সর্ষের মধ্যেই কি ভূত?
পরপর ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির তদন্তে নেমে এমনই ইঙ্গিত মিলছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের। তাঁদের একাংশের সন্দেহ, এই ধরনের জালিয়াতিতে ব্যাঙ্কের একাংশের যোগসাজশ থাকতে পারে। তা না হলে গ্রাহকদের তথ্য জালিয়াতদের কাছে পৌঁছতে পারে না। গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখার দায় নিয়ে শুরু হয়েছে চাপানউতোর।
মাস কয়েক আগে ফোন পান ব্যারাকপুরের এক বাসিন্দা। ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি পরিচয়ে এক ব্যক্তি ওই বাসিন্দার ব্যক্তিগত তথ্য জানান। নতুন কার্ড দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে জানতে চান ক্রেডি়ট কার্ডের পাসওয়ার্ড। ফোনের ও-পারের ব্যক্তিকে সত্যিই ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি মনে করে পাসওয়ার্ড বলে ন ব্যারাকপুরের বাসিন্দা। এর পরেই তাঁর ক্রেডিট কার্ড থেকে ২১ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় জালিয়াতেরা।
কিছু দিন আগে সল্টলেকের এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির সঙ্গেও একই ভাবে জালিয়াতি হয়েছে। গচ্চা গিয়েছে প্রায় ১১ হাজার টাকা। দু’টি ক্ষেত্রেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের হলেও কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ। সম্প্রতি সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি তালুকেও এমন কিছু ঘটনার নজির মিলেছে বলে জানায় পুলিশ। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে এমন ঘটায় কিছুটা হলেও নড়েচড়ে বসেছেন তাঁরা। পাঁচ নম্বর সেক্টরের ক্ষেত্রে অবশ্য দেশি গ্রাহকদের পাশাপাশি বিদেশি গ্রাহকদের তথ্যও পাচারের ঘটনা ঘটেছে। সেই ঘটনাগুলিতে অবশ্য অভিযুক্তদের ধরতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।
এই ধরনের জালিয়াতির অভিযোগ দেশের প্রথম সারির একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে বেশি সংখ্যায় মিলছে বলে দাবি পুলিশের। তবে কিছু বেসরকারি ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রেও অভিযোগ উঠেছে। গোয়েন্দারা বলছেন, ব্যাঙ্কের ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে অনেক সময়েই বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া থাকে। তাঁরাই ক্রেডিট কার্ডের হয়ে তথ্য সংরক্ষণ-সহ নানা দায়িত্বে থাকে। সেই কর্মীরা মাঝে মধ্যেই চাকরি ছেড়ে অন্য সংস্থায় যোগ দেন। ফলে ওই কর্মীদের মধ্যে কেউ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকলে তথ্য পাচার হতে পারে।
তদন্তকারীদের একাংশের বক্তব্য, সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে দুষ্কৃতীরা যে তথ্য জানিয়ে বিশ্বাস অর্জন করেছেন, তা একমাত্র ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত লোকেদের পক্ষেই জানা সম্ভব। সল্টলেকে সাইবার থানায় বেশ কিছু ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে এমন বিষয় নজরে এসেছে।
গ্রাহকদের একাংশ বলছেন, ব্যাঙ্কের কর্মীর পরিচয়ে ফোন করে তাঁদের অ্যাকাউন্ট, ঠিকানা, জন্মতারিখ-সহ এমন সব তথ্য বলা হচ্ছে, যাতে সে ভুয়ো কি না বোঝা দায়। গ্রাহকদের অভিযোগ, তাঁরা বিশ্বাস করে ব্যাঙ্কে ব্যক্তিগত তথ্য জমা রাখেন। ফলে তা অন্য কারও হাতে গেলে তার দায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের। অথচ তাঁরা কোনও দায় নিতে চান না।
ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষগুলির একাংশের পাল্টা দাবি, ব্যাঙ্কের কর্মী কখনওই এ ভাবে গ্রাহকদের কোনও গোপন তথ্য জানতে চান না। সে ক্ষেত্রে গ্রাহকদের দায়িত্ব রয়েছে। গ্রাহকেরা গোপন তথ্য, যেমন পাসওয়ার্ড ইত্যাদি বলে ফেললে ব্যাঙ্কের কিছু করণীয় থাকে না।
সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গ্রাহকদের তথ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। তা না হলে গ্রাহকেরা অবশ্যই আইনের পথে যেতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহকেরা আইনি পথে সুফল পেয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy