পাক চর সন্দেহে মাস তিনেক আগে খাস কলকাতার বুকে ধরা পড়েছিল দুই ভাই। সেই আখতার খান ও জাফর খানের হেফাজতে পানাগড়, বিন্নাগুড়ি ও বাগরাকোট ছাউনি-সহ পূর্ব ভারতের মোট ১৩টি সেনাঘাঁটির বিস্তারিত তথ্য ও নক্শা মিলেছে বলে আদালতে পেশ করা চার্জশিটে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)।
এবং তদন্তকারীদের অনুমান, খান ভাইরা পূর্বাঞ্চলের এই সব গুরুত্বপূর্ণ ফৌজি তথ্য পাকিস্তানে পাচার করে দিয়েছে। যার প্রেক্ষাপটে জাতীয় নিরাপত্তাক্ষেত্রে অশনি সঙ্কেত দেখছে পুলিশ ও সেনার একাংশ।
সম্ভাব্য চিনা আগ্রাসন প্রতিরোধের লক্ষ্যে নয়াদিল্লি দেশের পূর্বাঞ্চলে সামরিক শক্তিবৃদ্ধির বড় পরিকল্পনা নিয়েছে। গড়ে তোলা হচ্ছে পাহাড়ি যুদ্ধে পারদর্শী বিশেষ বাহিনী (মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর), যার সদর হবে পানাগড়। সেখানে বায়ুসেনারও উন্নত ঘাঁটি গড়ে উঠছে। পাশাপাশি বিন্নাগুড়ি ও বাগরাকোটও মাউন্টেন স্ট্রাইক কোরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে। এ হেন তিনটি ছাউনির নক্শা ও ছবি সন্দেহভজন ‘পাকিস্তানি এজেন্ট’দের হাতে যাওয়ায় গোয়েন্দারা যারপরনাই উদ্বিগ্ন। তাঁদের চার্জশিট বলছে, ধৃতদের কাছে পুলিশ ট্রেনিং কলেজ সমেত ব্যারাকপুর সেনাঘাঁটির বিস্তারিত নক্শাও মিলেছে। উদ্ধার হয়েছে সেনা গোলন্দাজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ সংক্রান্ত কিছু নক্শা ও তথ্য।
পুলিশ-সূত্রের খবর: গত নভেম্বরের মাঝামাঝি মধ্য কলকাতায় জাল নোট সমেত ধরা হয়েছিল আখতারকে। তাকে জেরা করে জাফরকে জালে ফেলে এসটিএফ। সাম্প্রতিক চার্জশিটে তাদের জাল নোট রাখা, জাল নোট ব্যবহার, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র-সহ একাধিক ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু দেশের নিরাপত্তাজনিত গোপন নথি পাওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রদ্রোহিতার ধারা প্রযুক্ত হল না কেন?
লালবাজারের ব্যাখ্যা: এর জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন। তা চাওয়া হয়েছে। অনুমতি এলেই অতিরিক্ত চার্জশিট দাখিল করে দেশদ্রোহিতা, বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ) এবং সরকারি গোপনীয়তা আইন (অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট) যোগ করা হবে। ‘‘জাল নোট ছড়িয়ে দেশের অর্থনীতির ভারসাম্য নষ্ট করা যায়। এ-ও কিছু লঘু অপরাধ নয়। আপাতত চার্জশিটে সেই সংক্রান্ত একাধিক ধারা দিয়েছি। কেন্দ্র ও রাজ্য সায় দিলে অন্যান্য ধারা জোড়া হবে। আমরা চার্জশিটেও তা জানিয়ে দিয়েছি।’’— বলছেন লালবাজারের এক কর্তা।
গোয়েন্দাদের দাবি, আখতার দীর্ঘ দিন করাচিতে ছিল। সেখানে সে পোশাক কারখানায় কাজ করত, এমনকী মহম্মদ জাভেদ নামে পাকিস্তানি ভোটার কার্ড ও পাসপোর্টও জোগাড় করেছিল। এক সহকর্মী মারফত সে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের খপ্পরে পড়ে। ২০০৯-এর জুন থেকে ২০১০-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত আইএসআই তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। ২০১১-য় নেপালের কাঠমান্ডু হয়ে ভারতে ঢুকে আখতার ‘কাজ’ শুরু করে। কী কাজ?
এসটিএফের তদন্তকারীরা বলছেন, গোড়ায় তার দায়িত্ব ছিল মূলত বিহার দিয়ে রেলপথে সেনাবাহিনীর গতিবিধি নজর করে আইএসআই’কে জানানো। পরে এ দেশের বেকার ছেলেদের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগের দায়িত্বও তাকে দেওয়া হয়। তদন্তকারীদের অভিযোগ, আখতার ই-মেল ও ফোনে পাকিস্তানে খবর পাচার তো করতই, উপরন্তু ২০১৪-র জুন ও ২০১৫-র ফেব্রুয়ারিতে দুবাইয়েও পাড়ি দেয়। সেখানে সে আইএসআই অফিসারদের সঙ্গে দেখা করে ভারতীয় সেনা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তাদের হাতে তুলে দিয়েছিল বলে পুলিশের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy