বাজেয়াপ্ত: রজতের ঘরের সিলিং ফ্যান নিয়ে যাচ্ছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। ছবি: শৌভিক দে
এক ঘণ্টার মধ্যে ফ্ল্যাটের ভিতরে ঠিক কী কী ঘটেছিল, তদন্তে নামার পরে কয়েক দিন পেরিয়ে গেলেও তা পুরোপুরি জানতে পারল না পুলিশ। কাটল না ধোঁয়াশা।
পুলিশ সূত্রের খবর, নিউ টাউনের আইনজীবী রজত দে-র মৃত্যু-রহস্য ওই এক ঘণ্টার গেরোতেই আটকে রয়েছে। কারণ, তদন্তে জানা গিয়েছে, মৃত্যুর এক ঘণ্টা আগেও হোয়াট্সঅ্যাপে সক্রিয় ছিলেন রজত। তার পরের এক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয় বলে তদন্তকারীদের অনুমান।
এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রজতের স্ত্রী অনিন্দিতাকে গ্রেফতারের পরে টানা জেরা করেছে পুলিশ। কিন্তু সেই রাতের ঘটনা সম্পর্কে অনিন্দিতার দেওয়া বিবরণে অসঙ্গতি দূর হচ্ছে না বলেই পুলিশ সূত্রের খবর। সেই অসঙ্গতি দূর করেই পুনর্নির্মাণের পথে হাঁটতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
অনিন্দিতার আইনজীবী চন্দ্রশেখর বাগের অভিযোগ, এই ঘটনায় তৃতীয় কোনও ব্যক্তির হাত রয়েছে বলেই ধারণা পুলিশের এবং সে কথা অনিন্দিতাকে দিয়ে স্বীকার করাতে চাপ দিচ্ছে তারা। তাঁর অভিযোগ, পুলিশি হেফাজতে নিয়ে লাগাতার চাপ তৈরি করা হচ্ছে তাঁর মক্কেলের উপরে। অনিন্দিতার যে স্বীকারোক্তির কথা পুলিশ জানিয়েছে, তা ঠিক নয়। তাঁর মক্কেল খুন করেননি।
তা হলে প্রকৃত ঘটনার কথা গোপন করে অনিন্দিতা শুরুতে কেন স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন? আইনজীবীর দাবি, আকস্মিক ওই ঘটনায় হতচকিত হয়ে গিয়েছিলেন অনিন্দিতা।
তাঁর মক্কেলের উপরে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন চন্দ্রশেখর। পাশাপাশি অনিন্দিতার সঙ্গে তাঁর মাকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ এনেছেন তিনি। আইনজীবী জানান, নিউ টাউন থানায় তাঁকে তাঁর মক্কেলের সঙ্গে একান্তে কথা বলার সুযোগ দেয়নি পুলিশ। কথা বলার সময়ে কয়েক জন পুলিশ অফিসার সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বেশি কথা বলার সুযোগ ঘটেনি বলেই তাঁর অভিযোগ।
যদিও এ বিষয়ে পুলিশের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে পুলিশের একাংশের মতে, পুলিশ যা বলার আদালতে বলবে এবং তার সপক্ষে তথ্যপ্রমাণও পেশ করবে। তবে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ মানতে নারাজ পুলিশ। সরকার পক্ষের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় ধৃতের আইনজীবীর অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এই অভিযোগ ঠিক নয়। যা বলার আদালতে বলা হবে।’’ বুধবার ফের ফরেন্সিক দল নিউ টাউনে রজত-অনিন্দিতার ফ্ল্যাটে যান। রজত যে ঘরে মারা যান, সে ঘরের সিলিং ফ্যানটি খুলে নিয়ে গিয়েছে তারা।
রজতের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা কাটাতে তাঁর মোবাইলের কললিস্টের পাশাপাশি অনিন্দিতার হোয়াট্সঅ্যাপ ও ল্যাপটপের তথ্য বিশ্লেষণের কাজও করছেন তদন্তকারীরা। বিশেষত, ঘটনার আগে রজত ও অনিন্দিতার সঙ্গে কার কার কখন কথা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেরায় অনিন্দিতা যে সব দাবি করেছেন, তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে। নিউ টাউনের ওই আবাসনের কেয়ারটেকার থেকে শুরু করে এক পরিচারিকা-সহ কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, অনিন্দিতার বয়ানে রজতের দেহের অবস্থান ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে যে তথ্য উঠে এসেছে, তার সঙ্গে
ময়না-তদন্তের রিপোর্ট মিলিয়ে দেখা হয়েছে। সেখানেও বেশ কিছু অসঙ্গতি পাওয়া গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy