Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বধূর মৃত্যুতে সন্দেহে স্বামী

বধূর বাপের বাড়ির লোকজনের অভিযোগের আঙুল দীপকের দিকেই।

পূজা জৈন। —নিজস্ব চিত্র।

পূজা জৈন। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৮ ০১:৫৮
Share: Save:

ফুলবাগানে অন্তঃসত্ত্বা বধূর মৃত্যুতে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করল পুলিশ। তবে খুনের কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি তদন্তকারীরা। শনিবার রাত পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি ওই বধূর নিখোঁজ স্বামীরও। তবে কি স্ত্রীকে খুন করেই পালিয়ে গিয়েছেন স্বামী দীপক জৈন, সন্দেহ আরও তীব্র হয়েছে পুলিশের। বধূর বাপের বাড়ির লোকজনের অভিযোগের আঙুল দীপকের দিকেই।

শুক্রবার সকালে নারকেলডাঙা মেন রো়ডে বাপের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় পূজা জৈন নামে এক বধূর মৃতদেহ। পূজার খোঁজ না পেয়ে তার কিছু ক্ষণ আগেই ফুলবাগান থানায় নিখোঁজ বলে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তাঁর পরিজনেরা। পরে বেলার দিকে বাড়ির খাটের তলা থেকে কাপড় জড়ানো অবস্থায় উদ্ধার হয় পূজার মৃতদেহ। তদন্তে উঠে আসে, আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন ওই বধূ। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন মিলেছিল। এর পরেই পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করে পুলিশ। তদন্তকারীরা নিশ্চিত, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা থেকে রাত সাড়ে আটটার মধ্যে পূজাকে খুন করা হয়েছিল।

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার পুনর্নির্মাণ করে তাঁরা জেনেছেন, ঘটনার দিন বাড়িতে একাই ছিলেন পূজা। তাঁর বাবা ভগবতীপ্রসাদ গুপ্ত অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। দিদি, মঞ্জরী গুপ্ত ওই দিন সন্ধ্যায় বাবার কাছেই ছিলেন। পুলিশের অনুমান, সেই সুযোগেই বাড়িতে ঢুকে পূজাকে খুন করা হয়েছে। খুনির জানাই ছিল, ওই সময়ে পূজা বাড়িতে একা থাকবেন। আর খুনি মৃতার পূর্বপরিচিত। সেই সঙ্গে পুলিশ বলছে, খুনের পরে মৃতদেহ রাখতে খাট সরিয়েছিল খুনি। কারণ, যেখান থেকে দেহটি মেলে, খাট না সরিয়ে সেখানে দেহ রাখা সম্ভবই নয় বলে জানিয়েছেন এক তদন্তকারী।

একে মৃতার স্বামী দীপক নিখোঁজ। তাঁর উপরে সন্দেহ আরও জোরাল হয়েছে কারণ, মৃতার বড় দিদি মঞ্জরী ঘটনার দিন বোনের খোঁজ নিতে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফোন করেছিলেন। ফোন ধরেন দীপক। মঞ্জরীর মনে হয়, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে দেখতে এসেছেন স্বামী। তবে পূজার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে দীপক বলে দেন, ‘‘ও বাথরুমে রয়েছে।’’ পরে বার কয়েক ফোন করেও পূজার সঙ্গে কথা বলতে পারেননি মঞ্জরী। তাঁর দাবি, পরে দীপক এবং পূজার ফোন ‘সুইচ অফ’ হয়ে যায়। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ বাড়ি ফিরে আর পূজাকে দেখতে পাননি মঞ্জরী। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে শুক্রবার সকালে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন তাঁরা।

পূজার মেজ দিদি অর্চনা গুপ্ত এ দিন বলেন, ‘‘দীপক সন্তান চাইছিল না। তাই ও আমার বোনকে খুন করেছে।’’ তিনি জানান, বাড়ি থেকে দেখেশুনেই হাওড়ার বাসিন্দা দীপকের সঙ্গে বিয়ে হয় পূজার। শিশুদের পোশাকে পুঁতি, ফুল বসানোর ব্যবসা রয়েছে দীপকের। অভিযোগ, সম্প্রতি ব্যবসায় মন্দার কথা জানিয়ে পূজার বাবাকে দোকান করে দিতে বলেছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য ছিল, বাচ্চা নেওয়ার মতো আর্থিক অবস্থা নেই তাঁর। অর্চনা বলেন, ‘‘আগেও দু’বার আমার বোনের গর্ভপাত করিয়েছে দীপক। এই বাচ্চাটাকেও মেরে ফেলা হবে, সেই ভয়ে বাবার কাছে চলে এসেছিল পূজা। তবু বাঁচানো গেল না। আমাদের বাড়ি এসে খুন করে রেখে গেল!’’

কাঁদতে কাঁদতে দিদি বলেন, ‘‘আগামী সপ্তাহেই হাসপাতালে ডেলিভারির দিন দিয়েছিল। তার আগেই সব শেষ করে দিল!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Phoolbagan murder Murder খুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE