Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন

বেসরকারি ফেল, রোগীর চোখ বাঁচাল সরকারি হাসপাতালই

ভিড়ে ঠাসা ঘর, আঁধার সিঁড়ি, বিবর্ণ দেওয়াল। ঝাঁ-চকচকে কর্পোরেট হাসপাতালের পাশে রূপসজ্জাতেই ১০ গোল খেয়ে বসে থাকে সরকারি হাসপাতাল।

পার্থপ্রতিম মৈত্র

পার্থপ্রতিম মৈত্র

সোমা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৫৪
Share: Save:

ভিড়ে ঠাসা ঘর, আঁধার সিঁড়ি, বিবর্ণ দেওয়াল। ঝাঁ-চকচকে কর্পোরেট হাসপাতালের পাশে রূপসজ্জাতেই ১০ গোল খেয়ে বসে থাকে সরকারি হাসপাতাল। কিন্তু যে জটিল রোগে শহরের তাবড় বেসরকারি হাসপাতাল হার মেনেছিল, তাতে এক মুমূর্ষুকে নতুন জীবন দিল সেই সরকারি হাসপাতালই। ফের প্রমাণ করল, সব ক্ষেত্রে উৎকর্ষের মাপকাঠি সাজসজ্জা নয়।

টানা ১০ বছর সিরোসিস অব লিভারে আক্রান্ত পাইকপাড়ার বাসিন্দা পার্থপ্রতিম মৈত্র। তার উপরে গত মে মাস থেকে আচমকাই মাথা ব্যথা শুরু হয়েছিল। একাধিক বেসরকারি হাসপাতালে প্রথমে চোখের ডাক্তার, তার পরে ইএনটি, নিউরোলজির ডাক্তারেরও শরণাপন্ন হয়েছিলেন তাঁরা। গুচ্ছের ওষুধ, লক্ষাধিক টাকার অস্ত্রোপচার, এমনকী মনোরোগের চিকিৎসাও হয়েছিল। নামী হাসপাতালের ডাক্তাররা টানা কয়েক মাস চিকিৎসার পরে কার্যত হাল ছে়ড়ে দেন। ততক্ষণে দু’চোখে দৃষ্টি হারিয়েছেন পার্থবাবু।

এই পরিস্থিতিতে এক শুভানুধ্যায়ীর পরামর্শে কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে যান পার্থবাবুরা। সেখানকার ডাক্তারদের সপ্তাহ দুয়েকের চেষ্টায় শুধু যে যন্ত্রণা লাঘব হয়েছে তা-ই নয়, দৃষ্টিও ফিরে পেয়েছেন তিনি। পার্থবাবুর কথায়, ‘‘চার পাশে সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে এত কথা শুনি। কিন্তু ওই বিপুল ভিড়েও ওখানকার ডাক্তারবাবুরা যে ভাবে যত্ন নিয়ে আমার চিকিৎসা করেছেন, তার তুলনা হয় না। শুধু শারীরিক সুস্থতা নয়, কোথাও যেন হারানো ভরসাও ফিরে পেয়েছি আমি।’’ পাশাপাশি তিনি জানান, সিরোসিস অব লিভার সত্ত্বেও তাঁকে ভাল রাখার কৃতিত্ব আর এক সরকারি হাসপাতাল পিজি-র।

পার্থবাবুর রোগ সারাতে প্রয়োজন ছিল অত্যন্ত দামি একটি ইঞ্জেকশন। প্রায় প্রতি দিন তিন থেকে চারটি ইঞ্জেকশন নিতে হয়েছে তাঁকে। সেই দামি ইঞ্জেকশন হাসপাতালে মজুত থাকার কথা নয়। তা-ও হাসপাতালের তরফে ‘লোকাল পারচেজ’ করা হয়েছে। ফলে কার্যত বিনা খরচেই শহরের সরকারি হাসপাতালে সুস্থ হয়েছেন তিনি।

মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা শুরুর পরে প্রথমে প্যারাসিটামল। তার পরে চোখের ডাক্তারের কাছে গিয়ে পাওয়ার বদল, সবই হয়। কিন্তু ব্যথা কমেনি। এক দিন নাক থেকে রক্ত পড়তে ইএনটি চিকিৎসক পরীক্ষার পরে জানালেন, এটা প্যানিক অ্যাটাক। তার একগাদা ওষুধও চালু হল। ও দিকে মাথা ব্যথাও বাড়ছে। এর পরে নিউরোলজিস্টের তত্ত্বাবধানে সিটি স্ক্যানের পরে বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে সাইনাল অঞ্চল থেকে কিছু ‘মাস’ বার করা হল। পার্থবাবুর আত্মীয়া সুবর্ণা মৈত্র বলেন, ‘‘প্রায় লাখ দেড়েক টাকা খরচ হয়েছিল অস্ত্রোপচারে। ভেবেছিলাম, এ বার সব ঠিক হবে। কিছু তো হলই না। উপরন্তু উনি দৃষ্টি হারাতে শুরু করলেন।’’

আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন বাড়ির লোকেরা। শেষমেশ এক শুভানুধ্যায়ীর পরামর্শে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে ভাইরাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বিভূতি সাহার কাছে যান তাঁরা। জানা যায়, রোগটার নাম অ্যাসপারগিলোসিস। এক ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ। বিভূতিবাবুর চিকিৎসায় সপ্তাহ দুয়েকেই সেরে উঠেছেন পার্থবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘মধ্যবিত্ত পরিবারের বহু মানুষেরই সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়ে খানিকটা বিমুখ মনোভাব থাকে। কিন্তু গিয়ে দেখলাম, শুধু এ রাজ্যের নয়, ভিন্‌ রাজ্যের রোগীদেরও ভিড়। তারই মধ্যে ডাক্তাররা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আমার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাই পরিচ্ছন্নতা চিকিৎসার সবচেয়ে বড় শর্ত। তাতেও কোনও অসুবিধা হয়নি।’’

চিকিৎসক বিভূতি সাহা অবশ্য বলছেন, ‘‘সবটাই টিমওয়ার্ক। সব ক্ষেত্রেই আমরা চেষ্টা করি। রোগীরা সন্তুষ্ট হলে সেটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE