—প্রতীকী ছবি।
যে এলাকায় এক সময় সংগঠনের গতি ছিল দুর্বার, এখন সেখানেই কাঠামো টিকিয়ে রাখা প্রশ্নের মুখে। কলকাতা শহরের বস্তি এলাকায় সাংগঠনিক চিত্র নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’-এর কথা লেখা হয়েছে সিপিএমের জেলা সম্মেলনের প্রতিবেদনে। পাশাপাশিই, তথ্য এবং পরিসংখ্যান দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, দক্ষিণ কলকাতার কিয়দংশে যা-ও বা দলের শক্তি রয়েছে, উত্তরে কার্যত লাটে উঠেছে পার্টি! সাংগঠনিক বিভিন্ন সূচকে দক্ষিণ এবং উত্তর কলকাতা কার্যত যে দুই মেরু, তা-ও উল্লেখ করা হয়েছে।
শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্মেলন। সিপিএম সূত্রের খবর, সম্মেলনের প্রতিবেদনে বিভিন্ন তথ্য এবং পরিসংখ্যান দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে মহানগরে মহাসঙ্কটে রয়েছে সিপিএম। দলের তহবিল সংগ্রহ, পত্রিকা বিক্রি, কর্মসূচিতে জমায়েত ইত্যাদি সাংগঠনিক সূচকে দক্ষিণ কলকাতার কয়েকটি জায়গায় আশার আলো থাকলেও বাকি জায়গায় ঘুটঘুটে অন্ধকার। দুই বেহালা, টালিগঞ্জ, যাদবপুর, কসবার খানিকটা এলাকায় সাংগঠনিক কাজের বিষয়ে ‘ইতিবাচক’ পরিসংখ্যান রয়েছে রিপোর্টে। বাকি জায়গায় দলের অস্তিত্ব বিপন্ন। ভোট শতাংশেও সেই বৈপরীত্য পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
রাজাবাজার, খিদিরপুর, বন্দরের মতো সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাতেও সংগঠনের অবস্থা তথৈবচ। দক্ষিণ কলকাতার উদ্বাস্তু কলোনি এলাকায় বিজেপি যে ভাবে মাথা তুলছে, তা নিয়েও উদ্বিগ্ন সিপিএম। কিন্তু প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনের (ক্যাল ডিসি) কাছে সবচেয়ে অস্বস্তির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বস্তি। বেলেঘাটা, মানিকতলা, চেতলা, বালিগঞ্জ, পার্কসার্কাস-সহ শহরের সব প্রান্তেই বস্তিতে সিপিএম দুর্বলতর জায়গায় পৌঁছেছে। যেখানে দৃঢ় গণভিত্তি তৈরি হয়ে গিয়েছে শাসক তৃণমূলের।
বস্তির ভোট যে তৃণমূলের অন্যতম শক্তি, তা মানেন শাসকদলের নেতারাও। প্রতিটি এলাকায় বস্তির ভোট নিয়ন্ত্রিত হয় স্থানীয় স্তরের তৃণমূল নেতাদের দ্বারা। বেলেঘাটায় সেই নেতা যদি হন পরেশ পাল, তা হলে আলিপুর বা চেতলায় অরূপ বিশ্বাস বা ফিরহাদ হাকিম। সিপিএমের এক নেতার কথায়, ‘‘যা ছিল আমাদের সাংগঠনিক শক্তির আঁতুড়ঘর, এখন সেখানেই ঝান্ডা বাঁধার লোক পাওয়া দুষ্কর হচ্ছে।’’ কিন্তু কেন? ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পরে নানা গণসংগঠনের মাধ্যমে পরীক্ষানিরীক্ষা করেছে সিপিএম। তার মধ্যে অন্যতম ছিল বস্তি ফেডারেশনকে সুসংহত করা। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। দেখা যাচ্ছে, গরিব মানুষের মধ্যে ধরে ধরে সংগঠন করার লোক নেই। অল্পবয়সিদের বেশির ভাগেরই ঝোঁক প্রচারের আলোয় থাকার। আবার তরুণদের মধ্যে যাঁরা প্রচারের আলোয় থেকেও কাজ করার চেষ্টা করছেন, তাঁরাও নানা ভাবে দলে ‘কোণঠাসা’ হচ্ছেন।
দলে মহিলাদের নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও যে অপারগতা রয়েছে, তা-ও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। পার্টির মধ্যে যে পুরুষদের আধিপত্য রয়েছে এবং তা কাটিয়ে মহিলাদের গুরুত্ব দেওয়ার প্রশ্নে সার্বিক ত্রুটি দেখা যাচ্ছে, সে কথাও বিশদে লেখা হয়েছে। ঘটনাচক্রে, মহিলা ভোটকে যখন তৃণমূল পুঁজিতে পরিণত করেছে, তখন সিপিএম হাপিত্যেশ করছে সংগঠনে মহিলা অন্তর্ভুক্তি নিয়েই। রাতারাতি তা কেটে যাবে, এমন আশাও করছে না দল। মহিলাদের মতোই ৩১ বছরের কম বয়স, এমন তরুণদের দলে যুক্ত করার ক্ষেত্রেও ত্রুটি রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে সম্মেলনের প্রতিবেদনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy