Advertisement
E-Paper

পরিচারকের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে খুনের অভিযোগ

মৃতদেহের ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার অপেক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

সুবোধকুমার যাদব।

সুবোধকুমার যাদব।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:৩৮
Share
Save

বছর তেইশের এক যুবকের মৃত্যু ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্য। ওই যুবক দেওদার স্ট্রিটের একটি আবাসনের ফ্ল্যাটে পরিচারক হিসেবে কাজ করতেন। সেই ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের দাবি, আটতলার বারান্দা থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে সুবোধকুমার যাদব নামে ওই যুবকের। যদিও মৃতের বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, ওই যুবককে খুন করা হয়েছে। কারণ আটতলা থেকে পড়লে মৃতের শরীরের যে অবস্থা হওয়ার কথা, এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। এমনকি, ঘটনার পরে জানানো হয়নি মৃতের পরিবারকেও। পুলিশ অবশ্য এ ব্যাপারে এখনই কোনও মন্তব্য করতে চায়নি।

মৃতদেহের ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার অপেক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। তবে মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

বালিগঞ্জ থানা সূত্রের খবর, একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ওই যুবকের ব্যাপারে তাদের কাছে খবর আসে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ। পুলিশ সেখানে পৌঁছলে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, মৃত অবস্থাতেই সুবোধকুমারকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। এর পরে হাসপাতালে হাজির হয়ে সুবোধকুমারের দাদা আমোদকুমার দাবি করেন, তাঁর ভাইকে মেরে ফেলা হয়েছে। পুলিশের কাছে খুনের অভিযোগও দায়ের করেন তাঁরা।

যাঁদের ফ্ল্যাটে সুবোধকুমার কাজ করতেন, হাসপাতালে তাঁদের কাউকেই দেখা যায়নি বলে পুলিশের দাবি। তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা নিজেদের গাড়িতে সুবোধকুমারকে তুলে দিয়ে চালকের সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন।

আমোদকুমার বুধবার জানান, তাঁদের বাড়ি বিহারের বাঁকা জেলায়। তাঁরা দুই ভাই কলকাতায় কাজ করেন। দুই বোনের বিহারেই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাবা মারা গিয়েছেন কয়েক বছর আগে। ছ’সাত বছর আগে দেওদার স্ট্রিটের ওই ফ্ল্যাটে গৃহকর্মের কাজ নেন সুবোধকুমার। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়ি থেকে আমোদকুমারের কাছে ভাই ঠিক আছে কি না জানতে চেয়ে ফোন আসে। সুবোধকুমার যে ফ্ল্যাটে কাজ করতেন, এর পরে বারবার সেখানে ফোন করা হলেও কেউ ধরেননি বলে আমোদকুমারের অভিযোগ। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক পরে ওই আবাসনেরই আর একটি ফ্ল্যাটে কাজ করে, এমন এক জনকে ফোন করে জানতে পারি, ভাই অসুস্থ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখি, সব শেষ।’’

আমোদকুমারের দাবি, হাসপাতালে তিনি দেখেছেন, নীল জিনস আর লাল-কালো চেক শার্ট ছিল ভাইয়ের পরনে। শার্টের নীচে থাকা সাদা অন্তর্বাস বেরিয়ে এলেও পোশাকের কোথাও কোনও রক্তের দাগ ছিল না। শরীরের বাইরেও কোনও আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি বলে আমোদকুমারের দাবি। তাঁর কথায়, ‘‘স্রেফ নাকের কাছে সামান্য রক্ত আর থুতনির কাছে একটা ক্ষত ছিল। আটতলা থেকে পড়লে কারও এইটুকু আঘাত লাগে? মাথা, হাত, পা তো ফেটে যাওয়ার কথা।’’

মঙ্গলবার রাতেই দেওদার স্ট্রিটের আবাসনের ঘটনাস্থলে যায় বালিগঞ্জ থানার পুলিশ। বুধবার সকাল থেকে দফায় দফায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ফরেন্সিক এবং লালবাজারের হোমিসাইড শাখার তদন্তকারীরা। এ দিন দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, আবাসনের ভিতরে গাড়িবারান্দার পাশের কিছুটা অংশ ঘিরে রাখা হয়েছে। সম্ভবত সেখানেই মৃতের দেহটি পড়েছিল বলে পুলিশের অনুমান। কিন্তু এ ব্যাপারে রাত পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেনি তারা। যেমন নিশ্চিত হওয়া যায়নি আটতলার উচ্চতা থেকে পড়েই এই মৃত্যু কি না, সে ব্যাপারে। ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে লালবাজারের এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত কিছুই পরিষ্কার নয়। যদি দেহটি উপর থেকেই পড়ে থাকে, তা হলে স্রেফ থুতনিতে ক্ষত হল কী ভাবে? আর পড়ার সময়ে কোনও কিছুর সঙ্গে লেগে ওই ক্ষত হয়ে থাকলে সেটিই বা কী, তা জানতে হবে। আরও প্রশ্ন, পুলিশকেই বা প্রথমে জানানো হয়নি কেন?’’

ঘটনার স্পষ্ট উত্তর দিতে পারতেন যাঁরা, সেই অভিযুক্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রাত পর্যন্ত যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁদের আবাসনের ফ্ল্যাটে প্রবেশেরও অনুমতি মেলেনি। পুলিশ বলছে, আপাতত সবটাই নির্ভর করছে ময়না-তদন্তের রিপোর্টের উপরে।

Death House Maid Ballygunge Kolkata Police

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}