বাঁ দিক থেকে দেবাঞ্জন, বিশাল এবং প্রিন্স। ফাইল চিত্র।
মূল অভিযুক্ত প্রিন্স সিংহ গ্রেফতার হওয়ার পরও রহস্যের জট খুলছে না নিমতায় ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়া দেবাঞ্জন দাসের মৃত্যু রহস্যের। পুলিশের দাবি, প্রিন্স জেরায় স্বীকার করেছে যে সে নিজেই গুলি করেছিল দেবাঞ্জনকে।
যদি তা হয়, তবে প্রিন্সের বয়ানের সঙ্গে মিলছে না ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়না তদন্তে দেবাঞ্জনের দেহে দু’টি গুলির ক্ষত পাওয়া গিয়েছে। বাঁ দিকে গলা এবং ঘাড়ের মাঝে একটি ক্ষত। অন্যটি ডান হাতের কনুইয়ের কাছে।
অন্যদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেরায় প্রিন্স দাবি করেছে, সে তার বন্ধু বিশাল মারুকে সঙ্গে নিয়ে স্কুটারে দেবাঞ্জনের গাড়ি অনুসরণ করে। এর পর দেবাঞ্জন তার বান্ধবীকে নিমতা সর্দার পাড়ার বাড়িতে নামিয়ে নিজের বাড়ির দিকে এগনোর সময় রাস্তা আটকায় প্রিন্স। সেখানে তাদের বচসা হয়। ওই সময় গাড়ির চালকের আসনে বসা দেবাঞ্জন চালকের আসনের পাশের জানলা নামায়। সেখান দিয়ে খুব কাছ থেকে গুলি চালায় প্রিন্স।
ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ এবং তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, যদি তাই হয়, তবে দেবাঞ্জনের ডান দিক ছিল গাড়ির জানলার দিকে। সেখান থেকে প্রিন্সের পক্ষে দেবাঞ্জনের বাঁ দিকে গুলি করা কার্যত অসম্ভব।
আরও পড়ুন: ভারতীয় সেনার বড় প্রত্যাঘাত, অধিকৃত কাশ্মীরে বেশ কয়েকটি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস, হতাহত অনেক
আরও পড়ুন: এক রাতে নাইটক্লাবে উড়িয়েছেন ৮ কোটি! কমল নাথের ভাইপোর বিরুদ্ধে চার্জশিট ইডির
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই ক্ষত তখনই সম্ভব যখন গাড়ির পিছনের আসনে গাড়ির বাঁ দিকে বসে কেউ দেবাঞ্জনকে লক্ষ্য করে গুলি চালাবে। অথচ, পুলিশের দাবি, বিশাল বা প্রিন্স কেউ গাড়িতে ওঠেনি বলে জানিয়েছে। আর সেখানেই পুলিশের সন্দেহ যে বিশাল বা প্রিন্স কোনও তথ্য গোপন করার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ মনে করিয়ে দিয়েছেন, যদি পিছনের আসনে বসা কেউ বাঁদিক থেকে গুলি চালায় তবে বুলেট হেড বা বুলেটের অংশটি দেবাঞ্জনের দেহ ফুঁড়ে বেরিয়ে তার দিকে অর্থাৎ চালকের আসনের আশে পাশে পড়ত। অথচ গুলির অংশটি পাওয়া যায় সামনের বাঁদিকের আসনের সামনে পা রাখার জায়গায়। তদন্তকারীদের অন্য একটি অংশ অবশ্য এর মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা দেখছেন না। তাঁদের মতে, গুলির পর গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ল্যাম্প পোস্ট এবং পাঁচিলে ধাক্কা মারে। সেই সময় বুলেটের অংশটির স্থান পরিবর্তন হতেই পারে।
তদন্তকারীদের একাংশের সন্দেহ, হয় তৃতীয় কোনও ব্যক্তি ছিল ঘটনাস্থলে অথবা প্রিন্স বা বিশালের মধ্যে কেউ একজন গাড়িতে ছিল। এখন পর্যন্ত বিশাল গোটা ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী। পুলিশের সন্দেহ, বিশালও বেশ কিছু তথ্য গোপন করছে। তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, কিছু জায়গায় দেবাঞ্জনের বান্ধবীরও বয়ানে কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। তদন্তকারীদের একাংশ ইঙ্গিত দেন, ওই রাতে দেবাঞ্জনের বান্ধবী সল্টলেকের পানশালা থেকে বেরনোর পর রাত ১টা৩৮ মিনিট থেকে ক্রমাগত একটি সোশ্যাল সাইটে ভিডিয়ো আপলোড করে গিয়েছেন। ওই ঘটনার সঙ্গে এর কোনও যোগাযোগ আছে কি না, তা-ও দেখছেন গোয়েন্দারা। সেই সঙ্গে দেখা হচ্ছে কার কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র পেয়েছিল প্রিন্স। সেই ব্যক্তি ঘটনার সময় কোথায় ছিল?
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ইঙ্গিত দিয়েছে এক রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছে। ৭ মিলিমিটার বোরের গুলি চালানো হয়েছে কোনও দেশি সিঙ্গল শটার পিস্তল থেকে। তদন্তকারীরা মনে করছেন খুনের অস্ত্র এবং তার মালিককে পাওয়া গেলে রহস্যের জট আরও খানিকটা কাটবে। তবে তাঁরাও স্বীকার করছেন, এখনও অনেক অমীমাংসিত প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে এই হত্যাকাণ্ড ঘিরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy