নিষিদ্ধ হলেও শহরের ভিতরেই একাধিক খাটাল রমরমিয়ে চলার অভিযোগ বার বারই উঠেছে। এ বার আদিগঙ্গার দূষণ ঠেকাতে সেই খাটাল সরানোর দাওয়াই দিল জাতীয় পরিবেশ আদালত তথা ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। শুক্রবার ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি প্রতাপ রায় ও বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, আদিগঙ্গার তীর থেকে অবিলম্বে খাটাল, শুয়োরের খামার এবং খাটা পায়খানা সরাতে হবে। বস্তি উচ্ছেদ না করা হলেও বস্তিবাসীদের জন্য অস্থায়ী শৌচাগারের ব্যবস্থা করতেও বলা হয়েছে।
কালীঘাট মন্দির সংলগ্ন দূষণ নিয়ে মামলা দায়ের করেছেন এক আইনজীবী। সেই মামলায় আদিগঙ্গার দূষণকে জুড়ে দিয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। সেই মামলায় উঠে আসে, আদিগঙ্গার দু’পাশে খাটাল এবং বেআইনি বস্তি রয়েছে। দক্ষিণ শহরতলির বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে অপরিশোধিত নিকাশি সরাসরি আদিগঙ্গায় এসে পড়ছে। এই সব দেখে কলকাতা পুরসভাকে দূষণ ঠেকানোর পরিকল্পনা জমা দিতে বলেছিল আদালত। পাশাপাশি রাজ্য দূষণে নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে আদিগঙ্গা সংলগ্ন কারখানা ও হোটেলের নিকাশি ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার নির্দেশও দিয়েছিল ডিভিশন বেঞ্চ।
এ দিন পর্ষদের আইনজীবী অর্পিতা চৌধুরী একটি রিপোর্ট আদালতে জমা দেন। তাতে ওই এলাকার সব কলকারখানার তালিকা রয়েছে। একটি পাঁচতারা হোটেলের নিকাশি ব্যবস্থা পরিদর্শনের কথাও জানানো হয়েছে। পর্ষদ সূত্রের খবর, কারখানা এবং হোটেলে নিকাশি পরিশোধন ব্যবস্থা রয়েছে। তবে আলিপুরের দু’টি সরকারি আবাসন থেকে অপরিশোধিত নিকাশি আদিগঙ্গায় মিশতে দেখেছেন পর্ষদকর্তারা। কিন্তু কলকাতা পুরসভা এখনও দূষণ ঠেকানো নিয়ে কোনও পরিকল্পনা জমা দিতে পারেনি। পুরসভার একটি সূত্রের দাবি, নিকাশি ব্যবস্থা বদল এবং বস্তি উচ্ছেদ করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা এবং সামাজিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। সে কথা মাথায় রেখেই ধীরেসুস্থে পদক্ষেপ করতে চাইছেন পুরকর্তারা। উচ্ছেদের সমস্যার কথা এ দিন মেনে নিলেও আদালতের পর্যবেক্ষণ, খাটাল, খামার কিংবা খাটা পায়খানা উচ্ছেদ করতে হবে।
পরিবেশবিদেরা বলছেন, কোনও জলাশয়ে দূষণের মাত্রা কতটা, তা মাপা হয় জলে ফিক্যাল কলিফর্ম নামে একটি ব্যাক্টেরিয়ার পরিমাণ দিয়ে। কোনও জলাশয়ের জলে এই ব্যাক্টেরিয়ার পরিমাণ যত বেশি থাকবে, তত বেশি দূষণ হবে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক বিজ্ঞানী জানান, প্রতি ১০০ মিলিলিটার জলে ফিক্যাল কলিফর্মের সর্বোচ্চ স্বাভাবিক মাত্রা ২৫০০। আদিগঙ্গার জলে এই ব্যাক্টেরিয়ার ন্যূনতম সংখ্যা প্রতি ১০০ মিলিলিটারে ২০ লক্ষ। পরিবেশবিদদের একটি বড় অংশের মতে, ফিক্যাল কলিফর্মের অন্যতম বড় উৎস মানুষ ও গবাদি পশুর মল। আদিগঙ্গার ক্ষেত্রে খাটা পায়খানা এবং খাটাল-খামারের পশুদের মল জলে মিশেই দূষণ ছড়াচ্ছে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদদের অনেকে। এই মামলায় পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তকে আদালতবান্ধব হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। সুভাষবাবু আদিগঙ্গা পরিদর্শন করে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন, তাতেও একই কথা জানানো হয়েছিল।
পরিবেশকর্মীদের অনেকে বলছেন, আদিগঙ্গার জল মারাত্মক দূষিত হওয়ায় তা প্রভাব ফেলছে গঙ্গার উপরেও। কারণ, জোয়ার-ভাটার সময় আদিগঙ্গার জল গঙ্গায় মেশে। তার ফলে গঙ্গাতেও দূষণের পরিমাণ বাড়ে। ‘‘এ রাজ্যে গঙ্গাদূষণের মাত্রা এমনিতেই বেশি। আদিগঙ্গার দূষণে লাগাম না টানলে গঙ্গার দূষণ ঠেকানো মুশকিল হবে’’, বলছেন এক পরিবেশকর্মী। পরিবেশ আদালতের এই রায় কত দিনের মধ্যে মানবে কলকাতা পুরসভা?
মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল) দেবব্রত মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘আদালতের নির্দেশের প্রতিলিপি হাতে না পেয়ে এ ব্যাপারে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy