Advertisement
E-Paper

শব্দদূষণ রোধে নিয়ম পালনের কথা যাঁদের, ভাঙছেন তাঁরাই

পরিবেশকর্মীরা এ-ও জানাচ্ছেন, শব্দদূষণ রোধে জাতীয় পরিবেশ আদালতের একাধিক নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ধারাবাহিক ভাবে সে সব লঙ্ঘন করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক প্রচারের কারণে শব্দদূষণ। ফাইল চিত্র

রাজনৈতিক প্রচারের কারণে শব্দদূষণ। ফাইল চিত্র

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:৩১
Share
Save

বর্ষবরণের উৎসবই বুঝিয়ে দিয়েছে যে শব্দদূষণ রোধে যতই কথা হোক, যত নির্দেশই থাক না কেন, সে সবের কার্যত কোনও মূল্যই নেই। বাজি ফাটার সঙ্গে সঙ্গে সমান তালে মাইক বাজিয়ে বিভিন্ন জায়গায় জলসাও হয়েছে। শব্দের তাণ্ডবে লাগাম টানার জন্য অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা বা পুলিশ-প্রশাসন— কারও তরফেই বিন্দুমাত্র চেষ্টাও চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ পরিবেশকর্মীদের। ফলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে সাধারণ মানুষকে যে ফের শব্দদানবের মোকাবিলা করতে হবে, সে বিষয়ে কোনও সংশয় নেই বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।

পরিবেশকর্মীরা এ-ও জানাচ্ছেন, শব্দদূষণ রোধে জাতীয় পরিবেশ আদালতের একাধিক নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ধারাবাহিক ভাবে সে সব লঙ্ঘন করা হচ্ছে। শব্দদূষণ রোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন

তুলেছেন তাঁরা। এক পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ পালনে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের শীর্ষ কর্তাদের উদ্যোগে খামতি রয়েছে। মাইক-সহ যে কোনও শব্দযন্ত্রে সাউন্ড লিমিটর লাগানো

বাধ্যতামূলক হওয়া সত্ত্বেও এখনও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে এখানেই পরিষ্কার যে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কতটা সক্রিয়!’’

বিষয়টি নিয়ে জানতে পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজেরও। যার পরিপ্রেক্ষিতে এক পরিবেশকর্মীর বক্তব্য, ‘‘শব্দদূষণ-সহ পরিবেশগত যে কোনও ক্ষতির ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করাটাই পর্ষদের দায়িত্ব। এ বিষয়ে লুকোচুরি করে কোনও লাভ নেই। উত্তর দিতে জনসাধারণের কাছে পর্ষদ চেয়ারম্যান দায়বদ্ধ। আমরাও এর উত্তর চেয়েছি বার বার।’’

পরিবেশকর্মীদের একটা বড় অংশ মনে করেন, যাঁদের আসলে নিয়ম পালন করার কথা, শব্দদূষণ রোধে তাঁদের মধ্যেই নিয়ম রক্ষায় অনীহা রয়েছে। তারই প্রতিফলন ঘটে রাজনৈতিক সভা-মিছিলে মাইক, লাউডস্পিকারের ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের অভিযোগ, সাউন্ড লিমিটর ছাড়া মাইক-সহ যে কোনও শব্দযন্ত্র খোলা জায়গায় বাজানো নিষিদ্ধ। অথচ সেটাই হয়ে চলছে ক্রমাগত। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, পুলিশ, সবাই সেখানে নির্বাক দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বলে তাঁর অভিযোগ। সুভাষবাবুর কথায়, ‘‘প্রতিবারের ভোটের মতো আগামী বিধানসভা নির্বাচনের সময়েও সাধারণ মানুষকে যাতে শব্দতাণ্ডবের মুখে পড়তে না হয়, তার জন্য পুলিশ-প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, যাঁদের নিয়ম পালন করার কথা, সেই রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরাই তো নিয়ম ভাঙেন।’’

এর আগে পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’ জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মতো মাইক, লাউডস্পিকারে সাউন্ড লিমিটর লাগানোর জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং পুলিশের কাছে আবেদন জানিয়েছিল। সংগঠনের সম্পাদক নব দত্তের কথায়, ‘‘আগে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে মাইক বাজানোর, বাজি পোড়ানোর চল ছিল। কিন্তু গত বেশ কয়েক বছর ধরে যে কোনও ধরনের অনুষ্ঠানেই মাইক, ডিজে বাজানো, বাজি ফাটানোটা যেন একটা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে!’’

পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এটা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ধাপে ধাপে আমরা দূষণ রোধে পদক্ষেপ করছি।’’ এর পরিপ্রেক্ষিতে এক পরিবেশকর্মীর বক্তব্য, ‘‘যে কাজটা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তাদের করার কথা, সেই কাজে মন্ত্রীকে উদ্যোগী হতে হচ্ছে! রাজ্যে শব্দদূষণের চিত্রটা এতেই পরিষ্কার!’’

Sound Pollution

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}