Advertisement
০৪ অক্টোবর ২০২৪

রাজনীতি নয়, রাহুল শুধু আহতদের পাশে

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, উড়ালপুল ভাঙা নিয়ে তিনি রাজনীতি হতে দেবেন না। কিন্তু পোস্তায় দুর্ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে তিনি নিজেই বাম আমলের উপর দোষ চাপিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন।দুর্ঘটনার দু’দিন পরে শনিবার রাজনীতির টানেই এ রাজ্যে ভোট-প্রচারে এসে কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী প্রথমেই গিয়েছেন পোস্তায়। তবে তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, দুর্ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করতে আসেননি। হাসপাতালে আহতদের সঙ্গে দেখা করে তিনি বলেন, ‘‘খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। তবে রাজনীতির কথা বলতে আসিনি। হাসপাতালে আহতদের দেখতে এসেছি। ওঁদের পাশে দাঁড়াতে এসেছি।’’

দুর্ঘটনাস্থলে রাহুল গাঁধী। রয়েছেন অধীর চৌধুরী ও দীপা দাশমুন্সিও। শনিবার বিবেকানন্দ রোডে রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।

দুর্ঘটনাস্থলে রাহুল গাঁধী। রয়েছেন অধীর চৌধুরী ও দীপা দাশমুন্সিও। শনিবার বিবেকানন্দ রোডে রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:০৭
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, উড়ালপুল ভাঙা নিয়ে তিনি রাজনীতি হতে দেবেন না। কিন্তু পোস্তায় দুর্ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে তিনি নিজেই বাম আমলের উপর দোষ চাপিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন।

দুর্ঘটনার দু’দিন পরে শনিবার রাজনীতির টানেই এ রাজ্যে ভোট-প্রচারে এসে কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী প্রথমেই গিয়েছেন পোস্তায়। তবে তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, দুর্ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করতে আসেননি। হাসপাতালে আহতদের সঙ্গে দেখা করে তিনি বলেন, ‘‘খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। তবে রাজনীতির কথা বলতে আসিনি। হাসপাতালে আহতদের দেখতে এসেছি। ওঁদের পাশে দাঁড়াতে এসেছি।’’

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে মেডিক্যাল কলেজের ক্যাজুয়ালটি বিল্ডিংয়ের এক এবং তিনতলায় গিয়ে রাহুল আত্মীয়ের মতোই খোঁজ নিলেন আহতদের। তখন বেলা প্রায় ১১টা। সার্জারি বিভাগে আহত শেখ ফারুক মোর্তাজার সঙ্গে আলাপ করাচ্ছিলেন চিকিৎসক। ভিভিআইপি রাহুল বললেন, ‘‘নমস্তে ভাইসাব! ক্যায়সে হ্যায় আপ?’’ নাকে অক্সিজেন মাস্ক। মাথা থেকে চোয়াল ঢাকা পুরু ব্যান্ডেজে। শুধু চোখ দু’টো অক্ষত। বাঁ হাতে স্যালাইন চ্যানেল। ডান হাতেও ব্যান্ডেজ। তা-ও দু’টো হাত কাছে এনে নমস্কার করার চেষ্টা করলেন এক বার। সামনে দাঁড়ানো সাদা পাঞ্জাবি, নীল জিন্‌স, স্নিকার্সের প্রশ্নকর্তা তাঁর হাত ধরতেই কোনও মতে বললেন, ‘‘বেঁচে আছি।’’

মাথায় আঘাত লেগেছে ফারুকের। কী ঘটেছিল সে দিন, ফারুকের কাছেই জানতে চাইলেন রাহুল। জড়ানো গলায় উত্তর এল, ‘‘গাড়িতে ছিলাম। হঠাৎই গাড়ির উপর কী সব ভেঙে পড়ল। মাথায় লেগেছিল। আর মনে নেই।’’ পেশায় লরির খালাসি ফারুক বলছিলেন, ‘‘পাশেই ছিলেন চালক। উনি নেই। আমি কী করে যে বাঁচলাম!’’ সেরে উঠতে আরও কিছুটা সময় লাগবে শুনে রাহুল আবার হাত ধরে

বললেন, ‘‘আপ ঠিক হো যাওগে।’’ আলাপ করলেন অরুণকুমার দত্তের সঙ্গে। পেশায় সিগারেট বিক্রেতা অরুণবাবুর বাঁ হাত ও মাথার পিছনে আঘাত। রাহুলকে তিনি বলছিলেন, ‘‘রোজই সাইকেলে করে ওখান দিয়ে যাই। দোকানে দোকানে সিগারেট বিক্রি করি। ওই দিন যে কী হল!’’ রাহুল তাঁকে বললেন, ‘‘সাইকেলটা তো আর নেই নিশ্চয়ই!’’ রুজির একমাত্র সম্বল হারানোর যন্ত্রণা ফুটে উঠল অরুণবাবুর চোখে।

হাসপাতালের সুপার শিখা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্যান্য কর্তাদের কাছে আহতদের চিকিৎসা ঠিক ভাবে করার অনুরোধ করতে করতেই রাহুল ঢুকলেন হেড সার্জারি বিভাগে। সেখানে আহত কচি দাস, উমেশ লালের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিলেন। তবে আহত একজন ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি থাকায় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারেননি রাহুল।

বারান্দার মেঝেতে শোয়া রোগীদের পাশ দিয়েই হেঁটে রাহুল যান ফিমেল মেডিসিনে। ঢুকতেই কিশোরীকে দেখে তাঁর জিজ্ঞাসা, ‘‘কী হয়েছে?’’ অস্ফুটে কিশোরীর জবাব, ‘‘অ্যাপেনডিসাইটিস।’’ উত্তরটা শুনে একটু দূরেই দেখা করেন সরিতাদেবীর সঙ্গে। মাথা থেকে চোখ অবধি ব্যান্ডেজে মোড়া সরিতাদেবী রাহুলকে জানান, ‘‘এখনও মাথায় খুব ব্যথা। মাথা ঘুরছে ঘনঘন।’’ সে দিন সব্জি কিনে বাড়ি ফেরার পথেই তিনি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। পাশে দাঁড়ানো তাঁর স্বামী পরমাত্মা যাদবের পিঠে হাত রেখে চিকিৎসকদের উপর ভরসা রাখতে অনুরোধ করেন রাহুল। চিকিৎসকদের সঙ্গে একটু কথা বলেই সরিতাদেবীকে আশ্বস্ত করেন, ‘‘ঘাবড়াও মৎ। জলদি তুমহারা ছুট্টি হো যায়েগা।’’

রাহুল হাসপাতালে যাওয়ায় রোগীদের ভোগান্তির অভিযোগও উঠেছে। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডগুলি সাফ-সুতরো হলেও সার্জারি, অর্থোপেডিক ও নিউরোলজি বিভাগে ভর্তি রোগীদের সকাল থেকে কোনও ডাক্তারই দেখেননি বলে অভিযোগ। কয়েক জন রোগীর পরিবারের অভিযোগ, নার্সরা সময়মতো অনেককে ওষুধ-ইঞ্জেকশনও দেননি। সকাল থেকে ওয়ার্ডে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় বাড়ি থেকে আসা খাবারও রোগীদের অনেকেই পাননি। হাসপাতালের কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, ‘‘ভিভিআইপি এলে এমন হবেই।’’

অধীর এবং এআইসিসি-র এ রাজ্যের পর্যবেক্ষক সি পি জোশীকে নিয়ে পোস্তায় যান রাহুল। সেখানে উদ্ধারকারীদের কাছে তিনি খোঁজ নেন, এখনও কেউ ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়েছে রয়েছে কি না, ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে রাস্তা স্বাভাবিক করতে আরও কত দিন সময় লাগবে। এরপরেই রাহুল মেডিক্যাল কলেজের দিকে রওনা দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE