Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Majherhat Bridge

জীবনযুদ্ধে বিজয়ীর সম্বল শুধুই জেদ

আপনি পারবেন। আবার হাঁটবেন, চাকরি করবেন’— চিকিৎসকদের এই কথাগুলোই জেদ বাড়িয়ে দিয়েছিল ওই পুলিশকর্মীর।

পুনর্জন্ম: মেয়ে কোলে অনুপম। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

পুনর্জন্ম: মেয়ে কোলে অনুপম। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:২০
Share: Save:

পুলিশের চাকরিতে চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা তিনি জানতেন। তবে জীবনে চলার পথেও যে তেমনটা ঘটবে, তা কখনও ভাবেননি। তবু দু’বছর আগে সেই চ্যালেঞ্জটাই নিতে হয়েছিল কলকাতা পুলিশের রিজ়ার্ভ ফোর্সের কনস্টেবল অনুপম সাহুকে।

‘আপনি পারবেন। আবার হাঁটবেন, চাকরি করবেন’— চিকিৎসকদের এই কথাগুলোই জেদ বাড়িয়ে দিয়েছিল ওই পুলিশকর্মীর। চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলেন, জয়ীও হয়েছেন। ফের নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে কাজে যোগ দিয়ে এখন এক কন্যাসন্তানের পিতা অনুপম। বললেন, ‘‘চ্যালেঞ্জটা খুব কঠিন ছিল। তা-ও পেরেছি। কিন্তু এখনও একটা ভয় কাজ করে। কোনও সেতুতে উঠলেই মনে হয়, ভেঙে পড়বে না তো!’’

২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। মাঝেরহাট সেতু ধরে গাড়ি নিয়ে তারাতলা থেকে মোমিনপুরের দিকে যাচ্ছিলেন অনুপম। সে সময়েই সেতু ভেঙে প্রায় ৪০ ফুট নীচে পড়ে গাড়ি। দুর্ঘটনায় লাম্বার-১ ভেঙে গিয়ে কোমর থেকে পা পর্যন্ত অসাড় হয়ে গিয়েছিল ওই যুবকের। আলিপুরের একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হলেও তেমন উন্নতি না হওয়ায় শেষে এসএসকেএম হাসপাতালের ফিজ়িক্যাল মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয় অনুপমকে। দীর্ঘ দিন সেখানে চিকিৎসার পরে স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন তিনি।

আরও পড়ুন: শুভেন্দু অধ্যায় ‘ক্লোজড’, দলের অন্দরে স্পষ্ট বার্তা দলনেত্রী মমতার

কিন্তু স্মৃতি এখনও পিছু ছাড়েনি। গড়িয়া স্টেশন রোড এলাকার আবাসনের বাসিন্দা ওই যুবক তাই বৃহস্পতিবার, মাঝেরহাট সেতু উদ্বোধনের দিন অফিসে যাননি। তাঁর কথায়, ‘‘সকাল থেকে শরীর, মন— কোনওটাই ভাল ছিল না। তাই অফিসে ফোন করে বিষয়টা জানিয়ে ছুটি নিয়ে নিই।’’ মন ভাল করতে করোনা পরিস্থিতিতে বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। তাই তিন মাসের মেয়ে কৌশাম্বির সঙ্গে খেলা করেই দিনটা কাটিয়েছেন অনুপম। সঙ্গ দিয়েছেন কলেজশিক্ষিকা স্ত্রী পূরবী। কৌশাম্বিও বাবা-মায়ের মন ভাল করার রসদ জুগিয়েছে নিজের মতো করে। কখনও একরত্তি মেয়েকে কোলে নিয়ে ফ্ল্যাটের বারান্দায় গিয়ে, কখনও আবার খেলনা নিয়ে তার সঙ্গে খেলায় মেতেছিলেন অনুপম। দুপুরের দিকে বাড়িতে থাকা পুরনো সংবাদপত্রের কাটিংগুলি পূরবী বার করলেও, তা দেখতে চাননি তিনি।

আরও পড়ুন: ৮ বছরেও পাকা হয়নি রাস্তা, ক্ষুব্ধ কোটশিলার বাসিন্দারা

অনুপম জানান, এ দিন সহকর্মী ও পরিচিতেরা বার বার ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মনকে চাঙ্গা রাখতে বন্ধুরা মজা করে বলেছেন, ‘আজ তোর ওখানে থাকা উচিত ছিল’।’’ বিকেলে টিভিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেতু উদ্বোধন দেখেছেন স্বামী-স্ত্রী। পূরবী বলেন, ‘‘দু’বছর আগে দিশাহারা হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে উন্নত চিকিৎসার আবেদন করেছিলাম। তাঁর নির্দেশেই ওঁকে পিজিতে ভর্তি করা হয়। তার পরে চিকিৎসক রাজেশ প্রামাণিকের সহযোগিতাও ভুলতে পারব না।’’

কথা চলার মধ্যেই ঘুম থেকে উঠে কেঁদে ফেলে কৌশাম্বি। অবশ্য বাবার কোলে যেতেই একেবারে চুপ। মেয়ের হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে অনুপম বলেন, ‘‘মেয়েই তো আমার জীবনীশক্তি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy