Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

শিশু হাসপাতালের বাইরেই দেদার শব্দবাজি

সবুজ মঞ্চের প্রতিনিধিদের অভিযোগ, কালীপুজোর রাতে এর আগেও ওই হাসপাতাল এলাকায় শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগ উঠেছে। সেই তাণ্ডব বন্ধের দাবিতে রাস্তা অবরোধ পর্যন্ত হয়েছে।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৮ ০১:০৯
Share: Save:

রাত সাড়ে দশটা বেজে গিয়েছে। কিন্তু বি সি রায় শিশু হাসপাতালের আশপাশে তখনও একনাগাড়ে ফেটে চলেছে শব্দবাজি। সেই আওয়াজে বারবার কেঁপে উঠছে ভিতরে চিকিৎসাধীন অসুস্থ শিশুরা। টহলদার পুলিশের গাড়ি হাসপাতালের ভিতরে এক বার চক্কর মেরে দেখে গেল, সেখানে কেউ শব্দবাজি ফাটাচ্ছে কি না। তেমন কাউকে দেখতে না পেয়ে তারা যখন বেরোতে যাবে, তখন রোগীর পরিজনেরা পুলিশকর্মীদের বললেন, ‘‘স্যর, হাসপাতালের ঠিক বাইরে বস্তিতে অনেকে বাজি ফাটাচ্ছেন। ওঁদের বারণ করুন। বাচ্চারা হাসপাতালে ভর্তি। ওদের খুব অসুবিধা হচ্ছে। ভয় পাচ্ছে।’’

সেই অভিযোগের নিষ্পত্তি যে হয়নি, তা বোঝা গেল শব্দবাজির তাণ্ডব গভীর রাত পর্যন্ত না থামায়। রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ, হাসপাতালের ঠিক বাইরেই শব্দবাজি ফাটছে, সে কথা পুলিশকে জানানোয় পুলিশকর্মীরা বলেন, ওই এলাকা তাঁদের থানার অধীন নয়। এর কিছু ক্ষণ পরেই সবুজ মঞ্চের প্রতিনিধিরা আসেন বি সি রায় শিশু হাসপাতালে। ওই মঞ্চের সচিব নব দত্ত বললেন, ‘‘শুধু শব্দদূষণই নয়, দেদার বাজি ফাটায় বায়ুদূষণও ছিল মারাত্মক। বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ ছিল ৪৫৭ মাইক্রোগ্রাম। আমরা বারবার পুলিশকে ওই এলাকায় শব্দবাজির তাণ্ডব বন্ধ করতে বলি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’’

সবুজ মঞ্চের প্রতিনিধিদের অভিযোগ, কালীপুজোর রাতে এর আগেও ওই হাসপাতাল এলাকায় শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগ উঠেছে। সেই তাণ্ডব বন্ধের দাবিতে রাস্তা অবরোধ পর্যন্ত হয়েছে। এ বার ওই হাসপাতালের সামনে ও আশপাশের রাস্তায় আরও বেশি পুলিশ থাকলে ছবিটা হয়তো কিছুটা পাল্টাত। যদিও বি সি রায় হাসপাতাল যে থানার অধীন, সেই ফুলবাগান থানার এক কর্তার দাবি, ‘‘আমি ওখানে ছিলাম। বাজির শব্দ পাইনি।’’

শব্দবাজির তাণ্ডবে ভুগতে হয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকেও। সেখানকার রোগীদের অভিযোগ, দেদার বাজি ফেটেছে ওই এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দা অমিত মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের উল্টো দিকেই রয়েছে আরপুলি

লেন। সেখানেই সব থেকে বেশি শব্দবাজি ফেটেছে। প্রায় সারা রাত। পুলিশ কেন কোনও ব্যবস্থা নিল না?’’ আরপুলি লেন মুচিপাড়া থানা এলাকায়। সেই থানারই এক আধিকারিকের আবার দাবি, ‘‘কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ আমার থানা এলাকায় পড়ে না। ওই দিকে শব্দবাজি ফেটে থাকতে পারে। মেডিক্যাল কলেজ লাগোয়া আরপুলি লেনে শব্দবাজি প্রায় ফাটেইনি। আমি নিজে রাউন্ডে ছিলাম। যেটুকু ফেটেছে, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি।’’ যদিও এলাকাবাসীর অভিযোগ, শুধু কালীপুজোর রাতেই নয়, দিনের বেলাতেও সেখানে দেদার বাজি ফাটছে। এ নিয়ে লালবাজারের কর্তারা অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার সুপ্রতিম সরকারকে ফোন করা হলে তিনি কোনও উত্তর দেননি। এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপেরও জবাব দেননি।

শহরের অন্য হাসপাতাল, যেমন আর জি কর বা এন আর এস থেকে শব্দবাজি ফাটার তেমন অভিযোগ অবশ্য মেলেনি। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কাছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছিল। সেখানে মাইকের তাণ্ডবের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। অন্য দিকে, এসএসকেএম হাসপাতালের আশপাশে কয়েকটি জায়গায় শব্দবাজি ফাটার অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালের ভিতরে স্টাফ কোয়ার্টার্সেও বাজি ফেটেছে বলে অভিযোগ। পরিবেশকর্মী পামেলা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এসএসকেএম বা আর জি করের আশপাশে কালীপুজো নয়, দীপাবলিতে বেশি বাজি ফাটে। দীপাবলির রাতে বোঝা যাবে, শব্দবাজি আদৌ জব্দ হল কি না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Firecracker Sound Cracker Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE