Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

ফের আগুন, আতঙ্ক ফিরে এল নন্দরামে

মিনিটখানেক পরে জল এসে পৌঁছনোর উচ্ছ্বাসে দমকলকর্মী আগুন নেভাতে যেতেই ভরতলাল শুরু করলেন নন্দরাম মার্কেটের গল্প। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে সবাই দাদা। কেউ কারও কথা শোনেন না। গুদাম-মালিকের থেকে লিফটম্যানের দাপট বেশি। আগুন লাগল কেন, ওঁরাই বলতে পারবেন।’’

ধোঁয়াচ্ছন্ন: এই ঘর থেকেই ছড়ায় আগুন। শনিবার বিকেলে, নন্দরাম মার্কেটের ন’তলায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

ধোঁয়াচ্ছন্ন: এই ঘর থেকেই ছড়ায় আগুন। শনিবার বিকেলে, নন্দরাম মার্কেটের ন’তলায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৯ ০২:০১
Share: Save:

ঘরের সামনে গোড়ালি ডুবে যাওয়ার মতো জল। মাথার উপরের তলেই জ্বলছে দু’টি গুদামঘর। গোড়ালিডোবা সেই জলেই বসে পড়ে জলের বোতল চেয়ে নিয়ে এক দমকলকর্মী বললেন, ‘‘৩০ মিনিট হয়ে গেল, ভিতরে ঢুকতে পারছি না! জলই নেই! এগোব কী করে?’’ কথাটা শুনে প্রবল উত্তেজিত ভরতলাল আগরওয়াল নামে এক ব্যবসায়ী। বললেন, ‘‘২০০৮ সালে দাঁড়িয়ে শুধু দেখতে হয়েছে। এ বারও কি ওই ভাবেই দাঁড়িয়ে দেখতে হবে?’’

মিনিটখানেক পরে জল এসে পৌঁছনোর উচ্ছ্বাসে দমকলকর্মী আগুন নেভাতে যেতেই ভরতলাল শুরু করলেন নন্দরাম মার্কেটের গল্প। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে সবাই দাদা। কেউ কারও কথা শোনেন না। গুদাম-মালিকের থেকে লিফটম্যানের দাপট বেশি। আগুন লাগল কেন, ওঁরাই বলতে পারবেন।’’

অন্ধকার বাজারে দাঁড়িয়ে আতঙ্কিত ওই ব্যবসায়ী বলতে থাকেন, এ দিন তখন ৩টে বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি। তাঁর অফিসঘরের উপরের তলের গুদামঘর থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখে কর্মীদের নিয়ে ছুটে যান তিনি। গুদামের দরজা ভেঙে দেখেন, প্রবল ধোঁয়া। ‘‘কোনও মতে জলাধারের জল টেনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। কিন্তু কাজ হয়নি।’’ মুহূর্তে ফিরে গেলেন ২০০৮ সালের কথায়। বললেন, ‘‘ওই বছর যখন আগুন লাগে, তখন রাত। ছ’বছর মার্কেট বন্ধ রেখেও দেখলাম, কিছুই হয়নি। আজও রাতে আগুন লাগলে হয়তো মার্কেটটাই বাঁচানো যেত না।’’

নন্দরাম মার্কেটের আর এক ব্যবসায়ী সোনু সোনকারের আবার অভিযোগ, এ দিন যেখানে আগুন লেগেছিল, সেই কাশীরাম ব্লক পরে তৈরি হয়েছে। ওই ব্লক তৈরি করা নিয়ে মামলাও হয়েছে। জানা গেল, ২০১৬ সালে নতুন করে চালু করার সময়ে মার্কেটের এক দিকের অংশ বারো থেকে বাড়িয়ে তেরোতলা করে নেওয়া হয়। নন্দরাম মার্কেটের মালিক মানিকচাঁদ শেঠিয়ার বিরুদ্ধে এ নিয়ে মামলাও হয়। তার পরেও অবশ্য ওই অংশ থেকে গিয়েছে। এখন ওই দু’টি তলে ৭০টিরও বেশি ঘর রয়েছে। এ দিনের অগ্নিকাণ্ডে নন্দরাম মার্কেটের অগ্নিসুরক্ষা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ব্যবসায়ীদের অনেকেই জানতে চাইছেন, মাসে মাসে মালিক টাকা নিয়ে গেলেও মার্কেটের ফায়ার লাইসেন্স ছিল কি না। জল না পেয়ে দমকলের ডিজি জগমোহনকে ঘিরে হাতজোড় করে অনুযোগও করতে দেখা যায় এক ব্যবসায়ীকে।

দমকলের ডিজি-র সামনে এক ব্যবসায়ী। ছবি: নীলোৎপল বিশ্বাস

পুরসভার বিল্ডিং দফতরের এক আধিকারিক অবশ্য জানান, নতুন করে মার্কেট ভবন তৈরির সময়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরামর্শ নেওয়া হয়। সেই মতো ভবন নির্মাণ করা হয়েছে এবং দমকলের নির্দেশ মেনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি রাজ্যে একটি নতুন বিল পাশ হয়েছে। আগে পুরসভার লাইসেন্স পেতে গেলে দমকলের ‘এন ও সি’ প্রয়োজন হত। কিন্তু ওই বিল পাশের পরে আর তা লাগে না। ফলে নন্দরাম মার্কেটের ‘ফায়ার লাইসেন্স’ রয়েছে কি না, তা পুরসভার জানা নেই বলেই দাবি ওই আধিকারিকের।

নির্মাণ এবং ফায়ার লাইসেন্স নিয়ে স্পষ্ট উত্তর নেই দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর কাছেও। তিনি বলেন, ‘‘সবটা খতিয়ে দেখার আগে কিছু বলা যাবে না। মালিকের ভূমিকাও দেখা হবে।’’ মেয়র ফিরহাদ হাকিমও বলেন, ‘‘নন্দরাম মার্কেটের সব নথিপত্র খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’ বিদ্যুৎ সংযোগহীন ভবন ছাড়ার মুখে নন্দরাম মার্কেট ভবনের মালিক মানিকচাঁদ শুধু বলেন, ‘‘আমার জন্য আগুন লাগেনি। আমাকে জড়াবেন না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Accident Fire Brigade Sujit Bose
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy