একটি মৃত্যুই সতর্ক করেছে ওদের। জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়ার পরেই এ বার যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব উত্তর দমদম পুরসভা এলাকায়।
৩৪টি ওয়ার্ডের পুরসভা উত্তর দমদম। জনসংখ্যা তিন লক্ষেরও বেশি। ডেঙ্গির আঁচ গত বছর লেগেছিল উত্তর দমদমের গায়ে। প্রাণ কেড়েছিল ১১ নম্বর ওয়ার্ডের রিনা চক্রবর্তীর। জ্বর হওয়ার পরে দিন সাতেক রক্ত পরীক্ষাই হয়নি তাঁর, দাবি পুর কর্তৃপক্ষের। ডেঙ্গির জীবাণু মেলার পরে তাঁকে আর বাঁচানোর সময় পাননি চিকিৎসকেরা। পুরসভার খতিয়ান অনুযায়ী, ২০১৬-এ জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮৪০। যার মধ্যে ১২৩ জনেরই ডেঙ্গি হয়েছিল।
গত বছর ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিশরপাড়া, ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁকড়া নবনগর, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সারদাপল্লি, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতাপগড়, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের মহানগর ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গানগর বাজার এলাকায় ছড়িয়েছিল ডেঙ্গি। এ বছরও এই সব এলাকায় জ্বর ছড়াচ্ছে। এই মরসুমে উত্তর দমদমে জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৬২৫। আক্রান্তের সংখ্যা তুলনায় বেশি প্রতাপগড়ে। পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) মহুয়া শীল জানাচ্ছেন, ‘‘আমরা বসে নেই। ৮০ জন কর্মী নিয়ে তৈরি করেছি র্যাপিড অ্যাকশন টিম (র্যাট)। তার কর্মীরা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে মাইকে প্রচারই করছেন না, বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে জমে থাকা জলও ফেলে দিচ্ছেন।’’
মানুষকে অতিরিক্ত সচেতন করার মাধ্যমেই পরিকাঠামোয় ঘাটতির মোকাবিলা করতে চাইছে উত্তর দমদম। ডেঙ্গি কী এবং কী ভাবে এই রোগ ছড়ায়, এলাকার ৮৬টি সরকারি এবং ৩৫টি বেসরকারি স্কুলে গিয়ে পড়ুয়াদের তার পাঠও দেওয়া হয়েছে। অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। বহুতলের বাসিন্দাদের সঙ্গে বৈঠক চলেছে বছরভর। নিয়ম করে মশা মারার তেল আর ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হয়েছে পুরসভার ৫৮টি রাস্তার ধারে, বাড়িগুলির আশপাশে। আবাসনগুলিতে গিয়ে জমা জল পরিষ্কার করানো হয়েছে। বুধবারই প্রতাপগড়ে একটি বাতিল টায়ার কেনা-বেচার দোকানে জোর করে ঢুকে টায়ারের মধ্যে জমে থাকা জল ফেলেছেন পুরকর্মীরা। এত সবেও মানুষ পুরোপুরি সচেতন নয় বলে আক্ষেপ পুর-কর্তৃপক্ষের।
আশপাশের অন্য পুরসভার মতো পতঙ্গবিদ নেই উত্তর দমদমেও। কিন্তু পতঙ্গবিদদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডেঙ্গির লার্ভা চেনাতে র্যাট-এর কর্মীদের ক্লাস করানোর ব্যবস্থা করেছে পুরসভা। বিশেষ দল ছাড়াও কোথাও ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া ধরা পড়লে বা কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলে পুরসভা ৮৩৩৪৯৩৭৬০৭ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলেছে নাগরিকদের। পুর হাসপাতালে এখনও জ্বরে আক্রান্ত সাত জনের রক্ত পরীক্ষা হয়েছে। এলাকার ৭টি পরীক্ষাগারে ৫৩ জন রক্ত পরীক্ষা করিয়েছেন। কিন্তু কেউ ডেঙ্গি আক্রান্ত বলে খবর মেলেনি।
মহুয়াদেবী বলেন, ‘‘পুরসভার হাসপাতাল ও পাঁচটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়াও বেসরকারি নার্সিংহোম এবং প্যাথোলজি পরীক্ষাগারগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, জ্বরে আক্রান্ত কেউ চিকিৎসা ও পরীক্ষার জন্য এলে যেন আমাদের জানানো হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy