বাগজোলা খাল ফাইল চিত্র
গন্তব্য একটাই। তা হল বিদ্যাধরী নদী বা কুলটি গাঙ। বহু নদী, খালের মতো বাগজোলা খালেরও শেষ গন্তব্য উত্তর ২৪ পরগনার এই নদী। জট পেকে আছে সেখানেই। যে গতিতে নদীর জল প্রবাহিত হওয়ার কথা, তা হচ্ছে না। তার ফলেই বর্ষায় ভরা বাগজোলার জল নামতে না পেরে ভাসছে উত্তর শহরতলি। সেই সমস্যা দূর করতেই কুলটি গাঙে নতুন পাম্প হাউস তৈরি করতে চলেছে সেচ দফতর।
উত্তর শহরতলির বরাহনগর বিধানসভা এলাকার ডানলপের কাছ থেকে শুরু হয়ে বহু এলাকা পেরিয়ে কুলটির ঘুসিঘাটার কাছে গিয়ে বিদ্যাধরীতে মিশেছে এই বাগজোলা খাল। পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হওয়া প্রায় ৩৭ কিলোমিটার এই জলপথের দু’টি অংশ রয়েছে। ডানলপ থেকে শুরু করে কেষ্টপুরের ভিআইপি রোড পর্যন্ত অংশটিকে বলা হয় ‘আপার বাগজোলা’ এবং তার পর থেকে কুলটি গাঙ পর্যন্ত অংশটি ‘লোয়ার বাগজোলা’। ওই দু’টি অংশে দাঁতিয়া, উদয়পুর, সোনাই, ক্যান্টনমেন্ট, বাগজোলা বাইপাস-সহ প্রায় ৭-৮টি খাল এসেছে মিশেছে।
ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী, ওই সমস্ত শাখা খাল দিয়েই উত্তর শহরতলির বিস্তীর্ণ অংশের জমা জল বাগজোলায় যাওয়ার কথা। বাস্তবে তা হচ্ছে না। কারণ, প্রতি বর্ষায় দেখা যায়, বাগজোলা নিজেই ভরে রয়েছে। ফলে অন্যের জল নেওয়ার ক্ষমতা তার থাকে না। রাজ্যের সেচ কর্তারা জানাচ্ছেন, আসল সমস্যাটা কুলটি গাঙে। কারণ বহু প্রাচীন সেই নদীর নাব্যতা অনেক কমে গিয়েছে। তার ফলে বর্ষার সময়ে ভরা জোয়ারে নদীর জল সহজে না নেমে উল্টে ফুলে ফেঁপে থাকছে। সেখানে বাগজোলার জল নিতে অনেক সময় লাগছে।
সেচ দফতর সূত্রের খবর, কুলটি গাঙ সুন্দরবন হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। নদীর পলি তোলা এখন আর সম্ভব নয়। কিন্তু বাগজোলার জল যাতে বেরিয়ে যেতে পারে, তার জন্য বহু বছর আগে ঘুসিঘাটার কাছে ১৬৫০ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প হাউস তৈরি করা হয়। ওই কুলটি পাম্প হাউসের মাধ্যমেই বাগজোলার জল ফেলা হত কুলটি গাঙে। কিন্তু নগরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে বাগজোলা খালে জলের পরিমাণ। ওই খালের নাব্যতা ঠিক রাখতে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত লোয়ার বাগজোলার পলি তোলা হয়। ২০১৯-’২০-তে সংস্কার হয় আপার বাগজোলার।
তাতে সমস্যা আংশিক মিটেছে। কী করলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব, তা খতিয়ে দেখতে গিয়ে সেচ দফতরের পর্যবেক্ষণ, বাগজোলায় জলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ওই একটি পাম্প হাউস এখন পর্যাপ্ত নয়। বর্ষায় টইটম্বুর হয়ে থাকা বাগজোলার ভার কমাতে গেলে প্রয়োজন আরও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প হাউসের। এর পরেই ঘুসিঘাটায় ৪০৫০ কিউসেক ক্ষমতার আর একটি পাম্প হাউস তৈরির পরিকল্পনা হয়। ‘সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন’-এর কাছে প্রস্তাব পাঠায় সেচ দফতর। সম্প্রতি তার অনুমোদনও মিলছে। সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলছেন, ‘‘যতটা সম্ভব বাগজোলার সংস্কার করা হয়েছে। কুলটির কাজটা হয়ে গেলে বরাহনগর, দমদম, কেষ্টপুর-সহ উত্তর শহরতলির বিস্তীর্ণ এলাকার জল জমার সমস্যা মিটবে। পাম্প হাউসের জন্য বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে।’’
দু’টি মিলিয়ে ৫৭০০ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প হাউস বাগজোলার ‘দুর্গতি’ দূর করতে কতটা সক্ষম হবে, সেটা অবশ্য সময় বলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy