Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

শিশুসাথী প্রকল্পে বন্ধ অস্ত্রোপচার, ভোগান্তি 

চলতি বছরের মে-জুনে প্রকল্পে যোগদানকারী সরকারি হাসপাতালের অ্যানাস্থেটিস্ট এবং পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়োলজিস্টদের নিয়ে একটি স্ক্রিনিং কমিটি তৈরি করেছে রাজ্য। অভিযোগ, এর পর থেকেই রোগী এবং তার পরিবারের হয়রানির একের পর এক ঘটনা ঘটছে।

ছবি সংগৃহীত।

ছবি সংগৃহীত।

জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৯ ০১:০৪
Share: Save:

হৃদ্‌যন্ত্রের জন্মগত ত্রুটির চিকিৎসায় বছর ছয়েক আগে রাজ্যে শুরু হয়েছিল শিশুসাথী প্রকল্প। সেই প্রকল্পে ধনী-দরিদ্র সব শিশুর নিখরচায় অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা। শুরুতে ওই প্রকল্পে যুক্ত ছিল একটি সরকারি এবং চারটি বেসরকারি হাসপাতাল। এই মুহূর্তে যুক্ত রয়েছে মোট তিনটি সরকারি ও সাতটি বেসরকারি হাসপাতাল। প্রথম থেকেই সরকারের নির্ধারিত অর্থে অস্ত্রোপচারের সিংহ ভাগ করত বেসরকারি হাসপাতালগুলি। সেই তথ্য মানছেন স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারাও। অথচ অভিযোগ উঠছে, বেসরকারি হাসপাতালগুলি চাইলেও মাস তিনেক ধরে শিশুসাথী প্রকল্পের অস্ত্রোপচার করতে পারছে না। হৃদ্‌রোগ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এর জেরে সদ্যোজাত শিশু কোলে হাসপাতালের দোরে দোরে ঠোক্কর খাচ্ছেন বাবা-মা। বেশ কিছু শিশুর দ্রুত চিকিৎসা না হওয়ায় তাদের প্রাণ সংশয়ের কারণ হয়েছে।

চলতি বছরের মে-জুনে প্রকল্পে যোগদানকারী সরকারি হাসপাতালের অ্যানাস্থেটিস্ট এবং পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়োলজিস্টদের নিয়ে একটি স্ক্রিনিং কমিটি তৈরি করেছে রাজ্য। অভিযোগ, এর পর থেকেই রোগী এবং তার পরিবারের হয়রানির একের পর এক ঘটনা ঘটছে। আগে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বা স্কুল থেকে অসুস্থ শিশুদের চিহ্নিত করতেন। এর পরেই তাদের কলকাতা বা দুর্গাপুরে চিকিৎসার জন্যে পাঠিয়ে দেওয়া হত। কিন্তু নতুন নিয়মে মূল চিকিৎসা শুরুর আগে রোগীর চিকিৎসার নথি পরীক্ষা করে তবেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসার নির্দেশ দেবে কমিটি। কার্ডিয়োথোরাসিক সার্জন কুণাল সরকারের কথায়, “সমস্যা এখানেই। হাসপাতালের বিপুল চাপ সামলে কমিটির সরকারি চিকিৎসকদের শিশুসাথীর রোগী দেখতে দেরি হচ্ছে। ফলে প্রতীক্ষা দীর্ঘতর হচ্ছে। হয়রানি বাড়ছে।”

সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, রাজ্যে প্রতি হাজার সদ্যোজাতের দশ জন হৃদ্‌রোগে ভোগে। ওদের বিনামূল্যে চিকিৎসায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৩ সালে এই প্রকল্পটির সূচনা করেন। প্রথমে অস্ত্রোপচার হত এসএসকেএমে। এখন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং এনআরএসে অস্ত্রোপচার হয়। শীঘ্রই আর জি করেও শুরু হবে। আর রয়েছে সাতটি বেসরকারি হাসপাতাল। স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা জানাচ্ছেন, গত বছর পর্যন্ত এই প্রকল্পে বছরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিশুর অস্ত্রোপচার হত। যার ৯০ শতাংশ অস্ত্রোপচারই করত বেসরকারি হাসপাতালগুলি। কিন্তু তিন মাস ধরে সেখানে অস্ত্রোপচার কার্যত বন্ধ। সম্প্রতি মালদহের এক দরিদ্র পরিবার সদ্যোজাতের চিকিৎসা করাতে এসে হয়রানির শিকার হয় বলে অভিযোগ। চিকিৎসকদের মতে, রোগী হয়রানির একাধিক অভিযোগে নষ্ট হচ্ছে প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

এই প্রকল্পের টাকা আসে কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন তহবিল থেকে। বর্তমানে কেন্দ্র ৬০ শতাংশ টাকা দেয়। বাকি টাকা দেয় রাজ্য। সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় বাল স্বাস্থ্য কার্যক্রম (আরবিএসকে) এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের মধ্যে দিল্লিতে বৈঠক হয়। সেখানেই রাজ্যকে এই প্রকল্পে স্ক্রিনিং কমিটি তৈরির পরামর্শ দেয় বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা। উদ্দেশ্য, সরকারি অর্থ খরচের উপরে নজরদারি চালিয়ে এবং জরুরি কেসগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে দুর্নীতি রোধ করা। কারণ অভিযোগ আসছিল, যে রোগীদের অস্ত্রোপচার জরুরি নয়, বেসরকারি হাসপাতাল বেশ কিছু ক্ষেত্রে তাদেরও অস্ত্রোপচার করছে।

কী ভাবে কাজ করার কথা কমিটির?

কোনও জেলা হাসপাতাল রোগীর বিবরণ ই-মেলে কমিটিকে পাঠাবে। কমিটি তা বিশ্লেষণ করে ওই হাসপাতালে মতামত জানাবে‌। ওষুধ দিয়ে জেলা হাসপাতালকে পর্যবেক্ষণে রাখতে বলতে পারে। সরকারি হাসপাতালে শিশুটিকে পাঠাতে নির্দেশ দিতে পারে। অথবা দ্রুত তাকে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠাতে বলবে।

পরিষেবার সমস্যার কথা মেনে নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘নতুন কমিটি দু’মাস কাজ করছে। রোগী ও ডাক্তার সকলের বুঝতে একটু সময় লাগছে।’’ অভ্যস্ত হয়ে গেলে সকলে লাভবান হবেন বলে তাঁর দাবি।

অন্য বিষয়গুলি:

Sishu Sathi Scheme Child Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy