Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

চৌবাচ্চার জলে মশার সংসার, চাক্ষুষ পুরকর্তার

সপ্তাহ তিনেক ধরে ডেঙ্গি নিয়ে উত্তাল দক্ষিণ দমদমের লেক টাউন-বাঙুর এলাকা। ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে এক শিশু-সহ তিন জনের।

চৌবাচ্চার জলে মশার লার্ভা মারার তেল ছড়াচ্ছেন চেয়ারম্যান পারিষদ। বুধবার, লেক টাউনের এস কে দেব রোডে। নিজস্ব চিত্র

চৌবাচ্চার জলে মশার লার্ভা মারার তেল ছড়াচ্ছেন চেয়ারম্যান পারিষদ। বুধবার, লেক টাউনের এস কে দেব রোডে। নিজস্ব চিত্র

সুপ্রকাশ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:০১
Share: Save:

তিন ঘর-এক উঠোন। সেই উঠোনে একটি চৌবাচ্চা। ব্যবহারের জল অবশ্য তাতে নেই। তবে গোড়ালি ডোবা যে জলটুকু রয়েছে, তাতেই মশাদের ভরা সংসার।

বুধবার দুপুরে লেক টাউনের এস কে দেব রোডে এই দৃশ্য দেখলেন খোদ পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ। মশার লার্ভা মারার তেল ছড়ালেন নিজের হাতে। এ দিন দলবল নিয়ে অভিযানে বেরিয়ে মেয়র পারিষদের চোখে পড়ল নানা ঘটনা, যা নিয়ে এত দিন অভিযোগ তুলছিলেন সাধারণ নাগরিকেরা। অভিযানে আটক হল জঞ্জাল বোঝাই গাড়ি। পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আগামী তিন দিন চলবে এই অভিযান।

সপ্তাহ তিনেক ধরে ডেঙ্গি নিয়ে উত্তাল দক্ষিণ দমদমের লেক টাউন-বাঙুর এলাকা। ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে এক শিশু-সহ তিন জনের। ডেঙ্গি রুখতে পুরসভা যে নিয়মিত বাড়ি থেকে জঞ্জাল সংগ্রহ করে, মশা মারার ধোঁয়া দেওয়া হয়, তা জানিয়েছেন এলাকার প্রায় সব বাসিন্দাই। কিন্তু, বাড়ির ভিতরে কোথাও জল জমে আছে কি না তা দেখার কাজ যে হয় না, সে কথা মঙ্গলবারই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল।

পুরসভার জনস্বাস্থ্য বিভাগের চেয়ারম্যান পারিষদ দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এ দিনই লেক টাউন এলাকার কিছু বাসিন্দা পুরসভায় চিঠি দিয়ে পদক্ষেপ করার আবেদন জানান। তার পরেই অভিযানের নির্দেশ দেন পুর প্রধান।

এ দিন দুপুরে বিভাগের বেশ কয়েক জন কর্মী এবং একটি ডাম্পার নিয়ে অভিযানে নামেন দেবাশিসবাবু। এস কে দেব রোডের বিভিন্ন আবাসনের মধ্যে একটি ফাঁকা জায়গায় দেখা যায় প্রচুর জঞ্জাল পড়ে রয়েছে। সেখান থেকে পুরসভার জঞ্জাল তোলার কথা নয়। কারণ, ওই এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে জঞ্জাল সংগ্রহ করা হয়। স্থানীয়েরা জানান, অনেকেই ওই ফাঁকা জায়গায় জঞ্জাল ফেলে যান। পুরসভা তা নিয়মিত পরিষ্কার করে না।

এরই মধ্যে জঞ্জাল বোঝাই একটি ভ্যান সেখানে এসে পৌঁছয়। দেবাশিসবাবুর নির্দেশে সেই গাড়িটি আটক করা হয়। ইতিমধ্যে আরও একটি ভ্যানে করে জঞ্জাল আনা হচ্ছিল সেখানে ফেলার জন্য। পুরসভার গাড়ি-লোকজন দেখে ফেরার পথ ধরেন ভ্যানওয়ালা। তাঁকে দেখেই তাড়া করেন দেবাশিসবাবু। গাড়ি ফেলে ভ্যানওয়ালা প্রাণপণে ছুট লাগান। পরে সেই ভ্যানটিও আটক করা হয়।

তার পরে ওই রাস্তার উপরেই একটি টালির চালের বাড়িতে ঢুকে পড়েন পুরকর্মীরা। দেখা যায়, একটি উঠোন ঘিরে তিনটি ঘরে তিন পরিবারের বাস। সেই উঠোনের কোনার চৌবাচ্চাতেই জল জমে রয়েছে। দেবাশিসবাবুর প্রশ্নে বাড়ির এক মহিলা জানালেন, পুরকর্মীরা নিয়মিত বাঁশি বাজিয়ে বাড়ি থেকে জঞ্জাল নিয়ে যান। কিন্তু চৌবাচ্চায় চোখ ফেলতেই দেখা যায়, কিলবিল করছে মশার লার্ভা।

চেয়ারম্যান পারিষদ যখন বাড়ির অন্য মহিলাদের বিষয়টি নিয়ে বোঝাচ্ছেন, তখনই ওই মহিলার সঙ্গে তাঁর বাদানুবাদ শুরু হয়। মহিলা তেড়েফুঁড়ে বলতে শুরু কলেন, ‘‘এ রকম হবে না কেন? পুরসভার লোকেরা তো বাড়ির ভিতরে ঢোকেনই না। রাস্তায় জঞ্জাল পড়ে থাকলেও কেউ দেখেন না, তোলেন না।’’ কিন্তু বারবার বলা সত্ত্বেও তাঁরা বাড়িতে জল জমিয়ে রাখছেন কেন? এই প্রশ্নের অবশ্য কোনও উত্তর দিতে পারেননি তিনি।

দেবাশিসবাবু জানান, আগামী তিন দিন ৩১ থেকে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে এই অভিযান চলবে। প্রয়োজনে বন্ধ বাড়ির তালা ভেঙে ঢুকে পরীক্ষা করা হবে। তবে সে ক্ষেত্রে পুলিশও থাকবে। যাতে পরবর্তীকালে আইনি জটিলতা না হয়। দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘দক্ষিণ দমদমের ডেঙ্গি নিয়ে অপব্যাখ্যা হচ্ছে। পুর এলাকার বাসিন্দা সাত লক্ষ। তার মধ্যে ৪০০ জন আক্রান্ত হলে, সেটা শতাংশের বিচারে নেহাতই নগণ্য।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Health Dengue Mosquito Lake Town
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy