অসহায়: এনআরএসে নিখিল সেন ওরফে শিবু। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা হচ্ছে না। এমন অভিযোগ নিয়ে এ বার একটি পরিবার পুলিশের দ্বারস্থ হল।
অভিযোগ, হাতের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। দুর্ঘটনার শিকার রোগীর জ্বর কমছে না। কিন্তু দিনের পর দিন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে ফেলে রাখা হচ্ছে। শেষে রোগীর পরিবারকে জানানো হয়েছে তাঁর অস্ত্রোপচারের অবস্থা নেই। এ ক্ষেত্রে কী করণীয়, তা বুঝতে পারছে না বেলেঘাটা থানার পুলিশও। আবার ফেরাতে পারছে না অভিযোগকারীদেরও। থানা সূত্রে খবর, হাসপাতালের সঙ্গে পুলিশ কথা বলতে পারে।
গত ৩১ জুলাই ভোরে বেলেঘাটা খালপাড়ে রাস্তার এক দিকে অটোয় সারাইয়ের কাজ করাচ্ছিলেন সুশান্ত দাস নামে বছর তিপ্পান্নর এক ব্যক্তি। অটোর পিছনে মাটিতে বসে যন্ত্রাংশ সারাইয়ের কাজ করছিলেন বছর আটচল্লিশের নিখিল সেন ওরফে শিবু। তখন বেপরোয়া গতিতে একটি লরি অটোটিকে ধাক্কা মারে। দুর্ঘটনায় সুশান্ত মারা যান। শিবুর বাঁ হাতের হাড় ভেঙে বাইরে বেরিয়ে আসে। ডান পায়ের গোড়ালির নীচের অংশ কার্যত উড়ে যায়। গত ১৮ দিন ধরে শিবু এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর বোন সুনেত্রা পালের দাবি, শিবুর সে ভাবে কোনও চিকিৎসা হচ্ছে না। পুলিশের দ্বারস্থ হয়ে তাঁর পরিবার দাবি করেছে, কোনও দিন রাত ১০টায় অস্ত্রোপচার করাতে নিয়ে গিয়ে রাত দেড়টা পর্যন্ত, আবার কোনও দিন বেলা ২টোয় নিয়ে গিয়ে পরের দিন সকাল ৭টা পর্যন্ত শিবুকে ফেলে রাখা হচ্ছে। রোগীর বোন সুনেত্রা পাল রবিবার বলেছেন, ‘‘অপারেশন থিয়েটারে ঠান্ডার মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থেকে দাদার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গিয়েছে। এখন আর না কি অস্ত্রোপচারের ধকল নেওয়ার ক্ষমতাই নেই দাদার। হয়তো ওঁকে বাঁচাতে পারব না।’’
পরিবারটি পুলিশকে জানায়, দুর্ঘটনার চার দিনের মাথায় অস্ত্রোপচার করে শিবুর হাতে রড বসানো হয়। সুনেত্রা বলেন, ‘‘সে দিন বেলা ৩টেয় নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে দাদার অস্ত্রোপচার হয় রাত দেড়টা নাগাদ। এর পর থেকেই দাদার জ্বর কমছিল না। চিকিৎসকেরা ফের অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। আমাদের বলা হয় দাদার বাঁ হাতটা কেটে বাদ দিতে হবে।’’ সেই মতো গত বুধবার দুপুর ২টোয় শিবুকে অস্ত্রোপচারের ঘরে নিয়ে গেলেও পরের দিন সকাল ৭টা পর্যন্ত ওই ভাবেই ফেলে রাখা হয় বলে অভিযোগ। সুনেত্রার দাবি, ‘‘ঠান্ডায় দাদা খুব কষ্ট পাচ্ছিল। ওই দিন সেখানে শেষ পর্যন্ত শুধু দাদার হাতের রডটি খোলা হয়। আমাদের বলা হয়, অস্ত্রোপচার ওই দিন আর করানো যাবে না।’’
ফের শনিবার রাত ১১টায় অস্ত্রোপচারের সময় দেওয়া হয় শিবুর পরিবারকে। রাত দেড়টা নাগাদ জানানো হয়, অস্ত্রোপচার নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই শিবু। মঙ্গলবার ফের চেষ্টা করা হবে। এর পরেই সুনেত্রারা অভিযোগ করেন, ‘‘এ ভাবে ফেলে রেখে দাদাকে শেষ করে দেওয়া হল। রোজ ঠান্ডা ঘরে নিয়ে যায় আর অস্ত্রোপচার করে না। সামান্য গাড়ি সারাইয়ের কাজ করে দাদা। বৌদি আর ওর মেয়েকে দেখার কেউ নেই। অন্য কোথাও নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর সাধ্যও নেই।’’
এনআরএসের সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রোগীর চাপ আছে। তবে এই ধরনের গুরুতর বিষয় ফেলে রাখার কথা নয়। খোঁজ নিয়ে দেখছি। রোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy