Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

দুর্ঘটনা কমানোর ‘ওষুধ’ খুঁজতে নাজেহাল পুলিশ

কলকাতা পুলিশের তরফে অবশ্য দাবি করা হচ্ছে, পথ দুর্ঘটনা কমাতে তারা চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি। নানা সময়ে গাড়ি চালকদের ডেকে রীতিমতো ‘ক্লাস’ নেওয়ার পাশাপাশি সচেতনতা প্রচার চালানো হয়েছে বছরভর। তাতে অবশ্য সে ভাবে লাভের মুখ দেখা যায়নি বলে মানছেন কলকাতা পুলিশের আধিকারিকেরাই।

বে-হুঁশ: লেক গার্ডেন্সের এখানেই শনিবার রাতে বাইক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন এক জন। তার পরেও সেখান দিয়ে বিনা হেলমেটে যেতে দেখা গেল একাধিক মোটরবাইক আরোহীকে। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

বে-হুঁশ: লেক গার্ডেন্সের এখানেই শনিবার রাতে বাইক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন এক জন। তার পরেও সেখান দিয়ে বিনা হেলমেটে যেতে দেখা গেল একাধিক মোটরবাইক আরোহীকে। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৯ ০৩:৪১
Share: Save:

বছর যায়, বছর আসে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায় না! আগামী ১১ মার্চ থেকে শুরু হতে চলা পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের আগে কলকাতা পুলিশ দেখছে, এ বারও পরিস্থিতি কার্যত বদলায়নি। দুর্ঘটনা আগের থেকে কমেছে দাবি করলেও পুলিশ অস্বীকার করতে পারছে না যে, গত দু’সপ্তাহে অন্তত ১৩টি পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে কলকাতা পুলিশের এলাকাতেই। মৃত্যু হয়েছে ছ’জনের। অঙ্গহানি হয়েছে কমপক্ষে আট জনের। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির বেপরোয়া গাড়ির রেষারেষির দিকে।

কলকাতা পুলিশের তরফে অবশ্য দাবি করা হচ্ছে, পথ দুর্ঘটনা কমাতে তারা চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি। নানা সময়ে গাড়ি চালকদের ডেকে রীতিমতো ‘ক্লাস’ নেওয়ার পাশাপাশি সচেতনতা প্রচার চালানো হয়েছে বছরভর। তাতে অবশ্য সে ভাবে লাভের মুখ দেখা যায়নি বলে মানছেন কলকাতা পুলিশের আধিকারিকেরাই। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘ও সব করে নতুন প্রজন্মকে কিছুটা বোঝানো গেলেও, মাঝবয়সি এবং বয়স্কেরা এখনও আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।’’ সম্প্রতি নব নিযুক্ত পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাও তাঁর অধঃস্তনদের ডেকে পথ দুর্ঘটনা আটকাতে আর কী কী করা যায়, তা ভেবে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন বলে লালবাজার সূত্রের খবর। দুর্ঘটনা ঘটালে সাময়িক লাইসেন্স বাতিলের বিষয়টিতে আরও জোর দেওয়া যায় কি না, তা-ও পুলিশ কমিশনার ভেবে দেখতে বলেছেন বলে খবর।

যদিও পুলিশের একাংশ বলছে, এ আর নতুন কী? পুলিশ কমিশনার যা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে বলছেন, তা ইতিমধ্যেই নিয়মিত করছে দেশের বেশ কিছু শহর। কারণ, দেশের শীর্ষ আদালতই সম্প্রতি বলে দিয়েছে, মোটর ভেহিক‌ল্‌স আইনের ১৮৩ (গতিসীমা লঙ্ঘন), ১৮৪ (বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালানো), ১৮৫ (মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো) এবং ২১৮ (২) (চালকের আসনে বসে মোবাইল বা ইয়ার ফোন ব্যবহার করা) ধারার মতো চারটি ক্ষেত্রে মামলা হলে সংশ্লিষ্ট চালকের লাইসেন্স সাময়িক ভাবে বাতিল করতে পারে পুলিশ। লালবাজার সূত্রের দাবি, শীর্ষ আদালতের নির্দেশের পরে কলকাতা পুলিশ এলাকাতেও বেপরোয়া বহু গাড়ি চালকের লাইসেন্স সাময়িক ভাবে বাতিল করা হয়েছে। তাতেও কি সেই সব চালকেরা সতর্ক হচ্ছেন? পুলিশ বলছে, সাময়িক ভাবে লাইসেন্স বাতিল বলতে তিন মাস থেকে দু’বছর। দু’-একটি বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লাইসেন্স বাতিল হয় মাত্র তিন মাসের জন্য। তার পরেই সেই চালক ফের স্টিয়ারিংয়ে বসছেন। দুর্ঘটনাও ঘটছে যখন-তখন।

এই প্রেক্ষিতেই নানা মহল থেকে নতুন প্রস্তাব আসছে। বলা হচ্ছে, দোষী সাব্যস্ত হলে তো কথাই নেই, দুর্ঘটনা ঘটালেই পাকাপাকি ভাবে সংশ্লিষ্ট চালকের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হোক। যিনি আক্রান্ত হলেন, তাঁকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে সংশ্লিষ্ট চালককে। কারণ, দুর্ঘটনা ঘটানোর পরে বিচার চলে বেশ কিছু দিন। সেই সময়ে জামিনে মুক্ত চালকের স্টিয়ারিংয়ে বসতে বাধা থাকে না। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) সন্তোষ পাণ্ডে বলছেন, ‘‘বিষয়টি ভেবে দেখা যেতেই পারে। তবে সব চালকেরই যে দোষ থাকে, তা নয়। অনেকেই কোনও রকম ট্র্যাফিক আইন মানেন না। মাঝরাস্তায় বেপরোয়া ভাবে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন। তবে ধারাবাহিক ভাবে নিয়মভঙ্গকারীদের জন্য লাইসেন্স বাতিলের এই কড়া ব্যবস্থা করা যেতেই পারে।’’

তবে পুলিশেরই একটি অংশ পাকাপাকি লাইসেন্স বাতিলের প্রস্তাবেও আশা দেখছেন না। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘যতই কড়াকড়ি হোক, পরিস্থিতি সে ভাবে বদলাবে না। আদতে কলকাতার রাস্তাতেই সমস্যা লুকিয়ে রয়েছে।’’ তাঁদের মতে, যত্রতত্র যখন-তখন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, সব জায়গায় পর্যাপ্ত ফুটপাত না থাকা, রাস্তা পারাপার করার উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকার মতো কারণে দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শহরের বহু বাসিন্দার পর্যাপ্ত ‘ট্র্যাফিক এডুকেশন’ না থাকার বিষয়টি।

ফলে আরও একটি পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের আগে দুর্ঘটনা কমানোর দিশা খুঁজেই চলেছে পুলিশ।

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Police Road Accident Death Solution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE