ভূপাল মুখোপাধ্যায়।
বন্ধু বার বার ফোন করে ডেকেছিলেন। তাই গত ২৯ জুন রাতে বাড়ি থেকে মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন একটি অতিথিশালার মালিক ভূপাল মুখোপাধ্যায়। তাঁর বন্ধু নিজের বাড়িতে ফিরে গেলেও ভূপাল সেই রাতে ফেরেননি। পরের দিন সেই বন্ধু অসংলগ্ন কথা বলায় সন্দেহ হয়েছিল ভূপালের পরিবারের। গত শনিবার তাঁরা অপহরণের একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। পুলিশ সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করেছে। রবিবার বিকেলে হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর ঘাট থেকে ভূপালের পচাগলা দেহ উদ্ধারের পরে ওই বন্ধুর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনলেন পরিজনেরা। প্রাথমিক ভাবে ময়না তদন্তের রিপোর্টে ভূপালের মৃত্যু জলে ডুবেই হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে ।
আদতে রামপুরহাটের বাসিন্দা ভূপাল কলকাতায় বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের একটি ফ্ল্যাটে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে থাকতেন। বীরভূমে তাঁর মা, বাবা ও দাদা থাকেন। বৈঠকখানা রোডে একটি অতিথিশালা রয়েছে তাঁর। মৃতের স্ত্রীর অভিযোগ, ২৯ জুন রাতে বারবার এক বন্ধুর ফোন পেয়ে তাঁর স্বামী বেরিয়ে যান। পরের দিন সকালেও তিনি ফেরেননি। তাঁর মোবাইলও বন্ধ ছিল। সম্ভাব্য কয়েকটি জায়গায় ভূপালের খোঁজ না-পেয়ে মুচিপাড়া থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন তাঁরা।
এর পরে তাঁরা ভূপালের ওই বন্ধুর শিয়ালদহের লাট্টুপাড়ার বাড়িতে যান। গিয়ে দেখেন, বাড়িতেই রয়েছেন ওই ব্যক্তি। ভূপালবাবুর অতিথিশালার ম্যানেজার জানান, প্রথমে স্বীকার না-করলেও পরে ওই ব্যক্তি জানান, ২৯ তারিখ রাতে ভূপালবাবুর মোটরবাইকে চেপে নিমতলার ভূতনাথ মন্দিরে গিয়েছিলেন তাঁরা। ওই ব্যক্তি দাবি করেন, সেখানে থাকাকালীন তিনি কিছু সময়ের জন্য শৌচাগারে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে আর ভূপালকে দেখতে পাননি। ওই ব্যক্তি আরও জানান, তিনি দু’ঘণ্টা ধরে খোঁজাখুঁজি করে ভূপালকে না-পেয়ে একটি অটো ধরে নিজের বাড়ি ফেরেন। মৃতের পরিজনেরা জানিয়েছেন, এর পরেই তাঁরা ওই বন্ধুকে সন্দেহ করতে শুরু করেন। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, ভূপালকে খুঁজে না-পেলেও কেন পুলিশে বা তাঁদের খবর দেননি ওই ব্যক্তি? শুধু তা-ই নয়, ভূপালের মোবাইলটি ওই ব্যক্তির কাছ থেকে ৩০ জুন মুচিপাড়া থানায় জমা পড়ে।
ফের মুচিপাড়া থানায় গিয়ে ভূপালের পরিবার ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর করতে চায়। কিন্তু তাদের অভিযোগ, থানা এফআইআর নিতে চায়নি। ডিসি-র (সেন্ট্রাল) অফিসে গিয়ে অভিযোগ জানানোর পরে সেখান থেকে ফোনে নির্দেশ এলে ৪ জুলাই এফআইআর নেয় থানা। পরের দিনই রামকৃষ্ণপুর ঘাটে একটি দেহ উদ্ধার হওয়ার খবর আসে উত্তর বন্দর থানায়। মুচিপাড়া থানার মারফত খবর পেয়ে দেহটি শনাক্ত করেন পরিবারের লোকজন।
পুলিশ জানিয়েছে, দেহটি পচেগলে গিয়েছে। বাইরে থেকে প্রাথমিক ভাবে কোনও আঘাতের চিহ্ন বোঝা যায়নি। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে কী ভাবে মৃত্যু হয়েছে ভূপালের। তদন্তে নেমে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, অতিথিশালা চালানোর পাশাপাশি নিরাপত্তারক্ষী সরবরাহ করার একটি সংস্থাও রয়েছে ভূপালের। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, বিভিন্ন সংস্থায় নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে চাকরি দেবেন বলে তিনি অনেকের কাছ থেকে টাকা নিতেন। কিন্তু টাকা দেওয়ার পরেও অনেকে চাকরি পাননি। তার সঙ্গে মৃত্যুর কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। গত ২৯ জুন ভূতনাথ মন্দিরে আর কেউ ছিলেন কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy