নিজের হাতেই পরীক্ষা। নোয়াপাড়া কারশেডে মূলচাঁদ চহ্বাণ। — নিজস্ব চিত্র
কাউকে কিছুই জানাননি তিনি। আচমকাই নোয়াপাড়া কারশেডে হাজির হয়ে গেলেন জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মূলচাঁদ চহ্বাণ স্বয়ং। কারশেডে যাঁরা রেকগুলি দেখাশোনা করছেন, তাঁদের ডেকে জানতে চাইলেন কোন রেকের কী রোগ? কী ভাবে তার উপশম করা হচ্ছে। কর্মীদের উত্তর শুনতে শুনতে এক সময়ে নিজেই নেমে পড়লেন ওই কাজে। শুধু এক দিন নয়, মেট্রো কর্তারা জানিয়েছেন, এখন সময় পেলেই তিনি চলে যাচ্ছেন কারশেডে। কর্মীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছেন তিনি।
কিন্তু কেন জেনারেল ম্যানেজারের মতো শীর্ষ কর্তাও হাত লাগাচ্ছেন ওই কাজে?
আসলে চলতি মাস থেকেই কলকাতা মেট্রোয় দিনে তিনশো ট্রেন চালানোর কথা জানানো হয়েছিল। কিন্তু এখনও নতুন রেক হাতে না পাওয়ায় চিন্তায় ঘুম ছুটছিল মেট্রো কর্তাদের। আগাম ওই ঘোষণার কথা মাথায় রেখে শেষে সিদ্ধান্ত হয়, পুরনো রেকগুলি দিয়েই আপাতত মেট্রোর অতিরিক্ত পরিষেবা সামাল দেওয়া হবে। ঠিক হয়েছে, পুরনো রেকগুলির খোলনলচে পাল্টে বাতানুকূল রেকের সঙ্গে মিশিয়ে কাজে লাগানো হবে।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর এ রাজ্যে আসার কথা। সম্ভবত ওই সময়েই এই নতুন পরিষেবা উদ্বোধন করা হতে পারে বলে মেট্রো কর্তারা জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, জিএম চান না ওই পরিষেবা দিতে গিয়ে কোনও বিপত্তি ঘটুক। তাই তিনি নিজেই নেমেছেন ময়দানে। পেশায় ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ায় সারানোর কাজটি তিনি নিজেই তদারকি করছেন।
মেট্রো সূত্রের খবর, এ বছরের মাঝামাঝি আসার কথা ছিল মেট্রোর নতুন কয়েকটি রেক। কিন্তু সময়ে সেগুলি হাতে পাওয়া যায়নি। এখন মেট্রো কর্তারা জেনেছেন, চলতি বছরের শেষের আগে ওই রেকগুলি আসার সম্ভবনা প্রায় নেই বললেই চলে। তাঁরা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে আইসিএফ (ইন্ট্রিগ্যাল কোচ ফ্যাকট্রি) প্যারাম্বুর থেকে দু’টি নতুন রেক কলকাতায় আসতে আসতে আগামী বছর। কিন্তু যেহেতু অগস্ট মাস থেকেই কলকাতা মেট্রোর পরিষেবা বাড়ানোর কথা, তাই আপাতত পুরনো রেকগুলি ( যেগুলি এখন চলছে) সঙ্গে রাখা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই মেট্রো কর্তাদের কাছে।
ইতিমধ্যেই একটি রেক নতুন করে লাইনে নামানো হয়েছে। আরও তিন-চারটি পুরনো রেক শীঘ্রই নতুন ভাবে তৈরি হয়ে যাবে বলে দাবি করেছেন জনসংযোগ আধিকারিক। মেট্রো সূত্রের খবর, এখন ২৭টি রেক দিয়ে সারাদিনে মোট ২৭৪টি ট্রেন চালানো হচ্ছে কলকাতা মেট্রোয়। এর মধ্যে ১৪টি বাতানুকূল ও বাকি ১৩টি সাধারণ। ওই সাধারণ রেকগুলির বেশির ভাগই পুরনো। সেগুলিরই খোলনোলচে পাল্টানো হচ্ছে এখন।
মেট্রোর কর্তারা জানিয়েছেন, আপাতত ওই ২৭টি রেক দিয়েই বাড়তি পরিষেবা চালানো হবে। কেমন ভাবে? এখন যেমন নোয়াপাড়া থেকে টানা পরিষেবা চলানো হচ্ছে, তখন নোয়াপাড়া থেকে কবি সুভাষ ও নোয়াপাড়া থেকে মহানায়ক উত্তমকুমার পর্যন্ত ভাগ করে চালানো হবে। সময়ের ব্যবধান যা রয়েছে তাতে ওই ২৭টি রেক দিয়েই নতুন ওই পরিষেবা চালানো সম্ভব হবে বলে তাঁদের দাবি।
কিন্তু একেই পুরনো, তার উপরে বাড়তি চাপ। মাঝ পথে বিগড়ে যাবে না তো পুরনো রেকগুলি? মেট্রোর জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, জিএম কর্মীদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘পরিষেবা বাড়ানোর পাশাপাশি যাত্রীদের
সুরক্ষার উপরেও বিশেষ ভাবে নজর দিতে হবে।’
মেট্রো কর্তাদের একাংশ বলছেন, কথায় আছে, ‘পুরনো চাল ভাতে বাড়ে।’ কার্যক্ষেত্রে বোধহয় তাই হচ্ছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy