কে বলে দশমীতে পুজো শেষ! বরং দেবী বিদায় নেওয়ার আগেই ফের উৎসব কাপের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে শহরে!
অষ্টমীর রাতেই হরিদেবপুরের এক পুজোকর্তার ফোন পেয়েছিলেন এ বার সাড়া জাগানো এক নবীন শিল্পী। ‘‘পরের বছর আমরা তোমাকেই চাই,’’ সটান বায়না জুড়লেন ওই পুজোকর্তা। শিল্পী কোনও সিদ্ধান্ত না নিলেও দশমীর সকালে বসেই ওই পুজো কমিটির কর্তারা ঠিক করে ফেলেছেন, যে ভাবেই হোক, ওই শিল্পীকে ঘরে তুলতেই হবে।
টালা এলাকার একটি পুজো কমিটির আগামী বছর শতবর্ষ হচ্ছে। এ বার দশমী শেষ না-হতেই বসে পড়েছে ‘থিম টিম’। আগামী বছর কত বাজেটে, কোন শিল্পীকে কী ভাবে ঘরে তুলতে হবে, টালা স্টেশনের পাশে দাঁড়িয়ে চলছে সে সব ছক কষা। ওই পুজো কমিটির তরুণ কর্তার কথায়, ‘‘১০০ বছরে সাড়া জাগানো কাজ করতেই হবে। এখনই মাঠে না নামলে পেরে উঠব না।’’
এক সময়ে দশমীতে প্রতিমা জলে প়ড়লেই ফের নিত্যদিনের জীবনে ফিরে যেতেন পুজোকর্তারা। বৈশাখ পেরোলে তবে ফের পুজো নিয়ে আলোচনা হতো। কিন্তু পুজো যে ভাবে থিম উৎসবের চেহারা নিয়েছে, তাতে এখন আর দেরি করলে চলে না। অনেকটা গড়ের মাঠের কায়দাতেই ‘পুজো খেলুড়েদের’ নিয়ে টানাটানি চলে ক্লাবে ক্লাবে। পুজো ময়দানের খবর, কোন শিল্পী কোথায় কাজ করছেন, কেমন কাজ করছেন, সে সব হিসেব রাখার জন্য প্রতি কমিটিরই নিজস্ব বাহিনী রয়েছে। অষ্টমীর রাতের মধ্যেই পুরো ‘ইনপুট’ হাতে চলে আসে। নবমী থেকেই নতুন খেলুড়েদের ঘরে তোলার কাজ শুরু।
আবার ‘ঘরের ছেলে’ যাতে হাতছাড়া না হয়, তার জন্যও লড়াই আছে। নবমীর দিন নেমন্তন্ন করে খাওয়ানোর ফাঁকে চলে কথা আদায়ের পর্ব। পুজো শেষ হওয়ার আগেই পরের মরসুমের জন্য শিল্পীর হাতে আগাম কিছু পারিশ্রমিক তুলে দিতেও কসুর করেন না পুজোকর্তারা।
এ বার বেলেঘাটার একটি পুজোকে নতুন ভাবে লড়াইয়ে নিয়ে এসেছিলেন নতুন এক শিল্পী। নবমী থেকেই তার পিছনে পড়ে গিয়েছেন পুজো কমিটির কর্তারা। একাদশীর দিন পুরী পাড়ি দেওয়া ওই শিল্পী অবশ্য কাউকেই কথা দেননি। দশমীর বিকেলে ওই শিল্পীর বক্তব্য, ‘‘সবাইকে বলেছি, ফিরে এসে যা বলার বলব।’’ এ বছর পুজোয় সে ভাবে পুরস্কারের ভাগ্য খোলেনি এক নামী পুজোর। তারকা শিল্পী সে ভাবে সফল হননি। ওই পুজোর কর্তাদের কেউ কেউ অন্য শিল্পীর খোঁজ করছেন। তবে ওই তারকা শিল্পীকে আরও এক বার সুযোগ দেওয়া হবে কি না,
তা নিয়ে দোটানায় ভুগছেন পুজো কমিটির কর্তারা।
পুজোর ময়দানে নামী শিল্পীদের বাজার অবশ্য চিরকালই চড়া। কেউ এ বার মন্ত্রীর পুজোয় কাজ করেছেন, কেউ বা মন্ত্রীর ঘরের ছেলে। ঘরের ছেলেকে এক মন্ত্রী রাখলেও অন্য জন একই নামী শিল্পীকে দিয়ে আর কাজ করাবেন কি না, তা কিন্তু নিশ্চিত নয়।
পুজোর ময়দানে এ বার নজরকাড়া কাজ করেছেন মহিলা শিল্পীরা। কারও রাজস্থানি লোকশিল্প, কারও প্রতিমা, কারও ভাঁড়ের মণ্ডপ তারিফ কুড়িয়েছে লোকজনের। বেহালা, গোলপার্কের ছোট্ট পুজোতেও নজরকাড়া কাজ করেছেন শিল্পীরা। সামনের বছর ওই সব মহিলা তারকার উপরেও নজর রাখছেন বিভিন্ন পুজো কমিটির কর্তারা। দশমীতে কলকাতার বড় পুজোর বেশির ভাগেরই বিসর্জন হয়নি।
সেই মণ্ডপে বসেই শুরু হয়েছে আলোচনা। শহরের অনেক পুজোরই বিশেষ ‘থিম টিম’ রয়েছে। চলতি সপ্তাহেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রওনা দিচ্ছে সেই টিম। আদতে পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে গেলেও রথ দেখার সঙ্গে কলা বেচা হবে থিমের খোঁজ। গত শতকের শেষ দিকে এ ভাবেই সিগারেটের প্যাকেটের পিছনে দক্ষিণ ভারতের ছবি এঁকে নিয়ে এসেছিলেন এক পুজো কমিটির কর্তা। পরের বার কলকাতা দেখেছিল মণ্ডপের নতুনত্ব কাকে বলে! সামনের বার উৎসব কাপে নতুন ধরনের এমন কী বিষয় মেলে, তারই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে এখন থেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy