারেন কলকাতা পুলিশের গুন্ডা দমন শাখা ও নার্কোটিক্স শাখার অফিসারেরা। তবে পুলিশ আটকাতে শুধু কুকুর ছাড়াই নয়, তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে গাঁজাতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রের খবর, ট্যাংরা থানার পুলিন খটিক রোডের একটি চারতলা আবাসনের একেবারে উপরের ফ্ল্যাটে বছর দেড়েক ধরে রয়েছে জয়দেব দাস নামে এক ব্যক্তি। এলাকার সকলেই জানতেন, ওই ফ্ল্যাটে দু’টি হিংস্র কুকুর থাকে। মাঝেমধ্যে তাদের নিয়ে এলাকায় হাঁটতে দেখা যেত জয়দেব ও তার পরিবারের লোকদের। এ দিন পাহারারত দু’টি কুকুরের একটিকে পুলিশ নামিয়ে আনার পরে এক বাসিন্দা বলে ওঠেন, ‘‘কুকুর দিয়ে গাঁজা পাহারা!’’
বাড়ির দরজার সামনে লেখা রয়েছে এটাই।
আরও পড়ুন: মন্দা নয়! দাবি নির্মলার, পিছনে ঝিমোচ্ছেন মন্ত্রী
পুলিশ জানিয়েছে, একাধিক দুষ্কৃতীমূলক কাজে অভিযুক্ত জয়দেব এ দিন ঘটনার সময়ে বাড়িতে ছিল না। পুলিশ হানা দিতে আসছে, সেই খবরটা বাড়ির লোককে সেই জানিয়েছিল। গোপন সূত্রে ওই ফ্ল্যাটে গাঁজা মজুতের খবর পেয়ে বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ জয়দেবের ফ্ল্যাটে হানা দেন অফিসারেরা। এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘ওখানে যে হিংস্র দু’টি কুকুর রয়েছে, কে জানত!’’ পুলিশ জানায়, তারা পৌঁছতেই প্রথমে পরিবারের কেউ গাঁজার বান্ডিলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাতেও তল্লাশি আটকানো যাবে না বুঝে ফ্ল্যাটের দরজার সামনে ছেড়ে দেয় রটউইলার ও ডোবারম্যান প্রজাতির কুকুর দু’টিকে।
ধৃত জয়দেব দাস।
আরও পড়ুন: সুখতলা ক্ষইয়েও মেলেনি প্রাপ্য, চিকিৎসা পেলেন না চিকিৎসক
পুলিশ দরজার সামনে গিয়েই থমকে যায়। কারণ, ওই দুই পোষ্যের ‘নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা’ টপকে ভিতরে ঢোকার উপায় ছিল না তদন্তকারীদের। কিছু ক্ষণ চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দেন দুঁদে পুলিশ অফিসারেরা। ডাক পড়ে লালবাজারের ডগ স্কোয়াডের হ্যান্ডলারদের। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তাঁরা এসে ফ্ল্যাটে ঢোকার চেষ্টা করতেই এক হ্যান্ডলারের হাতে কামড় বসিয়ে দেয় জয়দেবের এক পোষ্য। কিছু ক্ষণ পরে অবশ্য ডগ স্কোয়াডের কর্মীদের কাছে পোষ মানে একটি কুকুর। রটউইলার প্রজাতির সেই কুকুর ‘টাইসন’-কে নীচে নামিয়ে আনেন ডগ স্কোয়াডের কর্মীরা। আর ডোবারম্যান প্রজাতির ‘রকি’-কে ফ্ল্যাটেরই একটি ঘরে আটকে শুরু হয় তল্লাশি। রাতে শিয়ালদহ এলাকা থেকে জয়দেবকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে এক কেজি গাঁজা বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। আর তার বাড়ি থেকে ৮০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করতে পেরেছে পুলিশ। মজুত গাঁজার বেশিরভাগটাই পুড়িয়ে দিয়েছিল তার পরিবার। এন্টালি থানায় জয়দেবের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে প্রমাণ নষ্ট এবং কুকুর ছেড়ে দিয়ে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার মামলা রুজু হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া গাঁজা।
বেশি রাতে ‘রকি’কে বাগে এনে নীচে নামাতে সমর্থ হন ডগ স্কোয়াডের কর্মীরা। এ দিকে, কুকুরের বাধায় পুলিশের তল্লাশি আটকে যাওয়ার খবর মুহূর্তে ছড়িয়ে যায়। আবাসনের সামনে ভিড় করেন স্থানীয়েরা। রাস্তায় বসে থাকা টাইসনের ভয়ে অবশ্য কেউ আর এগোনোর সাহস দেখাননি।
-নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy