Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

শিশু-মৃত্যু ঘিরে তাণ্ডব হাসপাতালে

আবারও রণক্ষেত্রের চেহারা নিল হাসপাতাল চত্বর। এক শিশুর মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে আইনের তোয়াক্কা না করেই চলল ভাঙচুর। মারধর করা হল চিকিৎসক, নার্স, নিরাপত্তাকর্মীদের।

সানা সাজ্জাদের (ইনসেটে) মৃত্যুর পরে হাসপাতালের ভিতরে বহিরাগতেরা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

সানা সাজ্জাদের (ইনসেটে) মৃত্যুর পরে হাসপাতালের ভিতরে বহিরাগতেরা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:০৮
Share: Save:

আবারও রণক্ষেত্রের চেহারা নিল হাসপাতাল চত্বর। এক শিশুর মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে আইনের তোয়াক্কা না করেই চলল ভাঙচুর। মারধর করা হল চিকিৎসক, নার্স, নিরাপত্তাকর্মীদের। পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিকু) ঢুকে হল চিৎকার-চেঁচামেচি। যার জেরে তীব্র আতঙ্ক ছড়াল ওই ওয়ার্ডে সঙ্কটজনক অবস্থায় ভর্তি থাকা শিশু ও তাদের পরিবারের মধ্যে। তবু নিয়ন্ত্রণে আসেনি উন্মত্ত জনতার রোষ। শেষে খবর পেয়ে কড়েয়া থানার পুলিশ এলে বেশ কিছু ক্ষণ পরে নিয়ন্ত্রণে আসে পরিস্থিতি। তবে তত ক্ষণে অনেকটাই ক্ষতি হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার সকালে এমনই ঘটেছে পার্ক সার্কাস সংলগ্ন বীরেশ গুহ স্ট্রিটের ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ-এ। এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, ঠিক সময়ে পুলিশ এলে কিছুটা হলেও আয়ত্তে থাকত পরিস্থিতি।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, বুধবার রাত আড়াইটে নাগাদ জ্বর ও শ্বাসকষ্ট-সহ বছর চারেকের সানা সাজ্জাদকে নিয়ে আসেন তার পরিজনেরা। অবস্থা খুবই খারাপ থাকায় ওই রাতেই পিকু-তে ভর্তি করা হয় তাকে। কর্তৃপক্ষের দাবি, শিশুটিকে ভেন্টিলেশনেও দিতে হয়। তাতেও তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। পরে ভোরের দিকে ওই শিশুর মৃত্যু হয়। ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বক্তব্য, আগে অন্য একটি হাসপাতালের চিকিৎসককে দেখিয়ে বাড়িতেই ফেলে রাখা হয়েছিল সানাকে। ফলে পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে গিয়েছিল। আরও আগে চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন ছিল।

মৃত শিশুর পরিবারের পাল্টা অভিযোগ, মাঝরাতে তাঁরা সানার কাছে গিয়ে দেখেন, অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনও চিকিৎসক ছিলেন না। সানার দাদু সুরজ শেখের অভিযোগ, ‘‘আমাদের মেয়েকে বিনা চিকিৎসায় মেরে ফেলল। ওই হাসপাতাল পারবে না বলে দিলে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতাম।’’ সানার পরিবারের দাবি, তাদের কোনও গাফিলতি নেই। সামান্য জ্বর আর খিঁচুনিতে কোনও শিশুর মৃত্যু হতে পারে না। সে কারণেই হাসপাতালে তাণ্ডব চালানো হয়েছে বলে দাবি তাদের।

এ দিকে ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ-এর অধিকর্তা অপূর্ব ঘোষের বক্তব্য, কোনও শিশুর চিকিৎসাতেই গাফিলতি হয় না। এই শিশুটিকে বাঁচাতেও যথাসাধ্য চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু হাতের বাইরে চলে গিয়েছিল পরিস্থিতি।

এ দিন পরিস্থিতি বড় আকার নিলে এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন হয়। পুলিশের দাবি, তাদের বিরুদ্ধে ওঠা দেরিতে আসার অভিযোগ ঠিক নয়। চিকিৎসকদের একাংশ পুলিশ দেরিতে আসার অভিযোগ করলেও হাসপাতালের সিইও দেবপ্রসাদ সরকার পরে দাবি করেন, এমন কোনও অভিযোগ করা হয়নি

কর্তৃপক্ষের তরফে।

ভাঙচুর, মারধর নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন? এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েক বছর আগেই তৈরি হয়েছে বিশেষ আইন। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রথমে অভিযোগ না দায়ের করলেও পরে লালবাজারের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তখন লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সময়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নেওয়া হয়েছে। তা দেখে বিক্ষোভকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিকেয়ার সার্ভিস পার্সন্‌স অ্যান্ড মেডিকেয়ার সার্ভিস ইনস্টিটিউশনস (প্রিভেনশন অব ভায়োলেন্স অ্যান্ড ড্যামেজ টু প্রপার্টি) অ্যাক্ট ২০০৯ অনুযায়ী মামলা রুজু হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Rage Vandalism Death Child Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE