—প্রতীকী চিত্র।
হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক হয়েও তিনি রোগীকে প্রেসক্রিপশনে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। রোগীর আরও অভিযোগ, এমবিবিএস পাশ না হওয়া সত্ত্বেও ওই চিকিৎসকের কারণে তিনি তাঁর ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। গত ৬ জুন রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত তার রায়ে ওই চিকিৎসক এবং যে বেসরকারি হাসপাতালে তিনি কর্মরত ছিলেন— উভয়কেই ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের বাসিন্দা আরেফুল মল্লিক শারীরিক ভাবে অক্ষম। পেশায় গৃহশিক্ষক আরেফুল ডান চোখের কর্নিয়ার সমস্যার জন্য ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের এক বেসরকারি চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্রে যান। সেখানে অক্ষয় দাস নামে এক চিকিৎসককে আরেফুল তাঁর ডান চোখ দেখান। আদালতে আরেফুলের দাবি, প্রথম বার ওই চিকিৎসক তাঁকে চোখে দেওয়ার ড্রপ ও খাওয়ার ওষুধ দেন। কিন্তু, ওষুধ খাওয়ার পরে চোখের অবস্থা আরও খারাপ হয়। এমনকি, তাঁর চোখ থেকে রক্ত বেরোয় বলেও দাবি আরেফুলের। চিকিৎসক ওষুধ বদলে দিলেও চোখ থেকে রস গড়াতে থাকে। ক্রমেই দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়।
তিন বার ওই চিকিৎসককে দেখান আরেফুল। কিন্তু অবস্থার ক্রমাবনতি হতে থাকায় অক্ষয় আরেফুলকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেখিয়েও লাভ হয়নি বলে জানাচ্ছেন আরেফুল। কার্যত ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান তিনি।
এর পরে দাসপুরের ওই চিকিৎসা কেন্দ্র ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ৩০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন আরেফুল। দীর্ঘ ছ’বছর মামলা লড়ে অবশেষে জয়ী হন। গত ৬ জুন রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত জানিয়েছে, এক জন হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক কোনও ভাবেই প্রেসক্রিপশনে রোগীকে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন না। দাসপুরের বেসরকারি চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করেছে আদালত।
আদালত জানিয়েছে, এমবিবিএস পাশ না করেও রোগীকে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ প্রদান করাটা যেমন অপরাধ, তেমনই হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসককে দিয়ে কাজ করানোটাও ওই বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রের অপরাধ। একে আদালত অসাধু ব্যবসার চর্চা বলেও উল্লেখ করেছে।
রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক শ্যামলকুমার ঘোষ ভর্ৎসনা করে জানান, চিকিৎসা আইন অনুযায়ী, এক জন হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক হয়ে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ দেওয়ায় অভিযুক্ত চিকিৎসকের জেল এবং জরিমানা হওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের এক্তিয়ার অনুযায়ী অভিযুক্তের বিরুদ্ধে জরিমানা ধার্য করা যেতে পারে। তাই আদালত দাসপুরের ওই চিকিৎসক ও বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রকে যুগ্ম ভাবে দোষী সাব্যস্ত করছে। রায় বেরোনোর দেড় মাসের মধ্যে আরেফুলকে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেন বিচারক। অভিযুক্ত চিকিৎসকের আইনজীবী অভীককুমার দাসের দাবি, ‘‘চিকিৎসকের বিন্দুমাত্র ভুল ছিল না, বিশেষজ্ঞের মতামতে প্রমাণিত। আমরা জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে যাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy