Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

পঞ্চসায়র গণধর্ষণ কাণ্ড: পরিকাঠামোর বালাই নেই, চলছে বৃদ্ধাবাস

পঞ্চসায়রের গণধর্ষণ-কাণ্ডের তদন্তে নেমে বুধবার পুলিশ দেখল, যে বৃদ্ধাবাসে মৃগীরোগী ওই মহিলা ছিলেন, সেটি কোথাও নথিভুক্তই করা নেই! ওই মহিলা, তাঁর শয্যাশায়ী বৃদ্ধা মা ছাড়া আরও ১০ জন আবাসিক থাকলেও সেখানে রাখা হয়নি কোনও নামের খাতা।

পঞ্চসায়র এলাকার এই বৃদ্ধাবাস থেকেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন নির্যাতিতা। নিজস্ব চিত্র

পঞ্চসায়র এলাকার এই বৃদ্ধাবাস থেকেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন নির্যাতিতা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৫
Share: Save:

‘‘সোমবার রাতে কত জন ছিলেন? দেখি, নামের খাতা নিয়ে আসুন।’’ পুলিশ আধিকারিকের প্রশ্নের উত্তরে কিছু ক্ষণ তাকিয়ে থেকে বৃদ্ধাবাসের মালিক বললেন, ‘‘খাতা তো নেই স্যর।’’ তদন্তকারী এর পরে বলেন, ‘‘এখানকার কাগজপত্র দেখান।’’ মালিককে চুপ করে থাকতে দেখে বিরক্ত তদন্তকারীর মন্তব্য, ‘‘তা-ও নেই? কোনও রেজিস্ট্রেশন ছাড়া এ ভাবে ব্যবসা চালাচ্ছেন?’’

পঞ্চসায়রের গণধর্ষণ-কাণ্ডের তদন্তে নেমে বুধবার পুলিশ দেখল, যে বৃদ্ধাবাসে মৃগীরোগী ওই মহিলা ছিলেন, সেটি কোথাও নথিভুক্তই করা নেই! ওই মহিলা, তাঁর শয্যাশায়ী বৃদ্ধা মা ছাড়া আরও ১০ জন আবাসিক থাকলেও সেখানে রাখা হয়নি কোনও নামের খাতা। সমস্যায় পড়লে দেখানোর জন্য কোনও চিকিৎসক নেই, এমনকি আয়ার ব্যবস্থাও নেই। তেমনই, গভীর রাতে বৃদ্ধাবাস থেকে বেরিয়ে যাওয়া ওই মহিলাকে আটকাতে কোনও নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন না। তদন্তকারীরা সবচেয়ে অবাক হয়েছেন শুনে যে, এ ভাবেই পঞ্চসায়র এলাকায় মোট ১১টি বৃদ্ধাবাস চালান হোমের মালিক হরেকিশোর মণ্ডল। সবগুলিরই নাম, ‘সেবা ওল্ড এজ হোম’! পুলিশকে ওই মহিলার পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, ওই মহিলার মানসিক সমস্যাও রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে নারী শিশুকল্যাণ ও সমাজকল্যাণ দফতরের এক কর্তা জানান, ওই বৃদ্ধাবাসে এ দিন দফতরের আধিকারিকেরা গিয়েছিলেন। যদিও বৃদ্ধাবাস নথিভুক্ত সংক্রান্ত সে রকম কোনও নিয়ম নেই। তবে নির্দিষ্ট কিছু মাপকাঠি মানতে হয়। বৃদ্ধাবাস বলে সেখানে উনচল্লিশ বছরের কোনও মহিলাকে রাখা যায় না। সমস্ত তথ্য যাচাই করে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই বৃদ্ধাবাসের মালিক অবশ্য বলছেন, ‘‘আমরা মানুষের সেবা করছি। কোথায় নথিভুক্ত করাতে হয় জানতাম না।’’

পুলিশি জেরায় মালিক হরেকিশোরবাবু এ-ও জানান, তাঁর সবক’টি বৃদ্ধাবাস মিলিয়ে প্রায় দেড়শো জন থাকেন। বিতর্কে জড়ানো বৃদ্ধাবাসটি ভাড়া নেওয়া ঘরে ২৫ বছর ধরে চলছিল। কর্মী তিন জন। এঁদেরই এক জন রাতে থাকেন। হরেকিশোরবাবুর সবক’টি বৃদ্ধাবাসের রান্না হয় একটিই জায়গায়। বৃদ্ধাবাসগুলিতে খাবার পৌঁছে দেন অরূপ হালদার নামে এক যুবক। অরূপ জানান, সোমবার রাতেও খাবার দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। রাতে ছিলেন সেখানকার কর্মী অষ্টমী দাস। অষ্টমী পুলিশকে বলেন, ‘‘মহিলা কখন বেরিয়ে ছিলেন, ঘুমের মধ্যে বুঝতে পারিনি। হয়তো তালা ভেঙে বেরিয়ে ছিলেন।’’

যে তালাটি পুলিশ উদ্ধার করেছে, তাতে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তাঁরা এ-ও জানতে পেরেছেন, সোমবারই নতুন তালাটি কিনে এনেছিলেন অরূপ। তদন্তকারীরা দেখেন, পুরনো তালার চাবিতেই খুলে যাচ্ছে সেটি। সব তালার জন্যে কি একটিই চাবি ইচ্ছে করে করানো হয়েছিল? ফরেন্সিকে পাঠানো হয়েছে তালাটি।

এ দিন গণধর্ষণের শিকার হওয়া ওই মহিলার মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। গত ৩০ অক্টোবর থেকে তিনি এই বৃদ্ধাবাসে থাকছিলেন। গত শনিবার হোমে মায়ের কাছে থাকতে আসেন মেয়ে। হোমের বিছানায় শুয়ে থাকা বৃদ্ধা নড়াচড়ার অবস্থায় নেই। খাইয়ে না দিলে তিনি খেতেও পারেন না। মেয়ের নাম করে এ দিন দুপুরে তিনি বলেন, ‘‘শুনলাম কোথায় একটা বেরিয়ে গিয়েছে। ভাল আছে তো?’’

নির্যাতিতার দিদি বৃদ্ধাবাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, ‘‘আমার বোন একটুতেই রেগে যেত। কোনও নিরাপত্তার ব্যবস্থা যে নেই, তা হোমের মালিক আগে কেন বলেননি?’’

লালবাজারের এক কর্তা বলছেন, ‘‘শহরের সব বৃদ্ধাবাসগুলি ধাপে ধাপে খোঁজ নেবে পুলিশ। বেআইনি কিছু দেখলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ সমাজকর্মী রত্নাবলী রায়ের প্রশ্ন, ‘‘মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে বৃদ্ধাবাসে রাখা হবে কেন? এর উত্তর কে দেবে?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Panchasayar Old Age Home Gang Rape
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy