প্রতীকী চিত্র।
সংক্রমণের লেখচিত্র বর্তমানে নিম্নমুখী হলেও করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা। আর সেই ঢেউয়ে শিশুদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি বলেও অভিমত বিশেষজ্ঞদের একাংশের। এই আশঙ্কা যদি সত্যি হয়, তা হলে অটিস্টিক শিশুরাও তাতে সংক্রমিত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে তাদের চিকিৎসা কী ভাবে সম্ভব, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে অভিভাবকদের অনেকের মনে।
অটিস্টিক শিশুদের অনেকেই ঠিক মতো কথা বলতে পারে না। অনেকের দৃষ্টিশক্তিও বেশ কম। এর পাশাপাশি, ওই শিশুরা সকলের সঙ্গে সব সময়ে মিশতে চায় না। কাউকে কাউকে বাড়ি থেকে বার করে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে হলে দিন পনেরো আগে থেকে তার প্রস্তুতি নিতে হয়। সেই প্রস্তুতি-পর্বে গল্প বলে বা ছবি-ভিডিয়ো দেখিয়ে মানসিক ভাবে তৈরি করা হয় তাদের।
শহর ও শহরতলিতে এমন অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা কম নয়। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে তাদের একাংশ আক্রান্ত হলে চিকিৎসা কী ভাবে হবে, সেটাই এখন চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে মা-বাবাদের। তারা সংক্রমিত হলে সেটা প্রথমে বাড়ির লোক বুঝবেন কী করে, সেটাই প্রধান চিন্তা অভিভাবকদের। অটিস্টিক শিশুদের করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহও সহজ কাজ নয়। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে তাদের একা রাখাও প্রায় অসম্ভব। নিউ টাউনের বাসিন্দা রিনা পাত্র বললেন, ‘‘আমার মেয়ের অটিজ়ম রয়েছে। ও সহজে কারও সঙ্গে মিশতে চায় না। এমনকি, কথাও বলতে পারে না। আকার-ইঙ্গিত দেখে আমরা বুঝতে পারি। নিজের সমস্যার কথাও ভাল ভাবে বোঝাতে পারে না। কোভিডে সংক্রমিত হলে এই ধরনের শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি করা কী ভাবে সম্ভব, সত্যিই আমরা জানি না।’’ রিনা জানালেন, অটিস্টিক শিশুদের সমস্যাগুলি বাইরের কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়ির পরিবেশ ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়াটাও ওদের পক্ষে ঝুঁকির ব্যাপার। তাই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াটাও ওদের জন্য সমস্যার। কোভিডে আক্রান্ত হলে কী করণীয়, সত্যিই জানি না।’’
রাজারহাটের বাসিন্দা সঙ্গীতা চট্টোপাধ্যায়ের বছর পনেরোর ছেলে অটিস্টিক। তিনি বলেন, ‘‘অটিস্টিক শিশু বা ১৮-র বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রেও অভিভাবকেরা পাশে না-থাকলে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। তাই সরকারের উচিত, করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আগে অটিস্টিক শিশুদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা। সে ক্ষেত্রে বাড়িতে রেখেই যদি হাসপাতালের সম্পূর্ণ সুবিধা সহযোগে তাদের চিকিৎসা করা যায়, তা হলে অনেকটা সুবিধা হয়। তবে সরকারের তরফে এ বিষয়ে কোনও নির্দেশিকা আছে কি না, তা আমার জানা নেই।’’
অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থার কর্ণধার ইন্দ্রাণী বসু বলেন, ‘‘এই ধরনের বাচ্চাদের ভয় দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। শুধু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য নয়, সরকারের উচিত করোনা আক্রান্ত শিশুদের জন্য নির্দিষ্ট গাইডলাইন প্রকাশ করা। এ ছাড়া, করোনা আক্রান্ত শিশুকে হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে তার মা অথবা বাবার সঙ্গে থাকার ব্যবস্থা করা উচিত।’’ রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিষয়টি অবশ্যই ভাবনাচিন্তার মধ্যে রয়েছে। তবে এ নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy