অব্যবস্থা: খুঁজেও মেলেনি ট্রলি। এসএসকেএমের আউটডোরে পৌঁছতে তাই মায়ের ভরসা ছেলের কোলই। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
হাসপাতাল চত্বরের ফুটপাতে মাকে বসিয়ে রেখে ট্রলি আনতে গিয়েছিলেন ছেলে। কিন্তু যতক্ষণে ফিরলেন, তাঁর মা আর বসে থাকতে না পেরে শুয়ে পড়েছেন এসএসকেএমের ফুটপাতেই। দু’হাত গিয়ে পড়েছে রাস্তার উপরে, মুখ দিয়ে মাঝেমধ্যে বেরোচ্ছে অস্বস্তির আওয়াজ। মায়ের দিকে ঝুঁকে ছেলে বললেন, ‘‘আস্তে আস্তে ওঠার চেষ্টা করো। হাতটা আমার কাঁধের উপরে দিয়ে দাও। একটু চেষ্টা করো, ঠিক পারবে। আমি তোমায় কোলে করে নিয়ে যাব...!’’
কোনওমতে মাকে কোলে তুলে দ্রুত হাঁটতে শুরু করা ছেলে বললেন, ‘‘ট্রলির জন্য দু’ঘণ্টা লাইন দিয়েছিলাম। বলছে, একটাও ট্রলি নেই। আসার সময়ে আউটডোরে যা ভিড় দেখলাম, সেখানে গিয়েই বা কখন দেখাতে পারব জানি না! ট্রলির জন্য এখানে পড়ে থাকার চেয়ে বরং আউটডোরের সামনেই যাই।’’
সুস্মিতা দাস নামে বছর ষাটেকের ওই প্রৌঢ়ার বাড়ি মালদহে। কিডনির ক্যানসারে ভুগছেন। তা নিয়েই সোমবার সকালে এসেছিলেন এসএসকেএমে। কিন্তু রোগ-যন্ত্রণার মধ্যেও হাসপাতালের ন্যূনতম পরিষেবাটুকু পেতে ভুগতেহল তাঁকে।
এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এ দিন দিনভর এসএসকেএম চত্বরে দেখা গেল রোগী-হয়রানির এমনই নানা ছবি। কখনও হৃদ্রোগে আক্রান্তের বাড়ির লোককে দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়ে রেখে জানানো হল, ট্রলি নেই। কোথাওসূর্যোদয়ের আগে থেকে আউটডোরের লাইনে অপেক্ষারত রোগী সকাল সাড়ে ১০টায় জানতে পারলেন, এ বার চিকিৎসক আসবেন।
পরীক্ষা করানোর তারিখ পেতেও একাধিক ভোগান্তির ছবি। কাউকে এমআরআই করানোর তারিখ দেওয়া হল দু’সপ্তাহ পরে। রক্ত পরীক্ষার লাইনে চার ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে কাউকে শুনতে হল— ‘‘খালি পেটে পরীক্ষাটা করাতে হত। লাইনে দাঁড়িয়ে খেয়ে ফেললে তো হবে না! আজ আর আপনার পরীক্ষা হবে না!’’ নিখরচার চিকিৎসা পরিষেবা পেতে এসে বাইরে থেকে কিনে আনতে বলা ওষুধ কোথায় কম টাকায় পাওয়া যাবে, তা হন্যে হয়ে খুঁজতে দেখা গেল অনেককে। ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে উত্তেজিত ভাবে বেরিয়ে হাজরার রতন মালাকার বললেন, ‘‘এখানে অর্ধেক ওষুধই নেই। ডাক্তার দেড় হাজার টাকার একটা ওষুধ লিখে দিয়েছেন। সেটা কমে কোথায় পাব, সেটাই খুঁজছি। বিনা খরচের চিকিৎসা করাতে এসেও পকেট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।’’
এ দিন সকালে প্রচুর রোগীর ভিড় ছিল মেডিসিন, কার্ডিয়োলজি, চেস্ট, ফিজ়িক্যাল মেডিসিন এবং ইএনটি-র বহির্বিভাগে। তিলধারণের জায়গা ছিল না বহির্বিভাগের জন্য খোলা টিকিট কাউন্টারের সামনে। তবে ১৩ নম্বর কাউন্টারে পরীক্ষা করানোর টিকিটের লাইনে সেই অপেক্ষা অবশ্য মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। কার্ডিয়োলজি বিভাগের সামনে থেকে সেই লাইন এঁকেবেঁকে চলে গিয়েছে বহু দূর। সেই লাইনে দাঁড়ানো, মেদিনীপুরের সুমন গুছাইত বললেন, ‘‘রবিবার রাতেই চলে এসেছিলাম। ভোরে উঠে লাইন দিয়েও এখনও দাঁড়িয়ে আছি।’’ এক হাতে স্যালাইনের বোতল, অন্য হাতে রোগীকে ধরে কোনওমতে লাইনের দিকে হেঁটে আসা এক তরুণীর মন্তব্য, ‘‘বাড়ির কেউ আসতে পারেননি। কার হাতে বাবাকে দিয়ে লাইনে দাঁড়াব, আর কত ক্ষণ দাঁড়াব, সেটাই বুঝতে পারছি না।’’
ভিড়ের মধ্যেই রিপোর্ট পাওয়ার লাইনে দাঁড়ানো সুমনা ঘোষ নামে এক মহিলা আবার বললেন, ‘‘দু’সপ্তাহ আগে পরীক্ষা হয়েছিল। আজ রিপোর্ট পাওয়ার কথা। এত দিন ধরে পুরনো ওষুধই খাচ্ছি। ডাক্তার রিপোর্ট ছাড়া দেখবেন না বলেছেন। কিন্তু কখন রিপোর্ট পাব জানি না। রিপোর্ট হাতে পেতে পেতে ডাক্তার থাকবেন কি না, সেটাও বুঝতে পারছি না।’’
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy