কাটল বাধা মেট্রোর। স্ট্র্যান্ড রোডে। নিজস্ব চিত্র
অবশেষে জট খুলল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের। ব্রেবোর্ন রোড ও বি বা দী বাগ এলাকার তিনটি প্রাচীন সৌধের তলা দিয়ে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার অনুমতি দিল ‘ন্যাশনাল মনুমেন্টস অথরিটি’ (এনএমএ)। সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের আদালতে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল কৌশিক চন্দ এনএমএ-র ওই অনুমতিপত্র তুলে দেন।
তবে এনএমএ-র অন্যতম শর্ত হল, মাটির উপরে প্রাচীন সৌধের ১০০ মিটারের মধ্যে কোনও নির্মাণকাজ করা যাবে না। সৌধের ১০০ মিটারের বাইরে মাটির উপরে মহাকরণ স্টেশন বা মেট্রোর অন্য কোনও নির্মাণ করা যেতে পারে। এনএমএ-র আরও শর্ত, মেট্রোর কাজে সুড়ঙ্গ খোঁড়া বা অন্য কোনও নির্মাণের সময়ে সৌধগুলির কোনও ক্ষতি হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে তিন সদস্যের যৌথ কমিটি। ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের (এএসআই) পূর্বাঞ্চলের অধিকর্তা, খড়্গপুর আইআইটি-র প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশনের এক জন অফিসার ওই কমিটিতে থাকবেন। কমিটি প্রতি মাসে রিপোর্ট দেবে এনএমএ কর্তৃপক্ষ এবং এএসআই-এর ডিরেক্টর জেনারেলকে।
এনএমএ প্রথমে ওই অনুমতি না দেওয়ায় প্রকল্পের কাজ আটকে যেতে বসেছিল। তার জেরে হাইকোর্টে মামলা করে প্রকল্পের ঠিকাদার সংস্থা। হাওড়ার দিক থেকে গঙ্গার তলা দিয়ে সুড়ঙ্গ খোঁড়়ার যন্ত্রের গতি কমিয়ে দিতে হয় সংস্থাকে। গত ১৫ জুন মামলার শুনানির সময়ে ঠিকাদার সংস্থার আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বিচারপতি দত্তের আদালতে দিল্লি মেট্রো প্রকল্পের একটি নথি পেশ করেন। তাতে দেখা যায়, দিল্লিতে প্রাচীন সৌধের তলায় ১০০ মিটারের মধ্যেই সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছে। তা জেনে বিচারপতি দত্ত মন্তব্য করেন, ‘‘প্রাচীন সৌধ সংরক্ষণ আইন মানার ক্ষেত্রে দিল্লি ছাড় পেতে পারে, কিন্তু কলকাতা পাবে না?’’
দিল্লির ক্ষেত্রে প্রাচীন সৌধের মাটির তলায় কত মিটারের মধ্যে সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছে, তা নিয়ে ওই দিন কেন্দ্রের ক্যাবিনেট সচিবকে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি। এ দিন সেই হলফনামা পেশের কথা ছিল। কিন্তু মামলার শুনানির শুরুতেই এনএমএ-র প্রয়োজনীয় অনুমতিপত্র আদালতে পেশ করেন কৌশিকবাবু।
তবে, প্রাচীন সৌধের তলায় ১০০ মিটারের মধ্যে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার অনুমতি মিললেও, এই প্রকল্পের রুটে ব্রেবোর্ন রোডে ন’টি বাড়ি রয়েছে। যেগুলির কয়েকটি বসতবাড়ি ও কয়েকটি বাণিজ্যিক। সুড়ঙ্গ কাটার যন্ত্র ওই সব বাড়ির তলা দিয়ে যাওয়ার সময়ে বাড়িগুলি সাময়িক ভাবে খালি করে দিতে হবে বলে ঠিকাদার সংস্থার পক্ষ থেকে এ দিন আদালতে জানানো হয়। তারা জানায়, এক-একটি বাড়ির তলায় সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ চলবে গড়ে তিন দিন করে। প্রথম বাড়ি ৪২ নম্বর স্ট্র্যান্ড রোড। ঠিকাদার সংস্থা জানায়, ওই বাড়ির তলা দিয়ে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার যন্ত্র পৌঁছবে জুন মাসের শেষে। বিচারপতি এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন, হাইকোর্টের নজরদারিতে এই প্রকল্পের কাজ চলছে। আদালত চায় না, ওই সব বাড়ির তলা দিয়ে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার সময়ে অপ্রীতিকর কোনও ঘটনা ঘটুক। ঠিকাদার সংস্থা জানায়, সুড়ঙ্গ খোঁড়ার সময়ে বাড়িগুলির যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, তা নিশ্চিত করা হবে। সংস্থার পক্ষ থেকে এ-ও জানানো হয়, বাড়িগুলির ৩০-৪০ মিটার তলা দিয়ে সুড়ঙ্গ যাবে। সেই সময়ে বাড়ির আবাসিকদের দিন তিনেকের জন্য অন্যত্র সরানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ৩ জুলাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy