হাসপাতাল থেকে বাড়ির পথে এজাজ আহমেদ। নিজস্ব চিত্র
বছর পঁয়ষট্টির চিকিৎসক অমিয়ভূষণ সরকারের হৃৎপিণ্ড এখন কাজ করছে বছর তিরিশের এজাজ আহমেদের বুকে।
কোভিডের সময়ে চার দিকে যখন শুধুই দুঃসংবাদ, তার মধ্যেই অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মন ভাল করা খবর। অমিয়ভূষণবাবুর হৃৎপিণ্ড পেয়ে বিহারের দ্বারভাঙা জেলার এজাজ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে এখন সুস্থ আছেন। হাঁটাচলা শুরু করেছেন একটু একটু করে। হাওড়ার নারায়ণা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে এজাজের বুকে অমিয়ভূষণের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপিত হয় গত ২৭ এপ্রিল। গত শুক্রবার এজাজ হাসপাতাল থেকে ছাড়াও পেয়েছেন।
এই অঙ্গ প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার যাঁরা করলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন চিকিৎসক দেবাশিস দাস। দেবাশিসবাবু জানালেন, এজাজের হৃৎপিণ্ডের পেশি দুর্বল হতে হতে সেটির কর্মক্ষমতা ক্রমেই কমে আসছিল। তাই এজাজকে বাঁচাতে হলে হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন ছাড়া উপায় ছিল না। দেবাশিসবাবু বলেন, “এজাজের জন্য হৃৎপিণ্ডের খোঁজ করছিলাম আমরা। তখনই জানতে পারি, পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়ে অমিয়ভূষণ সরকার নামে এক চিকিৎসকের ব্রেন ডেথ হয়ে গিয়েছে। ওঁর পরিবার অঙ্গ দান করতে ইচ্ছুক। সেই মতো অমিয়ভূষণবাবুর হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপিত করা হয় এজাজের শরীরে। এখন এজাজ ভাল আছেন। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের এই সফল প্রক্রিয়ার জন্য আমাদের চিকিৎসকদের যে টিম ছিল, তাঁদের সকলকেই অভিনন্দন জানাই।”
অস্ত্রোপচারের ওই দলে ছিলেন চিকিৎসক রঙ্গন কোলে। তিনি বলেন, “এই কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে অঙ্গ প্রতিস্থাপন খুব সচেতনতার সঙ্গে করা হয়েছে। যাঁর শরীরে অঙ্গ প্রতিস্থাপন হল, সেই এজাজের কোভিড পরীক্ষা করানোর পাশাপাশি সব রকম সতর্কতাই নেওয়া হয়েছিল। হাসপাতাল থেকে এজাজ যে দিন ছাড়া পান, সে দিনই ওঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোভিড-বিধি কঠোর ভাবে মেনে চলতে হবে। কারণ, সবে অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়েছে। এখন কোনও ভাবে ওঁর কোভিড হয়ে গেলে জটিলতা তৈরি হবে।”
দ্বারভাঙার বাসিন্দা এজাজ একটি মসজিদের ইমাম। তাঁর দাদা নাসিম আহমেদ হাওড়ার বেলিলিয়াস রোডে থাকেন। আপাতত এজাজ দাদার কাছেই আছেন। নাসিম পেশায় ফল ব্যবসায়ী। তিনি বললেন, “ভাই নতুন জীবন পেল। তাই আমরা সবাই খুব খুশি। কিন্তু এই খুশির সময়েও করোনার জন্যই ওর পরিবারকে দ্বারভাঙা থেকে আসতে বারণ করেছি। এজাজকে এখন খুব সাবধানে থাকতে হবে।”
নাসিম মনে করেন, ভাইয়ের জীবন নতুন করে ফিরে পাওয়াটাই রমজানের এই পবিত্র মাসের সেরা উপহার। তাঁর কথায়, “বেলিলিয়াস রোড থেকে যে দিন আমার ভাই অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হল, সে দিন আমাদের চেনা-পরিচিতদের মধ্যে সব ধর্মের মানুষই ওর জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। সবার আশীর্বাদেই ও নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে। চিকিৎসক অমিয়ভূষণবাবুকে কখনও ভুলব না, যাঁর হৃৎপিণ্ড আমার ভাইয়ের বুকের মধ্যে ধুকপুক করছে।”
অমিয়ভূষণবাবুর ছেলে আরণ্যক সরকারও পেশায় চিকিৎসক। তিনি জানান, তাঁর বাবা পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক জেলা হাসপাতালে স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তমলুকেই গত ২২ এপ্রিল এক পথ দুর্ঘটনায় তিনি গুরুতর ভাবে জখম হন। তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। বাইপাস সংলগ্ন একটি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু অবস্থা ক্রমেই খারাপ হতে হতে তাঁর ব্রেন ডেথ হয়ে যায়। আরণ্যক বলেন, “আমরা বাড়ির সকলে মিলে ঠিক করি, বাবার অঙ্গদান করা হবে। মা এ ব্যাপারে বিশেষ উৎসাহী ছিলেন। জানতে পারি, এজাজ বলে এক যুবকের হৃৎপিণ্ডের প্রয়োজন।”
এজাজকে অবশ্য এখনও দেখেননি আরণ্যক। তবে তিনি যাতে দ্রুত সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পান, সেটাই চান আরণ্যক। কারণ, এজাজের মধ্যেই তো বেঁচে রয়েছেন তাঁর বাবা অমিয়ভূষণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy