৮২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী ফিরহাদ হাকিম। নিজস্ব চিত্র।
নির্ঘণ্ট ঘোষণার পরে ‘ভোট পুজো’র প্রথম রবিবার। বিরোধীকে টেক্কা মেরে এগিয়ে যেতে তাই ছুটির দিন হাতছাড়া করতে রাজি নন কোনও দলেরই প্রার্থী। পায়ে পায়ে তাঁরা ছুটলেন সকাল থেকে দুপুর। কিছুটা বিশ্রাম। বিকেলে ফের প্রচার। জমজমাট গোটা দিন। প্রচারে বেরিয়ে কোনও প্রার্থীকে দেখা গেল বাইক চালাতে, কেউ আবার নেমে পড়লেন মাঠে। কম সংখ্যক হলেও কোনও প্রার্থী জোর দিলেন বাড়িমুখী প্রচারে। তবে করোনা-বিধি মানার ক্ষেত্রে প্রার্থীদের গা-ছাড়া মনোভাব আসন্ন ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় রাখছে সচেতন নাগরিককে।
সবে শহরে শীতের আমেজ নেমেছে। নভেম্বরের শেষে তাপমাত্রা কমলেও কলকাতা পুরসভার ভোট ঘোষণা হতে উত্তাপের পারদ চড়ছে। বিজেপি ছাড়া বাকি তিন রাজনৈতিক দল ধাপে ধাপে তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করছে। ফলে ময়দান যতই চেনা হোক, গা এলিয়ে সময় নষ্ট করতে রাজি নন কোনও প্রার্থী। এ দিন সকালে নিজের পাড়ায় প্রচার সারলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের সদস্যা কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্পর্কে তিনি মমতার নিজের ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী। ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে শাসকদলের প্রতীকে লড়ছেন কাজরী। সকাল ১০টা থেকেই কালীঘাট রোডের পটুয়া পাড়ায় দলীয় কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রচারে বেরোন প্রার্থী। বাড়ির সামনে আসতেই ‘টুকুলদি’ (কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকনাম) ডাকে জড়িয়ে ধরার মানুষও কিছু কম ছিলেন না। কাজরী বললেন, ‘‘এই পাড়ায় বড় হয়েছি। ভোট চাইতে নয়, সবার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।’’ মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যা হওয়ায় বাড়তি সুবিধা প্রসঙ্গে একটু থেমে কাজরী বলেন, ‘‘দিদির আশীর্বাদ সঙ্গে রয়েছে, এটাই সব থেকে বড় পাওনা।’’ জিতলে আদিগঙ্গার কয়েকটি ঘাট সংস্কারের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানালেন প্রার্থী।
সকাল থেকেই ঘর থেকে দু’পা ফেলে নিজের মহল্লা, চেতলায় প্রচার সারেন ৮২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এলাকার বাড়িতে ঢুকে হাত মেলাতে, কখনও প্রণাম করতেও দেখা যায় প্রার্থীকে। হঠাৎ একটি মোটরবাইক দেখে কিছু ক্ষণ নিজেই সেটি চালাতে
থাকেন। দলীয় কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি প্রার্থীর সঙ্গে পা মিলিয়েছিলেন এ দিন তাঁর মেয়েও। ফিরহাদ বলেন, ‘‘এই ওয়ার্ডের মানুষেরা কখনও আমাকে ফেরাননি। জেতার ব্যবধান বাড়ানোই লক্ষ্য।’’ সকালে কাঁকুড়গাছি এলাকায় প্রচারে বেরোন ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী পরেশ পাল। হাল্কা শীত গায়ে মেখে র্যাকেট হাতে প্রার্থী খানিক গা ঘামিয়েও নিলেন। তবে তাঁর প্রচারে দলীয় কর্মীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বিকেলে প্রচারের পাশাপাশি কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করতে দেখা যায় তাঁকে। প্রার্থীর কথায়, ‘‘এলাকার বাসিন্দা আমি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের সমস্যা জানার চেষ্টা করছি।’’
এ দিন প্রচারে নেমেছিলেন কংগ্রেসের দুই ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী প্রকাশ উপাধ্যায় ও সন্তোষ পাঠক। বি বা দী বাগ এলাকায় প্রচারে বেরোন সন্তোষ। অলিগলিতে ঢুকে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। শেষে চায়ের দোকানে বসে কর্মীদের নিয়ে আড্ডায় পার করলেন প্রথম রবিবার। আর অন্য প্রার্থী প্রকাশ, সকাল থেকে বাগমারি এলাকায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রচার সারেন। প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছনোই তাঁর লক্ষ্য বলে জানালেনও। এ দিন প্রচারে বেরোতে দেখা গিয়েছে বাম প্রার্থীদেরও। তবে তাঁরা ছোট মিছিল করে বাড়ি বাড়ি প্রচারেই জোর দিচ্ছিলেন। প্রচারের ফাঁকে নিজেই রং-তুলি নিয়ে দেওয়াল লিখতে বসে পড়েন ১২০ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী গৌতম অধিকারী।
তবে জমজমাট ভোট প্রচারের ছবি দেখে আতঙ্কের ছায়া প্রত্যক্ষ করছেন অনেকেই। কোভিড বিধিভঙ্গের যে ছবিতে সপার্ষদ প্রার্থীও ছিলেন মাস্ক ছাড়া। বিধানসভা ভোটে এই বেপরোয়া মনোভাবের খেসারত দিতে হয়েছিল রাজ্যবাসীকে। পুর ভোটের পর কী হবে? শহরবাসীর একটি অংশের আবেদন, ভয়ানক চরিত্রের ‘ওমিক্রন’-এর (করোনাভাইরাসের নতুন প্রজাতি) পদধ্বনি প্রচারে যেন মিলিয়ে না যায়। নয়তো লাল বাড়ি বিপর্যয়ের কারণ হয়ে থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy