দু’মাস আগেই পুরনো বাইকের বদলে নতুন মোটরবাইক কিনেছিলেন এমবিএ পড়ুয়া এক যুবক। সেটি নিয়েই গিয়েছিলেন পুরী। ফেরার পথে বাইক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল কলকাতার পর্ণশ্রী এলাকার বাসিন্দা ওই যুবকের। পরিজনেরা জানান, রবিবার রাতে ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে দুর্ঘটনা ঘটে। সোমবার সকালে জাতীয় সড়কের পাশের জলা থেকে উদ্ধার হয় ওই যুবকের দেহ।
পুলিশ সূত্রের খবর, মৃতের নাম সায়ন দাস (২৩)। তিনি এমবিএ পড়ছিলেন। গত শুক্রবার এক বন্ধুর সঙ্গে বাইক নিয়ে পুরী বেড়াতে যান। সায়ন ও তাঁর বন্ধু দু’টি আলাদা বাইক নিয়ে গিয়েছিলেন। পরিবার সূত্রের খবর, রবিবার সন্ধ্যার পরে তাঁরা পুরী থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন। এর পরে বালেশ্বরের কাছে দুর্ঘটনা ঘটে।
এ দিন পর্ণশ্রীর ঢালিপাড়া এলাকায় সায়নের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালে তাঁরা বাবা মারা যান। পর্ণশ্রীতে মায়ের সঙ্গে থাকতেন সায়ন। এমবিএ পাঠরত সায়ন কলেজ-সহ সর্বত্র বাইকেই যাতায়াত করতেন। সোমবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ পর্ণশ্রীর বাড়িতে খবর আসে যে, সায়নের দেহ ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে একটি জলা থেকে উদ্ধার হয়েছে। সেখানেই পাওয়া যায় বাইকটিকে। বালেশ্বরের হলদিপদ থানার পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে। এ দিন দুপুরে তাঁর মাকে নিয়ে পরিবারের সদস্যেরা বালেশ্বরের উদ্দেশে রওনা দেন।
সায়নের ভাই অরিন্দম জানান, সায়ন ও তাঁর বন্ধু গৌরব
নন্দী মিলে গত শুক্রবার পুরী গিয়েছিলেন। জগন্নাথ মন্দির দর্শন করে, নন্দনকানন দেখে তাঁদের কলকাতায় ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সায়নের বাইকের পিছনের চাকায় কিছু যান্ত্রিক গোলমাল দেখা দেওয়ায় তাঁরা নন্দনকাননের পরিকল্পনা বাতিল করেন। অরিন্দম বলেন,
‘‘যা শুনেছি, সবটাই সায়নের বন্ধুর মুখ থেকে। সে জানিয়েছে, জাতীয় সড়কে সায়ন তার পিছনে পিছনে আসছিল। বালেশ্বরে এক জায়গায় কয়েক কিলোমিটার চলে আসার পরে সায়নের বন্ধু খেয়াল করে যে, পিছনে সায়ন নেই। সে তখন সায়নের খোঁজ শুরু করে।’’
সায়নের সেই বন্ধু এ দিন ফের বালেশ্বর গিয়েছেন। সায়নের পরিবার জানায়, তাঁকে দেখতে না
পেয়ে গৌরব জাতীয় সড়কেই প্রথমে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরে পুলিশের সাহায্য নেন। হলদিপদ থানার পুলিশও রাতে দীর্ঘক্ষণ খুঁজেও সায়নের হদিস পায়নি। তখন গৌরব থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে এ দিন
ভোরে কলকাতা ফেরেন। পরে বেলার দিকে পর্ণশ্রীতে সায়নের দেহ
উদ্ধারের খবর আসে। রাতে বালেশ্বরের আগে দু’তিন বার তাঁরা বিশ্রামও নেন।
কিন্তু কী করে দুর্ঘটনা ঘটল, তা এখনও পরিষ্কার নয় পরিবারের কাছে। জলা থেকে যে ভাবে সায়নের দেহ এবং বাইকটি মিলেছে, তা দেখে
ধারণা করা হচ্ছে যে, কোনও গাড়ি পাশাপাশি চলার সময়ে ধাক্কা মেরে চলে গিয়েছে। দূর পাল্লায় বাইক নিয়ে যাতায়াতের জন্য উপযুক্ত পোশাকই পরেছিলেন সায়ন, মাথায় হেলমেটও ছিল। যদিও দেহ উদ্ধারের সময়ে ঝোপের মধ্যে থেকে
হেলমেটটি পাওয়া যায়। তাঁর ব্যাগটিও ছিটকে পড়েছিল জঙ্গলের মধ্যে। বাইকের পিছনের চাকার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সেটি দুর্ঘটনায়
পড়ল কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)