সারিবদ্ধ: ইদের নমাজ পড়তে পাশাপাশি নারী ও পুরুষেরা। বৃহস্পতিবার, নিউ টাউনে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।
সাঁতরাগাছির সুলতানপুরে শেখ মহম্মদ আলির ছোট্ট অফিসঘরে আড্ডা জমেছিল বৃহস্পতিবার সকালেই। স্থানীয় বস্ত্র ব্যবসায়ী তথা দ্বীনিয়ত মুয়াল্লিমা কলেজের কর্ণধার, শিক্ষানুরাগী শেখ হায়দার আলি ঠিক করলেন, পড়শিদের রাজস্থানি ফালুদা খাওয়াবেন! গোটা রমজান মাস ধরেই কলকাতা বা হাওড়ার নানা এলাকায় চুটিয়ে রাবড়ি ফালুদা, বাদাম শেক, নানা স্বাদ ও রঙের কুলফি বিক্রি করছেন চিতোরগড়ের গোপাল গুজ্জর। হায়দর সাহেবের খেয়ালে ইদের সকালে সুলতানপুরে ডাক পড়ল গোপালের।
ওই তল্লাটে পাশেই মস্ত সেন্ট মেরির ক্যাথলিক গির্জা। পাশে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান পরিবারের সহাবস্থান। ছোটবেলার বন্ধু, কেরোসিন বিক্রেতা চিত্তরঞ্জন মল্লিকের বাড়িতে ফালুদা নিয়ে যাবেন বলে হায়দর তৈরি হচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি নিজেই ইদের ছুটির আড্ডায় এসে হাজির। কোলাকুলির উষ্ণতা ঘন দুধেল রাবড়ি ফালুদার সুরভিতে আর একটু মধুর হল। একটু বাদেই হায়দরের দুই পুঁচকে ভাইঝি সাদিয়া ফাইরুজ, রুমাইশা তানজ়িমেরাও নতুন টিকলি, নাকছাবি, ঝলমলে পোশাকে এসে হাজির। ওই শিশু-বাহিনীকে সামনে রেখেই পাড়ায় ফালুদার ডাব্বা বিলি করতে পাঠালেন হায়দর। প্রথমেই ক্যাথলিক দম্পতি ভবানী ভ্যাংরা, প্রীতম ভ্যাংরাদের বাড়ি। ফালুদার ডাব্বায় লেখা, ‘পড়শিকে ভালবেসে থাকি আজীবন। পবিত্র ইদে আপনার পরিবারের জন্য শান্তি, সম্প্রীতি, সুখ, সুস্বাস্থ্য এবং সমৃদ্ধি কামনা করছি, আপনার পড়শি।’
নিউ টাউনের বইমেলার মাঠে ইদের নমাজের আগে স্থানীয় বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্তা আব্দুল গফফারও বক্তৃতায় বলছিলেন, ‘‘মনে রাখবেন, আমরা মুসলিমেরা কোনও বিচ্ছিন্ন দ্বীপে থাকি না। নানা ধর্ম, ভাষার পড়শিরা আমাদের ঘিরে আছেন।’’ নিউ টাউনের মাঠে নারী, পুরুষ মিলে জনা ১২০০-র সুশৃঙ্খল নমাজ সমাবেশ। নমাজ শেষে ইমামসাহেবের জন্য টাকা তোলা, গরিব-দুঃখীকে সাহায্যের ফিতরা এবং বাধ্যতামূলক জাকাতের দান গ্রহণ সুষ্ঠু ভাবে চলছিল। নমাজিদের জন্য শরবত, সিমুইয়ের মিষ্টিমুখের তদারকিতে কয়েক জন হিন্দু প্রতিবেশীকেই দেখা গেল। নিউ টাউনের নমাজে আফ্রিকার কয়েকটি দেশের নাগরিককেও দেখা গিয়েছে।
বাড়ির বাইরে মেয়েদের নমাজ পড়ার প্রবণতা এ বার কলকাতা শহরে বাড়ার ইঙ্গিত মিলেছে। নিউ টাউনে নমাজ পড়ে ত্বক বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক ইমরান ওয়ালি বেকবাগানে মা মরিয়ম ওয়ালির সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। ৮৮ বছরের মরিয়ম ১৯৯০-এর দশকে সল্টলেকে মেয়েদের নমাজ পড়ার হক আদায়ে সক্রিয় হয়েছিলেন। প্রভাতী নমাজের পরে ইদের আমেজ বলতে শুধুই হাসি, গল্প, মজা। কলকাতার বোহরা মুসলিমদের তরফে শিয়া, সুন্নি নির্বিশেষে বাচ্চাদের ইদি বা ইদের পার্বণী উপহার পাঠাতে দেখা গেল। হাওড়ার শেখপাড়া, সোনারপুরের কাছে চন্দনেশ্বরে ইদের জমায়েতে আতর, সুরমার পাশে বইয়ের পসরাও চোখে পড়েছে। সমাজমাধ্যমে ছবি দিয়ে উৎসবের কেতাদুরস্ত সাজগোজের ধুম। উৎসবের সহজিয়া সুরটাই শেষ কথা বলল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy