Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
dengue death

ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে এসে ডেঙ্গিতে মৃত্যু বাংলাদেশি প্রৌঢ়ার

পরিজনেরা জানাচ্ছেন, কয়েক মাস আগে মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডে টিউমার ধরা পড়ে শিপ্রার। তার চিকিৎসা করাতে তিনি কলকাতায় এসেছিলেন। পরীক্ষায় দেখা যায়, প্রৌঢ়া ক্যানসারে আক্রান্ত।

শিপ্রা দাস।

শিপ্রা দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২২ ০৭:০২
Share: Save:

ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় এসেছিলেন ৫৮ বছরের প্রৌঢ়া। চিকিৎসা করিয়ে গত ৩০ অক্টোবর বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে দিন থেকেই তীব্র জ্বর আসে। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ায় প্রৌঢ়াকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। বুধবার সকালে সেখানেই তিনি মারা যান। ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসাবে ডেঙ্গি হেমারেজিক ফিভারের উল্লেখ রয়েছে।

বাংলাদেশের নড়াইল জেলার বাসিন্দা ওই প্রৌঢ়ার নাম শিপ্রা দাস। গত দু’মাস ধরে তিনি ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার সাজিরহাটে একআত্মীয়ের বাড়িতে। সেখানে থেকেই ঢাকুরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ক্যানসারের চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। পরিজনেরা জানাচ্ছেন, কয়েক মাস আগে মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডে টিউমার ধরা পড়ে শিপ্রার। তার চিকিৎসা করাতে তিনি কলকাতায় এসেছিলেন। পরীক্ষায় দেখা যায়, প্রৌঢ়া ক্যানসারে আক্রান্ত। সেই মতো চিকিৎসা শুরু হয়। শিপ্রার ভাইপো দীপ দাস বলেন, “৩০ অক্টোবর ফেরার জন্য উড়ানের টিকিট করা ছিল পিসিদের। কিন্তু সে দিন সকাল থেকে পিসির ধুম জ্বর আসে। ডেঙ্গি পরীক্ষা করালে রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। প্লেটলেট ৪৫ হাজারে নেমে গিয়েছিল।’’ এর পরে ঢাকুরিয়ার ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শিপ্রাকে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার ফলে তাঁরক্যানসারের সমস্যা আরও মারাত্মক রকম বাড়াবাড়ি হয়েছিল। তাতেই বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে তিনি মারা যান। একটা রোগের জন্য চিকিৎসা করাতে অন্য দেশে এসে, অন্য রোগে আক্রান্ত হয়ে সেখানে মৃত্যু হওয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করছেন সকলে। দীপ জানাচ্ছেন, আজ বৃহস্পতিবার সড়কপথে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে শিপ্রার দেহ।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, রাজ্যে ডেঙ্গি সংক্রমিতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। এ-ও দেখা যাচ্ছে, কলকাতা সহ অন্যান্য জেলাতেও বিশেষ কয়েকটি এলাকায়সংক্রমণ বাড়ছে। যেমন, কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রের খবর, দক্ষিণ কলকাতার কসবা-সহ ইএম বাইপাস সংলগ্ন ওয়ার্ডগুলিতে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে চলেছে। পুরসভা ওই এলাকাগুলি বাড়তি নজরদারিতে রাখছে। পুর স্বাস্থ্য বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ওই এলাকাগুলি আমরা বাড়তি নজরে রাখছি। কোনও বাড়িতে জল জমে আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে স্বাস্থ্যকর্মী-সহ পুরসভার দল। যেখানে পৌঁছনো যাচ্ছে না, সেখানে ড্রোন উড়িয়ে মশার লার্ভা আছে কি না দেখা হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি নোটিস পাঠানো হচ্ছে। তবুও সংক্রমণ বাড়ার পিছনে এক শ্রেণির মানুষেরউদাসীনতা দায়ী।’’

পুর স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রের খবর, ১২ নম্বর বরো এলাকার ১০১, ১০৫, ১০৬, ১০৭ ও ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। একই চিত্র ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের নিউ ফুলবাগান, ফুলবাগান, পূর্ব ফুলবাগান, রবীন্দ্রপল্লি, ১০৫ নম্বর ওয়ার্ডের শহিদনগর, সুচেতানগর, গড়ফা, বৈদ্যপাড়া, ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচল, উত্তর পূর্বাচল, কায়স্থপাড়া, ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের রাজডাঙা, ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের শহিদ স্মৃতি কলোনি ইত্যাদি এলাকায়। এগারো নম্বর বরো এলাকার বাঁশদ্রোণীর বিস্তীর্ণ অংশে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। ওই বরোর ১১২, ১১৩ ও ১১৪— এই তিন ওয়ার্ড চিন্তার কারণ। ১১৩ ও ১১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ইতিমধ্যেইদু’জন করে ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছেন। আবার ১৩ নম্বর বরো এলাকার ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ব্যানার্জিপাড়া, ১১৭ নম্বর ওয়ার্ডের এস এন রায় রোড, ১১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ব্রজেন মুখার্জি রোড, এস এন চ্যাটার্জি রোড, রায়বাহাদুর রোড এলাকা পুরসভাকে ভাবাচ্ছে। পুর স্বাস্থ্য বিভাগের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘গোটা নভেম্বর মাস আমরা সকলকে সতর্ক থাকতে আবেদন করছি। যে হারে ডেঙ্গি বাড়ছে, তাতে এখনই কমার কোনও লক্ষণ নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

dengue death Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy